রচনাRegular Contentনির্মিতি

রচনাঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “কৃষিকাজে বিজ্ঞান বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

ভূমিকা 

আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞানের প্রভাব সর্বব্যাপী। আমাদের জীবন ধারার প্রতিটি ক্ষেত্রই বিজ্ঞানের কল্যাণকর অবদানে সমুজ্জ্বল। 

‘Life today in governed and conditioned by the off shoots of science and it is very difficult to imagine existence without science.’ 

বিজ্ঞানের বহুমুখী অবদানে গড়ে ওঠেছে আধুনিক সভ্যতা। আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের সর্বসঞ্চারী প্রভাব কৃষিকাজেও ব্যাপক অবদান রাখছে ।

কৃষি ও মানব সভ্যতা 

‘Men invented the art of agriculture and then civilization followed.’ 

সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের বিভিন্ন স্তরে মানুষ জীবিকা হিসেবে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করলেও খাদ্যের উৎস হিসেবে কৃষির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের আদিম পেশা হিসেবে কৃষিকার্য অত্যন্ত গৌরবময়। 

দার্শনিক রুশোর মতে, ‘সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক গৌরবমণ্ডিত শিল্প হচ্ছে কৃষি ।’ 

মানুষের জীবনধারণের জন্যে কৃষি যোগান দিচ্ছে অপরিহার্য উপকরণ সামগ্রী । পৃথিবী ব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির জোয়ারের কাছে আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে কৃষি উৎপাদন। তাই গোটা বিশ্বের মানুষের গ্রাসাচ্ছাদন ও বেঁচে থাকার প্রশ্নে আজ প্রয়োজন কৃষি উৎপাদনের ব্যাপক বৃদ্ধি। কিন্তু সনাতন পদ্ধতির কৃষি ব্যবস্থা এ চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই উন্নত দেশসমূহ কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য ও উন্নতি সাধন করছে।

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগ 

খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানের সহায়তায় কৃষিক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিজ্ঞানের প্রভাবে কৃষি আজ আদিম স্তর পেরিয়ে আধুনিক স্তরে পদস্থাপন করেছে। ভূমিকর্ষণ, জলসেচ, উন্নত বীজ উৎপাদন, বীজ সংরক্ষণ, সার উৎপাদন, কীটনাশক প্রয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান এবং ভূমিকা অত্যন্ত ফলপ্রদ ।

See also  পত্রঃ  বিদ্যালয় জীবনের শেষ দিনের মানসিক অবস্থা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখ

ভূমিকর্ষণে বিজ্ঞান 

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভূমিকর্ষণ একটি আবশ্যকীয় পর্যায়। গভীরভাবে ভূমিকর্ষণ করা হলে উৎপাদন হার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গরু-মহিষ চালিত কাঠের লাঙ্গলের সাহায্যে গভীরভাবে জমি চাষ সম্ভব নয়। ফলে জমির উৎপাদন শক্তি হ্রাস পায় ৷ উন্নত দেশসমূহে ভূমিকর্ষণের জন্যে পাওয়ার টিলার, ট্রাকটর প্রভৃতি আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত চাষ পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম ।

সেচকার্যে বিজ্ঞান 

জমিতে রোপিত শস্যের যথাযথ পরিবর্ধনে জলসেচের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

কথায় বলে, ‘পানি হচ্ছে কৃষির প্রাণশক্তি।’ 

যুগ যুগ ধরে এ চাহিদা পূরণ করে আসছে প্রাকৃতিক উৎসসমূহ। কিন্তু বর্তমানে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সময় মতো এবং পরিমাণমতো পানির ব্যবহারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। গভীর নলকূপ, পাওয়ার পাম্প ইত্যাদির সাহায্যে ভূগর্ভ, নদী কিংবা খাল থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষিক্ষেত্রে সেচকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে। সেচ ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহারে প্রকৃতির ওপর নির্ভরতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং উৎপাদনেও যথাযথ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে।

সার উৎপাদনে বিজ্ঞান 

একই জমিতে বছরের পর বছর বিরামহীন চাষাবাদের ফলে জমির উর্বরতা-শক্তি হ্রাস পায়। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্যে জমিতে সার প্রয়োগ আবশ্যক। সার হচ্ছে জমির খাদ্য। জমির এ চাহিদা পূরণে জৈব সারের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক উপায়ে নানা প্রকার রাসায়নিক সারও উৎপাদিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সার উৎপাদিত না হলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেত এবং বিশ্বময় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। সার উৎপাদনে বিজ্ঞানের ভূমিকা একটি সময়োপযোগী কার্যকরী ব্যবস্থা।

