রচনানির্মিতি

রচনাঃ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য

মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য/মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য

ভূমিকা 

মানবজীবন নানাবিধ কর্তব্য-কর্মে পরিপূর্ণ। তন্মধ্যে সর্বোত্তম কর্তব্য কর্ম হলো মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্বশীল থাকা । পৃথিবীতে মাতা-পিতার মতো আপনজন আর কেউ নেই। মাতা-পিতা আমাদের জন্মদাতা। তাদেরই কৃপায় আমরা পৃথিবীর মুখ দেখতে পেয়েছি। তিল তিল করে স্নেহ-মমতা দিয়ে, অপরিসীম যত্ন ও আদরে মাতা-পিতা আমাদের বড় করে তোলেন । তাই মাতা- পিতার প্রতি কর্তব্য জীবনের সকল কর্তব্য-কর্মের ঊর্ধ্বে ।

সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার অবদান 

মাতা-পিতার প্রতি প্রত্যেকেরই কর্তব্যশীল থাকা উচিত। সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার অবদান কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। একটি চরম অসহায় অবস্থা থেকে লালন-পালন করে মাতা-পিতা সন্তানকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলেন। মাতা-পিতা সন্তানের সুখের জন্যে সকল প্রকার যত্ন ও উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। সন্তানের খাবার-দাবার, সন্তানের লেখা-পড়া, সন্তানের কর্মের সংস্থান –সকল ব্যাপারে মাতা-পিতার প্রযত্ন ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। সন্তানের জন্যে মাতা-পিতার ত্যাগের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। মাতা-পিতা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, নিজে না পরে সন্তানের জন্য সুন্দর সুন্দর পোশাক-আশাকের ব্যবস্থা করেন। সন্তানের সুখ সাচ্ছদ্য বিধানের জন্যে মাতা-পিতা দিবারাত্র কত যে পরিশ্রম করেন তার কোনো হিসেব নেই। সন্তানের হাসিমুখই মাতা-পিতার আনন্দের উৎস। সন্তান কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে মাতা-পিতার উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না। সন্তানের যেকোনো প্রকার অমঙ্গল মাতা-পিতার বেদনা ও অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানের মঙ্গলময় জীবন, সাফল্য ও সুস্থতাই মাতা-পিতার একমাত্র কাম্য। এমন নির্মল ও বিশুদ্ধ যার স্নেহ-মমতা, যত্ন ও উদ্যোগ—সেই মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যও অপরিসীম । মাতা-পিতার কষ্ট, শ্রম ও যত্নে গড়ে ওঠে সন্তানের সুন্দর জীবন ।

See also  রচনাঃ সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য 

মাতা ও পিতা যে পরম স্নেহ-যত্নে, কষ্টে, ধৈর্যে সন্তানকে মানুষ করে তোলেন — সন্তানের পক্ষে সেই ঋণ পরিশোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার অপরিসীম অবদানের কথা চিন্তা করে আমাদের সবসময়ই মাতা-পিতার প্রতি যত্নশীল ও কর্তব্যপরায়ণ থাকা উচিত। তাদের প্রতি আনুগত্যশীল ও বাধ্য থাকা সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। 

পবিত্র কোরানে বর্ণিত হয়েছে —

‘হে মানব সন্তান! আল্লাহ তোমাদের মাতা-পিতার প্রতি সদয়, মধুর ও সশ্রদ্ধ ব্যবহার করতে আদেশ করেছেন। তাঁদের সন্তুষ্ট কর, তাঁদের হুকুম পালন কর। তাঁরা বৃদ্ধ হলে তাঁদের প্রতি বিরক্তি প্রদর্শন করো না। আল্লাহ্র কাছে তাঁদের কল্যাণ ও শান্তি কামনা কর।’ 

পবিত্র কোরানের এ মহাবাণী মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য কর্মেরই নির্দেশ প্রদান করে। 

মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন –

‘ আলজান্নাতু তাহতা আকদামিল উম্মোহাত’- মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত।’ 

হিন্দুধর্মে উল্লেখ আছে – 

‘পৃথিবীর চেয়েও গুরুভার যদি কিছু থাকে, তবে তা মাতা, আর আকাশের চেয়েও উঁচু যদি কিছু থাকে, তবে তা পিতা।’ এ থেকেই ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা।’ 

প্রবাদ আছে সহজে অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীতে মাতা-পিতার স্থান ও মর্যাদা কত উঁচুতে।

মাতৃভক্তির দৃষ্টান্ত 

মানব জাতির ইতিহাসে যাঁরা স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁরা প্রত্যেকের মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যশীল ও তাঁদের আদেশ-উপদেশের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের আদেশ পালনের জন্যে দুর্যোগপূর্ণ রাতে দাদির নদী সাঁতরে পাড় হয়ে প্রবাস থেকে মায়ের কাছে উপস্থিত হয়েছেন। বালক বায়েজীদ বোস্তামী (র.) রুগ্ন মাতার শিয়রে পানির গ্লাস নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। বালক আবদুল কাদের জিলানী (র.) মাতার সত্য কথা বলার উপদেশ বাক্য মনে রেখে ডাকাতের নিকট নিজের কাছে রক্ষিত স্বর্ণমুদ্রার কথাও অকপটে বলে দিয়েছিলেন। মহামতি আলেকজান্ডার মাতার বিরুদ্ধে সত্য অভিযোগও গ্রহণ করতেন না। জগদ্বিখ্যাত মহা মনীষীগণ প্রত্যেকেই মাতা-পিতার প্রতি অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ ও আনুগত্যশীল ছিলেন। 

See also  রচনাঃ শিষ্টাচার

ছাত্র-ছাত্রীদের কর্তব্য 

মাতা-পিতার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে। মাতা-পিতার উদ্যোগ ও যত্নে সন্তান-সন্ততির লেখা-পড়া পরিচালিত হয়। সন্তানের উন্নত ও সুন্দর জীবনগঠনের জন্যেই মাতা-পিতা শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। ছাত্র-জীবন ভবিষ্যৎ জীবনগঠনের একটি সুন্দরতম অধ্যায়। ছাত্র জীবনে স্বভাব চরিত্র সুচারুরূপে গঠনের জন্যে মাতা-পিতার আদেশ উপদেশ মেনে চলা উচিত। সস্তানের আচার-আচরণ যদি সুন্দর শোভন হয়, সন্তান যদি পড়াশুনার প্রতি যত্নশীল হয় তবে মাতা- পিতার অন্তঃকরণ আনন্দে ভরে ওঠে। মাতা-পিতাকে হাসি-খুশি আনন্দে রাখতে পারলেই তাদের প্রতি কর্তব্য কর্ম অলক্ষ্যে পালন করা হবে।

উপসংহার 

আমাদের জীবনব্যাপী মাতা-পিতার যে মহান ত্যাগ ও অবদান তা বলে শেষ করা যাবে না। কোনো কর্তব্য পালনই তাঁদের প্রতি যথার্থ প্রতিদান নয়। কর্তব্য ও আচরণে সন্তানকে এমন হতে হবে যাতে মাতা-পিতা সর্বদাই সন্তানের প্রতি পরিতুষ্ট থাকেন। মাতা-পিতার ঋণ পরিশোধ নয়— তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাঁদেরকে সদা-সন্তুষ্ট রাখা সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

রচনাঃ বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ

Swopnil

রচনাঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ সড়ক দুর্ঘটনা

Swopnil

Leave a Comment