রচনা

রচনাঃ বাংলাদেশের নদ-নদী

বাংলা রচনাঃ বাংলাদেশের নদ-নদী (১০০% কমন) সকল ক্লাসের জন্য

আজকের পোস্টে আমরা কথা বলব বাংলাদেশের নদ-নদী বাংলা রচনাটি নিয়ে। এই রচনাটি তোমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই রচনাটি পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যায়। নিচে আমরা আলোচনার সব থেকে সহজ একটি উদাহরণ দিয়েছি। তুমি চাইলে এটি ফলো করতে পারো এবং তোমার যদি কোন অংশ কঠিন মনে হয় বা তুমি যদি কোন অংশ না বুঝতে পারো অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টে জানাবে। আমরা চেষ্টা করব তোমার সকল সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য।

ভূমিকা

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। জালের মতো ছোটো-বড়ো অসংখ্য নদ-নদী বাংলাদেশকে জড়িয়ে রেখেছে। এ দেশের প্রতি দুই মাইলের মধ্যে একটি ছোটো নদী, প্রতি পাচ মাইলের মধ্যে একটি মাঝারি নদী এবং প্রতি দশ মাইলের মধ্যে একটি বড়ো নদী পাওয়া যায়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বেশি নদ-নদী আছে বলে জানা নেই। নদীগুলো আমাদের দেশের মাটিকে যেমন উর্বর করেছে, তেমনি মানুষের জীবিকা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাখছে অবদান।

বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী। এছাড়া রয়েছে ছোটো-বড়ো বহু শাখা নদী ও উপনদী। এগুলোর মধ্যে ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, আত্রাই, গড়াই, তিস্তা, কুশিয়ারা, মধুমতী, করতোয়া, ধরলা, আড়িয়াল খাঁ ও মাতামুহুরী উল্লেখযোগ্য। শাখা-প্রশাখাসহ বাংলাদেশে নদ- নদীর সংখ্যা কত তা বলা মুশকিল। এর ওপর স্থানভেদে একই নদীর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম।

বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে নেমে এসে ভারতের ভেতর দিয়ে রাজশাহী জেলার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত অংশে এর নাম গঙ্গা। গড়াই ও আড়িয়াল খাঁ পদ্মার প্রধান শাখা নদী।

আরও পড়োঃ

হিমালয়ের মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করেছে। আরও দক্ষিণে এসে এটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। অন্যটি যমুনা নাম ধারণ করে গোয়ালন্দের কাছে এসে মিশেছে পদ্মার সাথে।

ভারতের মণিপুর-মিজোরাম এলাকার বরাক নদী সুরমা ও কুশিয়ারা নামের দুটি শাখায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। কুশিয়ারা নদীর বিভক্ত দুটি স্রোত আজমিরীগঞ্জে মিলিত হয়ে কালনী নাম ধারণ করেছে। আবার ভৈরববাজার এলাকায় এসে এই কালনী নদীরই নাম হয়েছে মেঘনা তিতাস ও ডাকাতিয়া এর দুটি শাখা নদী ।

নদীর ভূমিকা বা গুরুত্ব

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিক্ষেত্রে, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ দেশের জনজীবনে। এছাড়া আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথেও নদ-নদীর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে।

ক. জীবনযাত্রায় নদী

নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি ও বড়ো বড়ো নগর-বন্দর। নদীর অবদানেই এ দেশের মাটি এত উর্বর হয়েছে। নদীর পানি পান করা, গোসল করা, কাপড় কাচা ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।

খ. যোগাযোগের মাধ্যম

যাতায়াত ও মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য নৌপথের বিকল্প নেই। স্বল্প ব্যয়ে নদীপথে নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমারে করে অতি সহজেই যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করা যায়।

গ. কৃষিক্ষেত্রে ভূমিকা

বাংলাদেশের উর্বর ভূমি নদীরই দান। উর্বর ভূমির কারণে এ দেশের মাটিতে ফসলও ফলে ভালো। এছাড়া খরা মৌসুমে নদী থেকে জলসেচের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ সমভূমি বলা হয়।

ঘ. জীবিকা নির্বাহ

বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস নদী। নদী থেকে মাছ সংগ্ৰহ করে তা বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এই মাছ একদিকে যেমন দেশের মানুষের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে, অন্যদিকে এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। অনেক মানুষ আবার নৌ-খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে।

ঙ. সাহিত্য ও সংস্কৃতি

বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রয়েছে নদ-নদীর সীমাহীন প্রভাব। এ দেশের গল্প- উপন্যাস, কবিতা আর গানের এক বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে নদী। নদীবিধৌত অঞ্চলকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভাটিয়ালি ও সারি গান, যা আমাদের সংস্কৃতির এক অনন্য অনুষজ্ঞ।

চ. বিদ্যুৎ উৎপাদন

নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ক্ষতিকর প্রভাব

অতি বর্ষণে বন্যার ফলে নদী ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় নদীর পানি দু’পাশের বাড়িঘর ও ফসলের খেত ভাসিয়ে নেয়। ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম, জনপদ। দেখা দেয় বন্যা। অনেক সময় বন্যা তীব্র আকার ধারণ করলে শস্যের ক্ষতির পাশাপাশি গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার ফলে অনেক সময় প্রাণহানিও ঘটে । নদীভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে যায় বসতভিটা ও জায়গাজমি। অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

নদীদূষণ

বাংলাদেশের শহরের তীরবর্তী নদীগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। শহরের ময়লা-আবর্জনা, শিল্পবর্জ্য নদীর পানিকে নোংরা ও বিষাক্ত করে তুলছে। এছাড়া অপরিকল্পিত ও অবৈধ স্থাপনার ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে মাছসহ অন্যান্য জলজ সম্পদ।

উপসংহার

বাংলাদেশের নদ-নদী মমতাময়ী মায়ের মতোই। নদীর অকৃত্রিম ভালোবাসার দানে এ দেশ পরিপূর্ণ। তাই নদীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।

আশা করি রচনাটি তুমি পড়ে নিয়েছো এবং বুঝতে পেরেছ। এই রচনাটি যদি তুমি এইভাবে লিখতে পারো তাহলে আমি নিশ্চিত যে তুমি পরীক্ষায় খুব ভালো নাম্বার পাবে। তোমার যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে তুমি আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারো। ধন্যবাদ!

Related posts

রচনাঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু

Swopnil

রচনাঃ টেলিভিশন

Swopnil

রচনাঃ পহেলা বৈশাখ

Swopnil