নির্মিতিরচনা

রচনাঃ ট্রাফিক জ্যাম ও ঢাকা শহর

ট্রাফিক জ্যাম ও ঢাকা শহর

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ট্রাফিক জ্যাম ও ঢাকা শহর বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

ট্রাফিক জ্যাম ও ঢাকা শহর

ভূমিকা 

বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি অন্যতম জনবহুল দেশ। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যে ঢাকা শহর বিপর্যস্ত। নানাবিধ সমস্যায় শহরটি জর্জরিত। এর মধ্যে যে সমস্যাটি আজ রাজধানী ঢাকাবাসীর প্রবল উদ্বেগ ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম বা যানজট। ট্রাফিক জ্যামের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার রাজধানীর বিপুল

সংখ্যক মানুষ ।

রাজধানী ঢাকা 

ঢাকা একটি ঐতিহ্যময় সুপ্রাচীন শহর। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ঢাকা শহর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বপ্রথম রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ, পরিকল্পনায় এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা প্রাপ্ত হয়। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করলে ঢাকাকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী করা হয়। বিভিন্ন দিক থেকে ঢাকা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। ঢাকা শহরে বর্তমানে দুই কোটি লোকের বসবাস। স্বল্পায়তনের এ শহরটি বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী বিপুল সংখ্যক লোকের ভিড়ে বিপন্ন।

ট্রাফিক জ্যামের কারণ 

আয়তনের তুলনায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঢাকা শহর নানা সমস্যায় জর্জরিত । স্বপ্নায়তনের এ শহরটি এখন বিপুল সংখ্যক লোকের ভার বহন করতে অক্ষম। বিশ্বের জনসংখ্যাবহুল নগরির দিক থেকে ঢাকা শহরের স্থান ৪৩তম। এ বিপুল জনসংখ্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়— ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী বলে ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস- আদালত সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। দেশের অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ ঢাকা শহরে বেশি। ফলে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সকল শ্রেণির মানুষই ঢাকা শহরকে তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করে। তাই প্রত্যেকেই নিজেদের ভাগোন্নয়নে পাড়ি জমায় ঢাকা শহরে। ফলে দিন দিন ঢাকা শহরে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। এছাড়া কেনা-কাটা, প্রশাসনিক, ব্যবসায়িক বা অন্যান্য কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক লোক ঢাকা শহরে ছুটে আসছে। জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢাকা শহরে যানবাহনের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তা-ঘাটের ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে সংগতি না রেখেই যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ট্রাফিক জ্যাম একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, বেবীটেক্সী, টেক্সী, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতিতে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাট পরিপূর্ণ। এসব যানবাহনের একটি শ্রেণি হচ্ছে যন্ত্রচালিত দ্রুতগতি সম্পন্ন, আর অন্য শ্রেণিটি হচ্ছে অযন্ত্রচালিত ধীর-গতিসম্পন্ন। শহরের একই রাস্তায় একসঙ্গে এ দু’ধরনের যানবাহন চলাচল করায় যানজট একটি অনিবার্য বিষণ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার সংখ্যা, রাস্তার অপ্রশস্ততা, অপরিকল্পিতভাবে শহরের আবাসিক এলাকার বিস্তৃতি, রাস্তার উপর দোকানপাট প্রভৃতি ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম বা যানজটের অন্যতম কারণ। 

ট্রাফিক জ্যাম ও তার ক্ষতিকর দিক 

যানবাহন মানুষের জীবনকে যে গতিশীল করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্তু ট্রাফিক জ্যাম মানুষের গতিশীল জীবনে স্থবিরতা ও অস্বস্থির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামের দুর্বিষহ অবস্থা বর্তমান সময়ের এক ভয়াবহ বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে। ট্রাফিক জ্যামের ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাজে মানুষ যথাসময়ে তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়ে চরম বিড়ম্বনা ও ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে একজন ছাত্র তার স্কুলের প্রথম ঘণ্টার ক্লাস মিস করছে। অফিস কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে তাঁর অফিসে হাজির হতে পারছেন না। উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, নার্স, ব্যবসায়ী, ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক প্রত্যেককেই যানজটের জটাজালে বন্দি হয়ে বর্ণনাতীত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দশ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে লাগছে এক ঘণ্টা। অনেক সময় তাও আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন প্রচুর শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে, যার প্রভাব এসে পড়ছে আমাদের অর্থনীতির ওপর ।

ট্রাফিক জ্যাম নিরসনের উপায় 

বর্তমানে ঢাকা শহর প্রধান দুটি অংশে বিভক্ত। এর এক অংশ পুরাতন ঢাকা, অন্য অংশ নতুন ঢাকা । এ দু’অংশের মধ্যে পুরাতন ঢাকায় ট্রাফিক জ্যামের সমস্যা প্রকট। কারণ এখানকার আবাসিক এলাকাগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে। রাস্তা-ঘাট অপরিসর এবং অপরিকল্পিত। ফলে পুরাতন ঢাকার জনজীবন ট্রাফিক জ্যামের কবলে আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি। নতুন ঢাকার অবস্থা পুরাতন ঢাকার চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও নতুন ঢাকা ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত নয়। নতুন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ট্রাফিক জ্যামে জর্জরিত । ঢাকা শহরকে ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত করা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে নিচের উপায়গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে ট্রাফিক জ্যামকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যেমন—

  • কিছু সংখ্যক রাস্তায় এক দিকে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • স্বল্প-পরিসর রাস্তাগুলোকে সম্ভব হলে প্রশস্ত করতে হবে।
  • স্বল্প-পরিসর রাস্তায় বড় ও ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
  • নির্ধারিত জায়গা ছাড়া গাড়ির পার্কিং নিষিদ্ধ করতে হবে।
  • দিবাভাগে শহরে মালবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে হবে ।
  • লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।
  • রিক্সা বেবীটেক্সীর সংখ্যা ধীরে ধীরে সীমিত পর্যায়ে আনতে হবে।
  • সকল প্রকার যানবাহন চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
  • রাস্তার ওপর জনসভা বা মিছিল-মিটিং করা বন্ধ করতে হবে।
  • ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ আরো কার্যকরী করতে হবে।
  • রাস্তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে অধিক পরিমাণ যানবাহনকে চলাচলের ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ করতে হবে। 
  •  যানবাহন নিয়ন্ত্রণকারী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ট্রাফিক পুলিশদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণদান ও দায়িত্ব পালনে সচেতন হতে হবে ।
  • রাজধানী শহর থেকে কিছু কিছু দফতর ঢাকার বাইরে কিংবা বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করতে হবে । 

উপসংহার 

সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম জনজীবনে এক মারাত্নক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছ। এ সমস্যা নিরসন করতে না পারলে রাজধানী ঢাকার জনজীবন উত্তরোত্তর আরো কঠিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু কৌশল আবিষ্কারের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা শহরের সৌন্দর্য সংরক্ষণসহ ঢাকাবাসীর জীবনকে নির্বিঘ্ন করা আশু প্রয়োজন । এ সমস্যা নিরসনে যত বিলম্ব ঘটবে ততই যানজট সমস্যা দিন দিন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

আবেদন পত্রঃ হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করায় ছুটি প্রার্থনা করে প্রধান শিক্ষকের নিকট দরখাস্ত লেখ

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন

Swopnil

রচনাঃ মিতব্যয়িতা

Swopnil