,

রচনাঃ আর্সেনিক দূষণ

Posted by

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আর্সেনিক দূষণ/বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণ/আর্সেনিক দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আর্সেনিক দূষণ

ভূমিকা 

আর্সেনিক দূষণ বর্তমানে বাংলাদেশের একটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক জনগোষ্ঠী বর্তমানে মারাত্মক আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, পরিমাণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, দিনাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলের নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং আর্সেনিকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হলে নলকূপের পানি ব্যবহারে সচেতন হওয়া আবশ্যক।

আর্সেনিক কী 

আর্সেনিক এক প্রকার ধূসর ধাতব জাতীয় ভঙ্গুর পদার্থ। প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই মাটি, পানি ও বায়ুতে আর্সেনিক সালফার বিদ্যমান থাকে। জৈব এবং অজৈব উভয় প্রকার আর্সেনিক রয়েছে। পানিতে প্রধানত অজৈব আর্সেনিক পাওয়া যায় । জৈব অপেক্ষা অজৈব আর্সেনিক বেশি ক্ষতিকারক। আর্সেনিকের রাসায়নিক সংকেত As

আর্সেনিকের উৎস 

মাটির উপরিভাগের তুলনায় ভূ-গর্ভে আর্সেনিকের পরিমাণ বৈজ্ঞানিকভাবে আবিষ্কৃত পানির আর্সেনিক মুক্তকরণ ফিল্টারের সাহায্যে পানিকে আর্সেনিক মুক্ত করে পান করা,আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর আর্সেনিক মুক্ত পানি পান করা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও হালকা ব্যায়াম করা । উল্লেখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে আর্সেনিকজনিত সমস্যা থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যায় ।

ভূ-গর্ভস্থ প্রতিকারের উপায় 

আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ ভয়াবহ

রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্যে নিম্নরূপ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন——

ক. জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রচার মাধ্যমগুলোর সাহায্যে আর্সেনিক সমস্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা ;

খ. আর্সেনিক দূষিত এলাকাসমূহ চিহ্নিত করা ;

আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলোকে চিহ্নিত করা এবং আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ ও টিউবওয়েলের পানি পান করা; পুকুর কিংবা জলাশয়ের পানি ফুটিয়ে পান করা ;

বাংলাদেশে আর্সেনিক সমস্যা 

সাম্প্রতিক কালে আন্তর্জাতিক আর্সেনিক সম্মেলনের এক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪১টি জেলা আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়ায় হুমকির সম্মুখীন। এর অধিকাংশ জেলাই দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। বালাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম আর্সেনিক দূষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ।

বিভিন্ন দেশে আর্সেনিক সমস্যা 

বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অনেক দেশেই আর্সেনিক সমস্যা বিরাজিত। বাংলাদেশের বাইরে . পশ্চিমবঙ্গ, আর্জেন্টিনা, তাইওয়ান, কানাডা, জাপান, ম্যাক্সিকো, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাস্কা রাজ্যের কিছু কিছু অঞ্চল আর্সেনিক দূষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে উল্লেখিত দেশ ও অঞ্চলসমূহে সীমিত জনসংখ্যা এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের পরিমাণ কম হওয়ায় আর্সেনিক দূষণজনিত সমস্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেনি। অধিক জনসংখ্যা ও ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর ব্যাপক নির্ভরশীলতার কারণে আর্সেনিক সমস্যা বাংলাদেশের অধিবাসীদের জন্যে ভয়াবহ ক্ষতিকারক রূপে দেখা দিয়েছে । 

বাংলাদেশে আর্সেনিকের মাত্রা

এক বিশেষজ্ঞ জরিপ থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। মানুষের দেহ প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক গ্রহণে সক্ষম। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা যেখানে ০.০৬ পিপিএস সেখানে ১০ থেকে ৯০০ গুণ আর্সেনিক সনাক্ত হয়েছে ৷ আর্সেনিকজনিত বিষক্রিয়ার লক্ষণ : মাত্রারিক্ত আর্সেনিক মিশ্রিত পানি দীর্ঘদিন পান করলে দু’বছর কিংবা আরো অধিক সময়ের মধ্যে এর ক্ষতিকর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—

ক. শরীর কিংবা হাতের তালুতে বাদামি ছাপ পড়া ;
খ. বুকে, পিঠে কিংবা বাহুতে স্পটেড পিগমেন্টেশন দেখা দেওয়া ;
গ. আক্রান্ত ব্যক্তির জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁট ইত্যাদিতে মিউকাস মেমব্রেন, মেলানোসিস হওয়া ;
ঘ. পায়ের চামড়া পুরো হয়ে যাওয়া। আঙ্গুল অসাড় ও বাঁকা হয়ে যাওয়া ।
ঙ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঙ্গুলের মাথায় পচন ধরে যাওয়া ।

উপসংহার 

আর্সেনিক সমস্যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্যে এক ভয়াবহ সমস্যারূপে দেখা দিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট ও জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বর্তমান হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে, আর্সেনিক দূষণজনিত সমস্যা এক মারাত্নক রূপ ধারণ করবে যা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্যে বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই বৈজ্ঞানিক, ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনসচেতনতার মাধ্যমে আর্সেনিক দূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন । সর্বাপেক্ষা বেশি। মাটির নিচে পাথরের যে স্তর রয়েছে তাতে বিদ্যমান আছে FeS2 নামক একটি যৌগ। এ যৌগটিই আর্সেনিককে পাথরের সঙ্গে ধরে রাখে। ভূ-গর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে পানি স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক পরিমাণে আর্সেনিক দ্রবীভূত হয়। নলকূপের মাধ্যমে এ পানি তুলে নিয়ে পান করে বিপুল সংখ্যক লোক আর্সেনিকজনিত মারাত্নক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *