রচনানির্মিতিবাংলা

রচনাঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা/ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ/ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও তার প্রতিকার বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা/ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ/ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা

কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সাথে জনসংখ্যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যা একদিকে যেমন সহায়তা করে অন্যদিকে তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে গুরুতর প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে। সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক না হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

বাংলাদেশ ও জনসংখ্যা

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বহুবিধ জটিল সমস্যায় নিপতিত। বাংলাদেশের জটিল সমস্যাগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা সমস্যা সবচেয়ে প্রকট । বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ। অথচ ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মোট ভূখণ্ডের ৩,০০০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি

বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্য, আর্থিক অস্বচ্ছলতা এবং অনগ্রসরতার প্রধান কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ১৯০১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় পৌনে তিন কোটি। ২০২০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০ কোটিতে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২.১৭। প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির হার ১৭০০ জন।

See also  আবেদন পত্রঃ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন পত্র লেখ

জনসংখ্যা সমস্যা

অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে— জাতির ভবিষ্যৎ ক্রমশই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৩ লক্ষ মানুষ দেশের জনসংখ্যার সাথে যুক্ত হচ্ছে। পরিণামে দেশে খাদ্যাভাব, পুষ্টিহীনতা, বেকারত্ব, মাথাপিছু আয়ের হ্রাস, জীবনযাত্রার নিম্নমুখী মান প্রভৃতি সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আবাসিক সমস্যা, স্বাস্থ্য সমস্যা, শিক্ষা সমস্যা প্রভৃতি ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বহুবিধ কারণ রয়েছে। জলবায়ুর প্রভাব, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, নারীশিক্ষার অনগ্রসরতা, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, মৃত্যুহার হ্রাস প্রভৃতি আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত ।

১. বাংলাদেশে জলবায়ুর প্রভাবে এ অঞ্চলের মেয়েরা অল্প বয়সে সন্তান ধারণক্ষম হয়। শীতপ্রধান দেশের মেয়েদের তুলনায় উষ্ণ অঞ্চলের মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা অধিক হওয়ায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক

২. বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। আমাদের সমাজের অশিক্ষিত অভিভাবক ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই অল্প বয়সে কন্যাদের পাত্রস্থ করে থাকে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ব্যাপী সন্তান উৎপাদনের সুযোগ লাভ করে। বাল্যবিবাহের মতো বহুবিবাহও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বহুবিবাহের ফলে একজন লোক একই সঙ্গে একাধিক স্ত্রী হতে সন্তান লাভ করে থাকে। ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।

৩. বাংলাদেশে শিক্ষিত লোকের হার খুবই নগণ্য। শিক্ষার অভাব হেতু আমাদের দেশের জনসাধারণ সুখী-সুন্দর জীবন গঠনের ধারণা থেকে বঞ্চিত। ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই তারা অল্প বয়সে সংসারী হয় এবং বহু সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে।

৪. বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র। দরিদ্রতাহেতু তারা শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ধর্মীয় এবং সামাজিক কুসংস্কার তাদের মধ্যে প্রকট। বিশেষজ্ঞদের মতে ‘দরিদ্রতা ও সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা একই সাথে অবস্থান করে।’ পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। কিন্তু দরিদ্রতা হেতু বাংলাদেশের সক্ষম দম্পতি পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ।

See also  পত্রঃ আসন্ন জে.এস.সি. পরীক্ষার প্রস্তুতি জানিয়ে বন্ধুকে একটি পত্র লেখ

৫. নারীশিক্ষার অনগ্রসরতা আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অনুকূল ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষিত নয় বলে জীবন সম্পর্কে তাদের মধ্যে উন্নত ধারণা সৃষ্টি হতে পারে না এবং শিক্ষা অর্জনে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় না বলে কন্যা দায়ের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অভিভাবকগণ তাদেরকে অল্প বয়সে বিবাহ দিয়ে থাকে। এভাবে নারী শিক্ষার অনগ্রসরতা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকে ।

৬. জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। এর পেছনে ক্রিয়াশীল অশিক্ষা, দারিদ্র্য, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার ৷

৭. একদিকে উচ্চ জন্মহার অন্যদিকে মৃত্যুহারের হ্রাস জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে না পারলে জাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে তা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্তই অপরিহার্য। এ সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নারীশিক্ষার প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ রোধ করতে হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। জন্মরোধের ওষধপত্র ও উপকরণ সহজ লভ্য করতে হবে। এছাড়া দেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনশক্তিকে কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে এবং বিদেশে জনশক্তির চাহিদা মেটানোর জন্যে দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে বিদেশ প্রেরণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। উল্লেখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটানো প্রয়োজন। মোটকথা জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের উপচে পড়া জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করতে হবে।

উপসংহার

জনসংখ্যা যেকোনো দেশের জনশক্তি এবং উন্নয়নের চাবিকাঠি। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যা উন্নয়নের অন্তরায়। জনসংখ্যা এবং সম্পদের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হতে বাধ্য। সুজলা-সুফলা শস্য- শ্যামলা বাংলাদেশ আজ অধিক জনসংখ্যার ভারে বিপর্যস্ত। এ সমস্যা সমাধান করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়নের সকল পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই এ ভয়াবহ জনবিস্ফোরণ রোধে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ পানি দূষণ

Swopnil

রচনাঃ বাংলাদেশের ফল

Swopnil

Leave a Comment