নির্মিতিবাংলারচনা

রচনাঃ বাংলাদেশের ফল

বাংলাদেশের ফল (১০০% কমন)

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বাংলাদেশের ফল বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

বাংলাদেশের ফল

ভূমিকা

চিরসবুজের বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের গাছ-পালা। এ বৃক্ষরাজির মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে আছে ফলের গাছ। ফলের গাছ খাদ্যের একটি অন্যতম উৎস। প্রাচীন যুগে ফলই ছিল আদিম মানুষের প্রধান খাদ্য। মুখরোচক সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ফল সকলের প্রিয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ফল উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশেও নানাজাতের ফল জন্মে। বিভিন্ন ঋতুতে আমরা বিভিন্ন ফল পেয়ে থাকি।

গ্রীষ্মকালের ফল

গ্রীষ্মকালের রৌদ্রঝরা দিনে বাংলাদেশে প্রচুর ফল উৎপন্ন হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, বেল প্রভৃতি গ্রীষ্মকালের ফল। নানাজাতের ফলের সমারোহের জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলা হয় ।

বর্ষাকালের ফল 

বর্ষাকালের মেঘ ভরাক্রান্ত বৃষ্টিঝরা দিনে নানাজাতের ফল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের আম, জাম, কাঁঠালের সঙ্গে বর্ষাকালে যোগ হয় আনারস, আমড়া, বাতাবি লেবু, পেয়ারা প্রভৃতি ফল।

শরৎকালের ফল

বর্ষার বর্ষণক্লান্ত দিনের পর আসে স্নিগ্ধমধুর উজ্জ্বল শরৎ। শাপলা, শিউলি ও কাশফুলে ছেয়ে যায় শরৎ প্রকৃতি। আকাশের নীলমণ্ডলে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। প্রকৃতির এ ফুরফুরে পরিবেশে ফলের তেমন সমাহার না থাকলেও শরৎকালের ‘তাল’ বাঙালি জীবনে প্রচণ্ডভাবে সমাদৃত ।

হেমন্তকালের ফল  

শরতের পর আসে মৃদু হিমকুয়াশার হেমন্ত। মাঠে মাঠে সোনালি ধানের সমারোহ। বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। এ সময় তাল, নারিকেল নবান্নের পিঠাকে আরো মুখরোচক করে তোলে ।

শীতকালের ফল

শীতকালে বাংলাদেশে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। কমলালেবু শীতের অন্যতম ফল। এছাড়া পেঁপে, কুল, পেয়ারা, কলা প্রভৃতিও শীতকালে পাওয়া যায়।

বসন্তকালের ফল 

বসন্ত প্রকৃতির মধুঋতু। ফুলের অজস্র বন্যায় গাছ-পালা-লতাগুল্ম হেঁয়ে যায়। কোকিলের গানে মুখরিত থাকে বন-বনানী। বসন্তে ফুলের সম্ভারের সঙ্গে নানাজাতের ফলও পাওয়া যায়। ফুটি, বাঙ্গি, তরমুজ, কলা, পেঁপে,, ডাব, বেল, প্রভৃতি।

বসন্তকালের অন্যতম ফল ।

নিচে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু ফলের পরিচয় প্রদত্ত হলো :

১. আম

আম বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ও সেরা ফল। আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্রই আম জন্মায়। তবে রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোরে উন্নতজাতের আম উৎপন্ন হয়। ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিমসাগর, লক্ষণভোগ, কিশানভোগ, মোহনভোগ, দিলসাদ, রানি পছন্দ, শাহপছন্দ, ক্ষীরসাপাতি প্রভৃতি জাতের আম বাংলাদেশে পাওয়া যায়। স্বাদ, আকৃতি ও রঙের দিক থেকে আম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আকৃতিগত দিক থেকে আম লম্বা, গোল, পাঁচের মতো আকৃতি বিশিষ্ট নানা ধরনের হয়ে থাকে। হলুদ, লাল, সিঁদুরে, সবুজ প্রভৃতি রঙের আম দেখতে পাওয়া যায়। স্বাদের দিক থেকে আম টক, মিষ্টি, মধুগন্ধী, আঁশযুক্ত ও আঁশহীন হয়ে থাকে। আম কাঁচা, পাকা উভয় অবস্থায়ই খাওয়া যায়। আমের চাটনি, আমসত্ত্ব খুবই মুখরোচক খাবার ।

২. কাঁঠাল

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের আকৃতি বিরাট। স্বাদে, গন্ধে কাঁঠাল সকলের পছন্দনীয় ফল । বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল জন্মে। তবে বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের ভাওয়াল, সাভার, নরসিংদীসহ টাঙ্গাইল, মধুপুর গড়, সিলেট, যশোর, রংপুর, দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। কাঁঠাল বাংলাদেশের সর্বশ্রেণির মানুষের একটি অন্যতম প্রিয় ফল।

৩. কলা

কলা বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত ফল। এদেশে সারা বছরই কলা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, আসাম, ইন্দোচীন কলার আদি জন্মস্থান। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কলা উৎপন্ন হয়। কলার নানা জাত রয়েছে। বাংলাদেশেই প্রায় ৪০-৫০ জাতের কলা জন্মে। তন্মধ্যে সবরি, কবরী, চাঁপা, দুধসাগর, অমৃতসাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সবরি এবং অমৃতসাগর উন্নতজাতের কলা। কলা কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থায়ই খাওয়া যায়। সবজি হিসেবে যেসব কলা রান্না করে খাওয়া হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আনাজি কলা, কাঁচকলা, কাঁঠালি ইত্যাদি। পুষ্টিমানের দিক থেকে কলা একটি উৎকৃষ্ট ফল।

