আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব ” বিদ্যুৎ/ বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন/ বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার/ সভ্যতার বিকাশে বিদ্যুতের অবদান বাংলা রচনা “। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
Contents
বিদ্যুৎ/ বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন/ বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার/ সভ্যতার বিকাশে বিদ্যুতের অবদান বাংলা রচনা
সূচনা
বিদ্যুৎ শক্তির আবিষ্কার মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর উদ্ভাবন। বিদ্যুৎশক্তির আবিষ্কারের ফলে মানুষের জন্যে অনেক কঠিন ও সাধ্যাতীত কাজ সহজ ও আরাম লব্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ অন্ধকারে আলো জেলে দিয়েছে। দূরকে নিকট করেছে। অজানাকে জানার সহজ ও নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। বৈদ্যুতিক শক্তির আবিষ্কারে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে মানব সভ্যতা প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ হচ্ছে।
বিদ্যুৎ কী
বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি। শক্তির সুনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ ব্যতীত কোনো কাজই সমাধা করা যায় না। বিদ্যুৎশক্তির সাহায্যে দ্রুততার সঙ্গে অনেক কঠিন কর্মও সমাধা করা সম্ভব। বিদ্যুৎশক্তি বর্তমান বিশ্বকে অনেক দ্রুতগামী করে তুলেছে। এ শক্তি মানুষের মন্থর জীবনে এনে দিয়েছে এক চঞ্চল গতিপ্রবাহ। তড়িৎ কর্ম সম্পাদনের এক অতুলনীয় যাদুশক্তি হিসেবে বিদ্যুতের অবদান অবিস্মরণীয় ।
বিদ্যুৎশক্তি আবিষ্কারের ইতিহাস
বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় বিদ্যুতের আবিষ্কার মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। আদিম অরণ্যচারী গুহাবাসী মানুষের জীবনে আগুনের আবিষ্কার ছিল যেমন বিস্ময়কর, সপ্তদশ শতাব্দীর পৃথিবীতে বিদ্যুতের আবিষ্কার তেমনি এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পূর্বে প্রথমে চুম্বকশক্তি আবিষ্কৃত হয়। চুম্বকশক্তি প্রথমে আবিষ্কৃত হয় ফ্রান্সে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের জনৈক ক্রু একখণ্ড প্রাকৃতিক চুম্বক আবিষ্কার করেন। তিনি এ চুম্বক খণ্ডটিকে একটি সূঁচের ওপর স্থাপন করেন এবং দেখতে পান যে তা সর্বদাই উত্তর-দক্ষিণে অবস্থান করছে। চুম্বকশক্তির এ গুপ্ত রহস্যের পথ ধরেই একদিনআবিষ্কৃত হয় বিদ্যুৎশক্তি। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিদ্যুৎশক্তির অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। উইলিয়াম গিরবার্ট প্রথমে বিদ্যুৎশক্তির নামকরণ করেন । অতঃপর ধীরে ধীরে শুরু হয় বিদ্যুতের অগ্রযাত্রা। ১৭২৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের স্টেপেন গ্রে বিদ্যুতের জগতে অসাধারণ সাফল্য নিয়ে আসেন। তিনি বৈদ্যুতিক কন্ডাক্টর আবিষ্কার করেন। অতঃপর বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বিদ্যুতের পজেটিভ ও নেগেটিভ নামক দুটি পক্ষ আবিষ্কার করেন। ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলি বিদ্যুৎশক্তির একটি স্থায়ীরূপ আবিষ্কার করেন। অতঃপর বহুমুখী গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়।
বিদ্যুতের অবদান
মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনে বিদ্যুতের অবদান অতুলনীয়। বিদ্যুতের ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনে এক বিস্ময়কর পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ মানুষের জীবনের নানা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। বিদ্যুতের আবিষ্কার বিশ্বজগৎকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, সংবাদপত্র, কম্পিউটার, ইন্টারনেট প্রভৃতি পৃথিবীর এক গ্রাপ্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের ভাবের আদান-প্রদান ও যোগাযোগকে সহজতর করে দিয়েছে। বৈদ্যুতিক পাখার হিমশীতঙ্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, মাইক্রোফোন, ব্যারোমিটার প্রভৃতির আবিষ্কারকে সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছে বিদ্যুৎ। পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার টিলার কৃষিক্ষেত্রে যে নবযুগের সূচনা করেছে তার মূলে রয়েছে বিদ্যুতের অবদান। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও বিদ্যুতের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের জীবনে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিদ্যুৎশক্তির অবদান অপরিসীম। বস্তুত বিদ্যুৎশক্তি এমন এক মোহনীয় শক্তি যা মানুষের জীবনের নানাবিধ চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে উন্নত ও সুন্দর তুলেছে।
বিদ্যুৎ ও বর্তমান বিশ্ব
আদিম অরণ্যচারী মানব-কাফেলার সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতার সফল আজকের এ আলোকদীপ্ত সভ্যতা। বিজ্ঞানের বহুমুখী অবদানে আধুনিক সভ্যতা ধন্য। বিজ্ঞানের এক উল্লেখযোগ্য অবদান বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া আজকের পৃথিবী অচল। আধুনিক সভ্যতার সুন্দর সচ্ছন্দময় জীবনপ্রবাহ বৈদ্যুতিক শক্তির অবদানে ধন্য। গোটা বিশ্ব আজ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বৈদ্যুতিক শক্তির বলে কলের চাকা ঘুরছে। ছাপাখানায় বই ছাপা হচ্ছে, মোটর গাড়ি চলছে, ফ্রিজে খাবার ঠাণ্ডা হচ্ছে, টেলিভিশন রেডিও চলছে, কম্পিউটার তার সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে ।
বিদ্যুতের উপকারিতা ও অপকারিতা
মানুষের অন্তহীন চাহিদা পূরণে বিদ্যুৎ নানাভাবে মানুষের উপকার করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন—সকল ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বিদ্যুতের বহুমুখী উপকারিতার বিপরীতে এর কিছু অপকারী দিকও রয়েছে। বিদ্যুৎশক্তির আবিষ্কারের ফলে মানুষ কায়িক শ্রমের প্রতি বিমুখ হয়ে যন্ত্রশক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে মানুষের সুকুমার মনোবৃত্তিও যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে।
উপসংহার
বিদ্যুৎ কেবল শক্তির উৎস নয়; এ শক্তিকে নিয়ন্ত্রিতভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধন করেছে বিদ্যুৎশক্তি বর্তমান বিশ্বকে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির এমন এক স্তরে নিয়ে উপনীত হয়েছে, যার অবদানে গোটা বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত। সভ্যতা মানবজীবনের অগ্রগতি ও উন্নয়নের স্মারক। বিদ্যুৎশক্তির গতিশীল অবদান মানব সভ্যতার ক্রমোত্তরণশীল ধারায় উত্তরোত্তর আরো সাফল্য বয়ে আনবে এটা সকলের কাম্য।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।
Leave a Reply