, ,

রচনাঃ ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা / চিকুনগুনিয়া ও এডিস মশা

Posted by

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা

ভূমিকা

বাংলাদেশের জনবীবন কোনো কালেই রোগব্যাধি, মহামারী থেকে মুক্ত ছিল না। সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্নক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে এদেশের জনজীবনে দারুণ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকের মৃত্যু ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মারাত্নক ভয়াবহতার সৃষ্টি করেছে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এ বি এম আব্দুল্লাহ ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রমাণ তুলে ধরেন। তৎপূর্বে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের উপস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। ডেঙ্গু জ্বর ২০০০ সালে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এখন এটিকে ‘ঢাকা ফিভার’ বলে অভিহিত করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বর কী 

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত এক ধরনের তীব্র জ্বর। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক মশার নাম এডিস ইজিপটাই ও এডিস এলবোপিকটাস নামক স্ত্রী জাতীয় মশা। এ ধরনের প্রজাতির মাধ্যমেই ডেঙ্গু জ্বর বিস্তার লাভ করে। মানুষও এ রোগের বাহক। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে আক্রান্ত হওয়ার ছয় দিনের মধ্যে কোনো সাধারণ এডিস মশা যা ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে না এমন কোনো এডিস মশা কামড়ালে সেটিও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। সুতরাং ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ ও এডিস মশা উভয়ই ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে। 

যথা : ১. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ২. হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।

ডেঙ্গু জ্বরের আবার চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। যথা : DEN-1, DEN 2, DEN 3 এবং DEN 4। এ চারটি সেরোটাইপের মধ্যে DEN-2 এবং DEN3 খুবই মারাত্নক।

এডিস মশার আকৃতি ও ধরন : এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের। সারা শরীরে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগ। পাগুলো লম্বাটে। এডিস ইজিপটাই এবং এডিস এলবোপিকটাস নামক এ দু’ প্রজাতির স্ত্রী মশা মূলত ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহন করে থাকে । এডিস ইজিপটাই শহরাঞ্চলে এবং এডিস এলবোপিকটাস গ্রামাঞ্চলে বেশি থাকে। এডিস এলবোপিকটাসকে টাইগার মশা বলা হয় । তবে এ দু’ধরনের এডিস মশার বংশবিস্তারের ধরন একই।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :

১. ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ -১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

২. মাথা ব্যথা, মাংসপেশী, চোখের পেছনে এবং কোমর অস্থিসন্ধি ও হাড়ে বিশেষ করে মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা হয়।

৩. বমি বমি ভাব হয় এবং পেটব্যথা হয় ৷

৪. শরীরের ত্বকে এলার্জি র‍্যাশের মতো র‍্যাশ দেখা দেয় ।

৫. রক্তবমি ও কালচে রঙের পায়খানা হয় ৷

৬. অনেক সময় দাঁতের মাড়ি, নামমুখ ও পায়ুপথে রক্ত পড়ে।

৭. রক্তক্ষরণ মস্তিষ্ক ও হার্টের মধ্যেও হতে পারে ।

চিকিৎসা 

ডেঙ্গু জ্বরের এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। উপসর্গ অনুযায়ী ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা দেওয়া হয় । ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল এবং বমির জন্য স্টেমিটিল জাতীয় ওষধ দিয়ে থাকেন। এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হয়। বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বর বেশি হলে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে ।

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে বলে সন্দেহ হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। প্রতিদিন রক্তের প্লেটলেট কাউন্ড এবং. পিসিভি পরীক্ষা করাতে হয়। প্লেটলেট কমে গেলে চিকিৎসক রোগীকে শিরাপথে প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন করে থাকেন। রক্তক্ষরণ বেশি হলে সেক্ষেত্রে রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়া যেতে পারে । ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠতে পারে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর এমনিতেই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় ।

সতর্কতা :

১. ডেঙ্গু জ্বরে ব্যথার জন্য এসপিরিন জাতীয় ওষধ সেবন করা যাবে না, কারণ এতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

২. প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত রোগীর রক্তের প্লেটলেট এবং পিসিভি টেস্ট করা উচিত।

৩. ডেঙ্গু জ্বর হইলে এ্যান্টিবডি টেস্ট আইজিজি ও আইজিজিএম টেস্ট করার প্রয়োজন নেই ।

প্রতিরোধ :

১. প্রতিরোধে এডিস মশা নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. ফুলের টব, ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, ডাবের, খোসা, গাছের কোটর, বাঁশের গিঁটের গর্ত, গাড়ির টায়ার, এয়ার কন্ডিশন ও ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। সুতরাং এডিস মশার বংশবৃদ্ধির এসব উৎসসমূহ ধ্বংস করতে হবে। 

৩. বাড়ির আশ-পাস, নর্দমা ও আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪. দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে ।

৫. এডিস মশা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এয়ারপোর্ট, সমুদ্রবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় বিদেশ থেকে আনা ড্রাম, কন্টেইনার, আমদানিকৃত টায়ার ও অন্যান্য মালামালে এডিস মশার উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের ইতিবৃত্ত

১৭৮০ সালে ফিলাডেলফিয়ায়’ডেঙ্গু জ্বর মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯২২ সালে টেক্সাসে এবং ১৯২৭ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯২৮ সালে গ্রিসে ডেঙ্গু জ্বরে প্রচুর লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৭০ সালে বিশ্বের ৯০টি দেশে ডেঙ্গু জ্বর দেখা দেয়। ১৯৯০-৯৮ সালের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গড়ে ৫ লাখ অতিক্রম করে। ১৯৮০ সালে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৯৬ সালে ভারতে ডেঙ্গু জ্বরে ৪২০ জন লোক মারা যায়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা শহরে এক ধরনের তীব্র জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্তমানে ধারণা করা হয় যে, ১৯৬৪ সালের ঐ জ্বর ডেঙ্গু জ্বর ছাড়া অন্য কিছু নয়। ১৯৯৯ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরে আবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে ।

উপসংহার

ডেঙ্গু জ্বর বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের একটি মারাত্নক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ জ্বরে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে এবং ঘটে চলছে। বর্ষাকাল এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশ ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযোগী পরিবেশের সৃষ্টি করে। জনসচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া এডিস মশা নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই দেশের আপামর জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সচেতন ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং এডিস মশার উৎসসমূহ ধ্বংশ করে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথোচিত ভূমিকা রাখতে হবে ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

One response

  1. Tithi Roy Sarkar Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *