আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ আদব-কায়দা/শিষ্টাচার বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
শিষ্টাচার / শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ আদব-কায়দা
ভূমিকা
শিষ্টাচার মানব চরিত্রের একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় গুণ। শিষ্টতাগুণে মানুষ সুনাম ও সাফল্য অর্জন করে থাকে। শিষ্টাচার মানুষের মধ্যে ভদ্রতা, শালীনতা ও বিনয়ের বিকাশ ঘটায়। শিষ্টতা গুণের মধ্যে আন্তরিকতা বিদ্যমান। ভদ্রতার বাহ্যিক আচরণের ঊর্ধ্বে শিষ্টাচারের স্থান। শিষ্টাচার মার্জিত রুচিসম্পন্ন হৃদয়ের একটি স্বতঃস্ফূর্ত গুণ। সুতরাং অন্যের প্রতি শালীন, ভদ্র ও মনোগ্রাহী আচরণই শিষ্টাচার নামে অভিহিত।
শিষ্টাচারের গুরুত্ব
মানুষের আচার-আচরণে, কথাবার্তা ও কার্যকলাপে যখন ভদ্রতা ও মার্জিত রুচির প্রকাশ ঘটে তখন তার মধ্যে শিষ্টতাগুণের নিদর্শন লক্ষ করা যায়। শিষ্টাচার দ্বারা মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি হয় এবং মানবিক সম্পর্ক সুন্দর ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শিষ্টাচার ভিন্ন কখনোই মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায় না। জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে শিষ্টাচার গুণ থাকা প্রয়োজন ।
শিষ্টাচার গুণের অভাবজনিত কুফল
অশিষ্ট মানুষ কখনোই জীবনে সাফল্য ও সুনাম অর্জন করতে পারে না । শিষ্টাচার ভিন্ন সুখ ও শান্তি সুদূর পরাহত। পারস্পরিক সৌজন্য ও শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া কখনোই শান্তির ছোঁয়া পাওয়া যায় না। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। ব্যক্তিগত জীবনের শিষ্টাচারের প্রতিফলন ঘটে সমাজ জীবনে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের দিকে তাকালে সেখানে জাতিগত সৌজন্যবোধের বিচিত্র বিকাশ লক্ষ করা যায়। ফলে সেসব দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে। যেখানে জাতিগত শিষ্টাচারের অন্তাব ঘটেছে সেখানেই ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এক দেশ অন্য দেশের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে।
সামাজিক জীবন ও শিষ্টাচার
সামাজিক জীবনে মানুষকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদানের মধ্যে বেঁচে থাকতে হয় ৷ পারস্পরিক স্নেহ, প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে সম্প্রীতির বন্ধন। এসবের পরিবর্তে কেউ যদি অশালীন ও অভদ্র আচরণ প্রদর্শন করে তবে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অশান্তির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সামাজিক জীবনে মানুষকে প্রতিনিয়তই অফিস-আদালতে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে, গ্রামে-গঞ্জে, পূজা-পার্বণ উৎসবে নানাজনের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে হয়। এ ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে যদি অভদ্রতা বা অসৌজন্যতা প্রকাশ পায় তবে পরস্পর সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয় । সেক্ষেত্রে শিষ্টাচারের অভাবে সামাজিক সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
শিষ্টাচার অর্জনের উপায়
শিষ্টাচার কোনো সহজাত প্রবণতা নয়। এ মহৎগুণটি সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা দ্বারা অর্জন করতে হয় । ভদ্র বা উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণ করলেই যে একজন মানুষ শিষ্টাচারী হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পক্ষান্তরে নীচু বংশে জন্মগ্রহণ করেও অনেকেই এ মহৎগুণটি অর্জন করতে পারে। তবে শিষ্টতাগুণ অর্জনের ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষার্জন এবং পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। শিক্ষা মানুষকে ভদ্র ও রুচিশীল করে। সুন্দর পারিবারিক বা সামাজিক পরিবেশ মানুষের চরিত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। শিশুকাল থেকেই কেউ যদি সুন্দর পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তবে তার চরিত্রে সুপরিবেশের প্রভাব অনিবার্য রূপেই প্রতিফলিত হবে। শিশুর শিষ্টাচার শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় মাতা-পিতার কাছ থেকেই। পারিবারিক জীবনে একজন শিশুকে মাতা-পিতা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়পরিজন ও পাড়া প্রতিবেশির সঙ্গে মিশতে হয়। সুতরাং শিষ্টাচার অর্জনের ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম।
শিক্ষাঙ্গন ও শিষ্টাচার অর্জন
শিষ্টাচার অর্জনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র- ছাত্রীরা শিক্ষকের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিষ্টাচার গুণ অর্জন করে। একজন ছাত্রকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠী বা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশতে হয়। এদের কাছ থেকেও শিষ্টাচার শেখা যায়। সদৃগ্রন্থাবলি পাঠের মাধ্যমেও শিষ্টাচার অর্জন করা যায়। এ কথা অনস্বীকার্য— প্রকৃত বিদ্যা মানুষকে বিনয় দান করে ।
শিষ্টাচার ও সত্যাচরণ
শিষ্ট আচরণের বিপক্ষে অনেকেই হয়তো বলতে পারেন—শিষ্টতা রক্ষা করতে গেলে সত্যকে অনেক ক্ষেত্রে গোপন রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে সত্যের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। কথাটির পেছনে যুক্তি থাকলেও প্রকৃত সত্যভাষণ অর্থ এ নয় যে, তা অন্যের মনোবেদনার কারণ হবে। প্রকৃত সত্যও শালীনতার মধ্য দিয়ে উচ্চারণ করা যায়— সেক্ষেত্রে শিষ্টাচার ও সত্যভাষণের বিরোধের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে না ।
রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে শিষ্টাচার
জীবনের সর্বস্তরেই শিষ্টাচারের গুরুত্ব রয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক গণ্ডির বাইরে রাষ্ট্রীয় জীবনেও শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান সেখানেও শিষ্টাচার বিদ্যমান। একজন রাষ্ট্রদূতের শিষ্টতা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিষ্ট আচরণ ভিন্ন কূটনৈতিক সম্পর্ক কখনোই সুদৃঢ় হয় না ।
উপসংহার
বিনয়, ভদ্রতা, সদাচার মানব চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শিষ্টাচার মানব চরিত্রকে মহিমান্বিত করে। জ্ঞানী ও মহৎ ব্যক্তির জীবন শিষ্টাচারগুণে ধন্য। শিষ্টাচার ব্যক্তিগত জীবনকে সুন্দর করে এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। মানব চরিত্রের এ উত্তম গুণ অর্জনে সবারই যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।