রচনানির্মিতি

রচনাঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান/মানব কল্যাণে বিজ্ঞান/বিজ্ঞান ও প্রতিদিনের জীবন

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান/মানব কল্যাণে বিজ্ঞান/বিজ্ঞান ও প্রতিদিনের জীবন বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / মানব কল্যাণে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও প্রতিদিনের জীবন

ভূমিকা 

মানুষের জীবন যাত্রার সর্বস্তরে আজ বিজ্ঞানের সফল পদচারণা। বিজ্ঞানের অভ্যুদয় ও অগ্রগতির আলোকে পৃথিবী আজ উদ্ভাসিত। নব নব আবিষ্কারের কল্যাণমুখী প্রয়োগে আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবী থেকে আজ বিদূরিত প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার। অরণ্যচারী যাযাবর মানুষের উত্তর প্রজন্ম বিজ্ঞান-বুদ্ধির কল্যাণে আজ নতুন সভ্যতার কর্ণধার। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার ছাড়া বর্তমান যুগে জীবনের চলমানতা কল্পনা করা অসম্ভব। দৈনন্দিন জীবন যাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রই আজ বিজ্ঞানের অপরিমেয় দানে সমৃদ্ধ। 

আদিম যুগ 

বিজ্ঞানের বহু বিচিত্র আবিষ্কারের অবদানে পৃথিবী আজ নতুন সাজে সজ্জিত। আদিম যুগে মানুষ ছিল অরণ্যচারী । বন- জঙ্গল গুহা ছিল তাদের আশ্রয়স্থল। তাদের খাদ্য ছিল বনের ফল-মূল আর কাচা মাংস। পরিধানে ছিল পাতা-গুল্ম, ছাল-বাকল আর পশু চম্র। বস্ত্রবয়ন, রান্না-বান্না কিছুই তারা জানত না। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে ছিল নিরন্তর সংগ্রাম। যেদিন তারা আগুন জ্বালাতে শিখল সেদিন তাদের জীবনে এলো অন্য এক আলোকিত ভোর। প্রয়োজন, জিজ্ঞাসা আর বুদ্ধি বলে তারা ক্রমশই জয় করল সমস্ত প্রতিকূলতাকে। দীর্ঘ ধারাবাহিকতার সেতু বেয়ে নতুন সম্ভাবনায় একদিন হেসে ওঠল পৃথিবী। আধুনিক সভ্যতার এ যুগে প্রতিটি কাজেই আজ বিজ্ঞান । সভ্যতার এ অগ্রগতি আমাদেরকে আজ অভিভূত করে পরম বিস্ময়ে ।

See also  প্রতিবেদনঃ পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরোপণ' -এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর

জীবন ও বিজ্ঞান 

বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের জীবন আজ অচল। মানুষের অনুসন্ধিৎসা, জিজ্ঞাসা, প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ এবং অদম্য আগ্রহ থেকে ঘটেছে বিজ্ঞানের বহু বিচিত্র বিকাশ । ‘বিজ্ঞান’ – জ্ঞান লাভের একটি বিশেষ প্রণালি। এ জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ আজ প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে সমস্ত পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয় বন্দি। মানুষের জীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজনে বিজ্ঞান আজ অসম্ভব রকম তৎপর। জীবনের সুখ আজ স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে বিজ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। যা কিছু মানুষের আয়ত্তের বাইরে সেই অপূর্ণতাটুকু পূরণ করতে মানুষ আজ নতুন আবিষ্কারে নিমগ্ন হচ্ছে । জীবন এবং বিজ্ঞান আজ একসূত্রে গাঁথা। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান 

আমাদের দৈনন্দিন জীবন বিজ্ঞানের নানা অবদানে সুখপ্রদ এবং সমৃদ্ধ। জাগরণ থেকে শুরু করে রাতের নিদ্রা গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছি। ঘড়ির এ্যালার্মে নিদ্রাভঙ্গ। নিদ্রা থেকে জেগেই প্রয়োজন টুথপেস্ট-ব্রাশ। দাড়ি-গোঁফ কামাতে প্রয়োজন ব্লেড, রেজর। সকালের নাস্তা তৈরির জন্যে গ্যাসের চুলা জ্বালাতে প্রয়োজন দিয়াশলাই । নাস্তা শেষে চা পান করতে করতেই এসে যাচ্ছে খবরের কাগজ। তার পর গাড়ি চেপে অফিস। ঘর্মাক্ত কলেবরে অফিসে পৌঁছে কলিংবেল টিপতেই বেয়ারা উপস্থিতি। ইঙ্গিত করতেই মাথার ওপর ঘুরতে থাকে বৈদ্যুতিক পাখা। ক্লান্তি দূর করতে একটু আলতুভাবে এলিয়ে বসতেই বেজে ওঠে টেলিফোন। দু’জনের দূরবর্তী দু’প্রান্ত থেকে আলাপ । সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় অবদান। আরামপ্রদ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় যা কিছু বিজ্ঞান তার সবই মানুষকে দিয়েছে ! বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল। যাতায়াতে রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, উড়োজাহাজ, লঞ্চ, স্টীমার, স্পীডবোট কতো কিছুই না ব্যবহৃত হচ্ছে। বিমানে আকাশ পাড়ি, জাহাজে সমুদ্র পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে গমন, রকেটে চাঁদে গমন সমস্ত কিছুর মধ্যেই জড়িয়ে আছে অপরিমিতি বিস্ময়। মঙ্গল গ্রহেও ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। বিজ্ঞান কতো না অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। কম্পিউটারের আবিষ্কার মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে গতিশীল করে তুলেছে। হিসাব-নিকাশ, পরিসংখ্যান, তথ্য, মুদ্রণ, চিকিৎসাসহ বহুবিধ কাজ নির্ভুলভাবে করে দিচ্ছে কম্পিউটার। ফ্যাক্সের সাহায্যে মুহূর্তে চিঠি-পত্র পৌঁছে যাচ্ছে দূরবর্তী গন্তব্যে ফটোকপি হয়ে। জ্ঞানচর্চার জন্যে বিজ্ঞান দিয়েছে বই-পুস্তক, খাতা-পত্র, দোয়াত-কালি-কলম-পেন্সিল । ক্ষুদ্র আলপিন থেকে শুরু করে ক্যালকুলেটর, স্টেপলার, সুঁই, সুতো, ফটোস্ট্যাট সবকিছুই বিজ্ঞানের সৃষ্টি। 

