রচনাRegular Contentনির্মিতি

রচনাঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

ভূমিকা 

শিল্প-বিজ্ঞানজাত পদার্থ অথবা পুরাতত্ত্ব-বিষয়ক আশ্চর্যজনক বস্তু সম্ভার যেখানে রাখা হয় সেই সংগ্রহশালাই জাদুঘর নামে পরিচিত। জাদুঘরে এমন সব দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী সংরক্ষিত হয় যা একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে তোলে ধরে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই জাদুঘর রয়েছে। আমাদের দেশে জাতীয় জাদুঘর, বিজ্ঞান জাদুঘর, লোকশিল্প জাদুঘর, সামরিক জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ বাংলার রক্তভেজা মাটি আর শহিদের স্মৃতিকে সাক্ষী করে বাংলাদেশের জাদুঘরের তালিকায় সংযোজিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এ জাদুঘরটি আমাদের গর্বের অহংকার এবং একাত্তরের বীরত্বময় সংগ্রামের চির অম্লান স্মারক।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কী?

পশ্চিমা শাসকচক্রের চরম বৈষম্যনীতি ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সংগ্রামে সোচ্চার হয় বাংলার মানুষ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চলেছে পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানি বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সংগ্রাম। এ সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রকাশ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। পশ্চিমা শাসকচক্র ও পাক হানাদারের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শেষে একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। সেই রক্তঝরা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, দুর্লভ উপকরণ, স্মৃতিচিহ্ন ও ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ‘৯৬ সালের ২২ মে মার্চ যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

See also  ভাবসম্প্রসারণঃ নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশীয় ভাষা, পুরে কি আশা?

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের খসড়া রূপরেখা 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্ট’ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করে। এ রূপরেখায় স্থান পায় – মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রবেশের পর দর্শকদের প্রথমেই বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করে দেয়া। দ্বিতীয় স্তরে থাকবে বিশ শতকের শুরু থেকে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পরিচয়বাহী বিভিন্ন প্রামাণ্য স্মারক। এরপর থাকবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বহু মাত্রিক উপস্থাপনা। এর মধ্যে স্থান পাবে ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞ, প্রাথমিক প্রতিরোধ, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র, প্রবাসী মুজিবনগর সরকার, শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ, গেরিলা যুদ্ধ, প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক আন্দোলন, বিভিন্ন সেক্টর ও প্রধান যুদ্ধসমূহ, বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ এবং ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয়।

জাদুঘরের অবস্থান  

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবস্থান। জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতমুখী গলি দিয়ে দু’শ গজ দূরত্ব অতিক্রম করার পর প্রথমে চোখে পড়বে একটি তীর-চিহ্নিত পথ নির্দেশিকা। সাইনবোর্ড লেখা আছে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।’ ডান দিকে যাওয়ার নির্দেশ। ডানের গলিতে ঢুকে বাম পাশের তৃতীয় বাড়িটিই ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’।

জাদুঘরে দর্শনীয় বস্তু 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সমস্ত সংগ্রহই দর্শনীয় যা দর্শকের আবেগকে গভীরভাবে স্পর্শ করে তাদেরকে নিয়ে যায় ইতিহাসের দূর-অতীতে। দ্বিতল জাদুঘর ভবনটি ছয়টি অংশে বিভক্ত। এর প্রথম তলায় তিনটি গ্যালারী এবং দোতলায় বাকি তিনটি গ্যালারী অবস্থিত।

প্রথম গ্যালারী 

গ্যালারীতে রয়েছে ১৭৫৭ সালের পলাশি যুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাঙালি জনগণের সংগ্রামের নানা স্মৃতিচিহ্ন ও ইংরেজ শাসনামলের সচিত্র ইতিহাস ।

দ্বিতীয় গ্যালারী 

এ গ্যালারীতে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন, ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯:৯ সালের গণ-আন্দোলন ও ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন।

See also  ভাবসম্প্রসারণঃ রথ যাত্রা লোকারণ্য মহা ধূমধাম, ভক্তরা লুটায়ে পড়ে করেছে প্ৰণাম ৷ রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব-হাসেন অন্তর্যামী

তৃতীয় গ্যালারী 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে ‘৭১ সালের উত্তাল আন্দোলন, ২৫ মার্চের গণহত্যা, শরণার্থী শিবিরসহ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কতিপয় প্রামাণ্য স্মারক। এ গ্যালারীর পূর্বপ্রান্তে কাঁচের বাক্সে রক্ষিত আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কোট, পাজামা, রুমাল, তামাকের বাক্স এবং পাইপ।

চতুর্থ গ্যালারী

এ গ্যালারীতে পাক-হানাদারবাহিনীর বর্বরতা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, প্রাথমিক প্রতিরোধ, প্রবাসী সরকার ও সেক্টর কমান্ডারদের ছবি ও তাদের পরিচিতি। এছাড়াও রয়েছে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত ইউনিফর্ম, ক্যাপ, বই, চশমা, কলম ও অন্যান্য সামগ্রী।

পঞ্চম গ্যালারী  

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পঞ্চম গ্যালারীতে রয়েছে গেরিলা যুদ্ধ, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পাকবাহিনীর দালালদের ঘৃণিত ভূমিকা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও প্রামাণ্য স্মারক।

ষষ্ঠ গ্যালারী  

ষষ্ঠ গ্যালারীতে রয়েছে গণহত্যা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বুদ্ধিজীবী, বীরশ্রেষ্ঠ এবং চূড়ান্ত লড়াই ও বিজয়ের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। আরো রয়েছে হানাদার পাক-সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজী কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যবহৃত মানচিত্র।

প্রামাণ্যকরণ কমিটি 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ব্যবহৃত নিদর্শনাদির ঐতিহাসিকতা যাচাইয়ের জন্যে রয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি গ্রামাণ্যকরণ কমিটি। এ কমিটির সভাপতি হলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য সদস্যরা হলেন—অবসর প্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল এ. কে. খন্দকার; অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ডক্টর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক জনাব তোয়াব খান। এ কমিটির পর্যালোচনা অনুসারেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিদর্শনাদি উপস্থাপনার জন্য মনোনীতি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ডকুমেন্টেশন ইনচার্জে আছেন জনাব মোস্তফা সোহেল এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেশব্যাপী কাজ করছে নতুন প্রজন্মের তরুণ সংগঠন উত্তরাধিকার।

উপসংহার

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অশ্রুবিজরিত স্মৃতি এবং বীরত্বের তেজস্বী অহংকার। এ অহংকার ও স্মৃতিকে জাগরুক রাখার জন্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। নতুন প্রজন্মসহ সকলের কাছে এ জাদুঘর উন্মোচন করবে আমাদের গর্বিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী ধারাবাহিকতাকে।

See also  রচনাঃ বাংলাদেশের ফল

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ বিদ্যা অমূল্য ধন

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

Swopnil

রচনাঃ বাংলাদেশের ফল

Swopnil

Leave a Comment