৪. পেঁপে

পেঁপে পুষ্টিগুণের দিক থেকে একটি উপাদেয় ফল। বাংলাদেশে বারোমাসই পেঁপে জন্মে। পেঁপের যেমন রয়েছে পুষ্টিগুণ তেমনি রয়েছে ঔষধিগুণ। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে পেঁপে ওষুধের কাজ করে। নিয়মিত পেঁপে খেলে রাতকানা রোগ ও রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। পেঁপের ‘কসে’ ‘পেপেন’ নামক পদার্থ থাকে। পেপেন মাছ, মাংস, ডাল প্রভৃতি প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ

ক্ষমতা বাড়াবার জন্য নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন।

৫. আনারস 

আনারস বাংলাদেশের একটি পরিচিত ফল। পুষ্টিমানের দিক থেকে আনারসের গুরুত্ব অপরিসীম। মধুপুর, ঘোড়াশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকাসমূহে প্রচুর আনারস উৎপন্ন হয়। আনারসের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের সংযোগস্থল। আনারস-কুইন, কায়েন ও স্পেনিশ এ প্রধান তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। বাংলাদেশে উৎপাদিত আনারসের মধ্যে ক্যালেংগা, জলঢুপী, ঘোড়াশাল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আনারসের অম্ল-মধুর রস নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ । আনারসে ভিটামিন এ, বি, সি ও ক্যালসিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে।

৬. লিচু 

সৌন্দর্যগুণে এবং অম্ল-মিষ্টি স্বাদে লিচু সকলেরই প্রিয় ফল। ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ এলাকায় সুস্বাদু ও উন্নতজাতের লিচুর চাষ হয়। বম্বে, চায়না-৩, বেদানা, এলাচি জাতের লিচু বাংলাদেশে খুবই যশোর, সমাদৃত। লিচুর আদি জন্মস্থান দক্ষিণ চীন। লিচুতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও অন্যান্য খাদ্যমান রয়েছে। শিশুদের কাছে লিচু আকর্ষণীয় একটি ফল।

৭. পেয়ারা 

পেয়ারা বাংলাদেশের অতি পরিচিত পুষ্টিকর ফল। এ দেশের সর্বত্রই পেয়ারা জন্মে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পেয়ারা গাছ আছে। আমেরিকা মহাদেশের উষ্ণ অঞ্চলসমূহে প্রথম পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারার অসংখ্য স্থানীয় জাত রয়েছে। বাংলাদেশে স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর, মুকুন্দপুরী, কাজি পেয়ারা প্রভৃতি জাতের পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারা ভিটামিন সি-যুক্ত একটি ফল। ভিটামিন সি ছাড়াও পেয়ারাতে রয়েছে- লৌহ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি ।

৮. জাম 

জাম বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফল। জাম ফল দেখতে কালো কালো রঙের জন্য জামফল বাংলাদেশে ‘কালোজাম’ নামেই পরিচিত। জাম মুখরোচক এবং রসালো। জামের মধ্যে ভিটামিন এ, সি, লৌহ ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। জামের রস রক্তবর্ধক।

৯. কুল

কুল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। শিশুদের কাছে কুলের কদর খুব বেশি। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কমবেশি কুল উৎপন্ন হয়। কুলের নানাজাত রয়েছে। তবে অধিকাংশ জাতের কুলই টক এবং কষযুক্ত। উন্নতজাতের কুলের মধ্যে রাজশাহীর নারকেলি এবং কুমিল্লার কচুয়া বেশ সুস্বাদু । কুল আকৃতিতে ছোটো হলেও তা নানা খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ । কুলে ভিটামিন সি, শর্করা, আমিষ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। কুলের আদি উৎপত্তি স্থান চীনদেশ। কুল গাছ অযত্নে উৎপন্ন একটি গাছ। একটি কুল গাছে অসংখ্য কুল জন্মে।

১০. বেল 

বেল বাংলাদেশের একটি পরিচিত ফল। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই বেল উৎপন্ন হয়। বেলের পুষ্টিগুণ অনেক। পেটের নানা প্রকার পীড়ায় বেলের ভূমিকা অসাধারণ। বেলে শ্বেতসার, খনিজ লবণ, ভিটামিন বি এবং সি বিদ্যমান। আমাশয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বেল খুব উপকারী। বেলের সরবত যেমন উপকারী তেমনি তৃপ্তিকর

উল্লিখিত ফলগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে নানাজাতের ফল রয়েছে। খাদ্যমান, জনপ্রিয়তা ও স্বাদের দিক থেকে নারিকেল, আমড়া, কামরাঙা, তরমুজ, খেজুর, সফেদা, শরিফা, ডালিম, জামরুল, তাল, আমলকী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।

উপসংহার

বাংলাদেশে সারা বছরই নানাজাতের ফল পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফলের ভূমিকা অপরিসীম। ফল ক্ষুধা ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই প্রচুর ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি ফলের চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলকে যত্নবান হতে হবে। সকলেরই মনে রাখতে হবে ‘ফলই বল’।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

অনুচ্ছেদঃ রিকশাওয়ালা

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে

Swopnil