See also  আবেদন পত্রঃ বিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞান ক্লাব গঠনের অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন পত্র লেখ

দৈনন্দিন বিনোদনে বিজ্ঞান 

কর্মব্যস্ত জীবনে হাজার ঝামেলার এক চিলতো ফাঁকে মানুষ চায় একটু মানসিক তৃপ্তি, একটু বিনোদন। তার জন্যে রয়েছে রেডিও, টেলিভিশন, ভি.সি. আর। ঘরে মন তৃপ্ত না হলে রয়েছে প্রেক্ষাগৃহ । নামমাত্র মূল্যে উপভোগের ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন রকম ছায়াছবি। প্রেক্ষাগৃহ প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের পদচারণায় পরিপূর্ণ।

চিকিৎসায় বিজ্ঞান 

রোগ-শোক নিয়ে মানুষের জীবন। এমন এক সময় ছিল যখন বিনা চিকিৎসায় এবং অপচিকিৎসায় মানুষকে প্রাণ দিতে হতো । কিন্তু আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিকেও মানুষ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বিজ্ঞান তৈরি করেছে চিকিৎসার আধুনিক কলাকৌশল। এক্সরে, এনড্রোসকপি, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি এবং পেনিসিলিন, স্টেপটুমাইসিন, রেডিয়াম ইত্যাদির আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নবতর সাফল্য । বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মলমূত্র, রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষা করে সঠিক ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে চিকিৎসাক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। রোগব্যাধির সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে অগণিত মানুষ রোগমুক্ত হয়ে দৈনন্দিন জীবনে অপরিসীম আনন্দ ভোগ করছে ।

গ্রাম-গঞ্জের জীবন 

প্রতিটি সমস্যা ও প্রয়োজনে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদের সকল কাজ সহজসাধ্য করেছে । শহর পেরিয়ে গ্রামগঞ্জের লোকও তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের সুফল ভোগ করছে। তাদের ঘরেও বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে, রেডিও, টেলিভিশন চলছে। ঘরে বসেই আজ তারা বিশ্বকে জানতে পারছে। গ্রাম জীবনেও বিজ্ঞানের আবিষ্কার বহুমুখী অবদান রাখছে।

বিপরীত চিত্র 

বিজ্ঞানের অবদানে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়ে উঠলেও বিজ্ঞান মানুষকে অনেকটা আরামপ্রিয় ও বিলাসী করে তুলেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রাত্যহিক চাহিদা পূরণ সহজ হওয়ায় মানুষ ক্রমেই হয়ে পড়ছে শ্রমবিমুখ। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ অনুন্নত দেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারে তৎপর হয়ে ওঠছে। বিজ্ঞানীদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও অপরিসীম কৌতূহল এমন কিছু আবিষ্কার করেছে যা মানব জাতির অস্তিত্বের জন্যে চরম হুমকিস্বরূপ। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জীবনে যেমন সুখ-সমৃদ্ধি এনেছে, তেমনি জীবন বিধ্বংসী মারণাস্ত্রেরও আবিষ্কার করেছে। তবে এর জন্যে বিজ্ঞান দায়ী নয়, দায়ী মানুষের অশুভবুদ্ধি ।

See also  পত্রঃ পরীক্ষা কেমন হয়েছে তা জানিয়ে পিতার নিকট পত্র লেখ

উপসংহার 

বিজ্ঞানের বহু বিচিত্র অবদান মানুষের দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত সম্প্রসারিত। বিজ্ঞান ব্যতীত মানুষের জীবন আজ অচল এবং নিরানন্দ । নিত্য নতুন কৌতূহলে বিজ্ঞান মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অজানা রহস্যের জগতে। আমরা যেন কখনোই মুখ থুবড়ে পড়ে না যাই অদৃশ্য চোরাবালিতে। বিজ্ঞানের নব নব অবদানে আমাদের দৈনন্দিন জীবন হোক ছন্দময় ও আনন্দপূর্ণ। সুস্থ বিজ্ঞান চর্চার অঙ্গীকার ও অধ্যবসায়ে উজ্জ্বল হোক সকলের অনাগত দৈনন্দিন জীবন ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ কত বড় আমি’ কহে নকল হীরাটি, তাই তো সন্দেহ করি, ‘ নহ ঠিক খাঁটি ‘

Swopnil

রচনাঃ বাংলাদেশের ফুল

Swopnil

Leave a Comment