পোকামাকড় দমনে বিজ্ঞান 

পোকামাকড় ফসলের পরম শত্রু। শস্য উৎপাদনে পোকামাকড়ের উপদ্রব এক বিরাট অন্তরা বিজ্ঞানের কল্যাণে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্যে নানা প্রকার কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে। এ কীটনাশক শস্যক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্যে নানা প্রকার যন্ত্রপাতিও উদ্ভাবিত হয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগ-বালাইয়ে ও বছর যে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে বিজ্ঞানের কল্যাণে তা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

See also  ভাবসম্প্রসারণঃ বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু

কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান 

উৎপাদিত ফসলের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ব্যবস্থা আবশ্যক। তা না হলে প্রয়োজন এবং চাহিদা মাহি কৃষিজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত না হলে অপচয় রোধ অসম্ভব এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সংব অনিবার্য। কিন্তু বিজ্ঞান কৃষিজাত পণ্যের সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পারিবারিক জীবনে মাছ, মাংস, তরিতরক সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্রিজ, ডিপফ্রিজ ইত্যাদি। ব্যাপক হারে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে হিমাগার ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বছরের এ মৌসুমে উৎপাদিত ফসল অন্য সময়ে ভোগ করা যাচ্ছে এবং ফসলের উচ্চ মূল্যও পাওয়া যাচ্ছে ।

ফসল বাজারজাতকরণে বিজ্ঞান 

উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণে বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা প্রদ করছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে ফসলাদি এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে দ্রুতগামী যানবাহনের সাহায্যে স্থানান্তর করা যাচ্ছে। এ ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে বিশেষ সুবিধা হচ্ছে।

বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশে চাহিদার অনুপাতে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন যথে নয়। এজন্যে প্রয়োজন কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহার। একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে আমাদের রয়েছে অসংখ্য প্রতিবন্ধকত সামগ্রিকভাবে না হলেও সীমিত পরিসরে বিজ্ঞানের ব্যবহার আমাদের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ও অগ্রগতি সূচনা করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভূমি কর্ষণে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃষি জমির খণ্ডায়নের জন্যে উন্নত চাষ পদ্ধি বহুলাংশে ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে সেচকার্যে ব্যাপক হারে গভী নলকূপ, অগভীর নলকূপ এবং পাওয়ার পাম্পের ব্যবহার হচ্ছে । উন্নতমানের বীজ ব্যবহারের ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক ফল নিশ্চিত করার জন্যে উন্নত বীজ তৈরির গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বৈজ্ঞানি উপায়ে উচ্চ ফলনশীল বীজ উদ্ভাবনে সফলকাম হয়েছে। দেশেই এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে সার উৎপাদিত হচ্ছে। পচনশীল কৃষিপ‍ সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি বেশ কিছু হিমাগার স্থাপিত হয়েছে। পোকামাকড় দমনে কীটনাশকের ব্যবহারও বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে।

See also  রচনাঃ ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা / চিকুনগুনিয়া ও এডিস মশা

উন্নত দেশসমূহে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশেও এ পরিবর্তনের ঢেউ এসে লেগেছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় গৃহীত পদক্ষেপ নিতান্তই অপ্রতুল। ‘এদেশে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার পাশাপাি রয়েছে কৃষকসমাজের নিরক্ষরতা। তাই কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক উপকরণের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে এবং কৃষকসমাজবে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে এবং তাদের কৃষি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তবেই বাংলাদেশে কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির প্রয়োগ যথাযথ ও ফলপ্রসূ হবে ।

উপসংহার 

অন্নসংস্থান থেকে শুরু করে জীবনের বহুবিধ স্বাচ্ছন্দ্যে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। সকল উন্নত দেশেই কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। যান্ত্রিক প্রযুক্তি প্রয়োগ— কৃষিকে অকল্পনীয়ভাবে বর্ধিত উৎপাদনে অভিষিক্ত করেছে তাই বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার গ্রাসাচ্ছাদনে এবং প্রতিটি দেশ ও কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির প্রসার আবশ্যক ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

রচনাঃ পাট

Swopnil

রচনাঃ বাংলাদেশের বর্ষাকাল

Swopnil

রচনাঃ শিষ্টাচার

Swopnil

Leave a Comment