রচনানির্মিতিবাংলা

রচনাঃ সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা

সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা/ দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব/ জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা/ দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব/ জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা/ দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব/ জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা

ভূমিকা 

সংবাদপত্র সময়ের দর্পণ। আধুনিক মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবাদপত্র। নানা বিষয়ের, নানা মেজাজের ও নানা আঙ্গিকের সংবাদপত্র মানুষের চারপাশে ভিড় করে আছে। রুচি ও প্রয়োজনের সাথে সংগতি রেখে যে কেউ যেকোনো সংবাদপত্র হাতে তুলে নিতে পারে। তবে দৈনিক পত্রিকা প্রতিটি সচেতন ও শিক্ষিত মানুষের জীবনে যেন না হলেই চলে না। সকাল বেলা পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে না পারলে অনেকেরই যেন দিন শুরু হতে চায় না। সকাল বেলা পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে যেকোনো মানুষ আগের দিনের সমগ্র বিশ্বকে মনের পাতায় তুলে আনতে পারে এবং চলমান দিনটির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারে। আধুনিক মানুষের জ্ঞানের পরিধিও সংবাদপত্রকেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংবাদপত্রের প্রচলন 

সংবাদপত্র প্রচলনের কথা কে প্রথম চিন্তা করেছিলেন সে তথ্য সম্পর্কে আজ নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তবে চীন দেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মুঘল শাসনামলে আমাদের দেশে বাদশাহি ফরমান, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি হাতে লিখে প্রজাদের মধ্যে প্রচার করা হতো। ইউরোপে প্রথম সংবাদপত্র প্রচলিত হয় ইতালির ভেনিস শহরে। রানি এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডে ‘লন্ডন গেজেট’ নামক একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। আমাদের দেশে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘বেঙ্গল গেজেট’। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন উইলিয়াম হিকি। সম্পাদকের নামানুসারে এটি ‘হিকির গেজেট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’। জে. সি. মার্শম্যানের সম্পাদনায় পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘সমাচার দর্পণ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে তা দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে রাজা রামমোহন রায় ‘সংবাদ কৌমুদী’ এবং ঈশ্চরচন্দ্র গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সময়ের বহমান গ্রোতধারায় বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকেই আজ প্রকাশিত হচ্ছে অসংখ্য সংবাদপত্র ।

See also  অনুচ্ছেদঃ প্রিয় জন্মভূমি

বাংলাদেশের সংবাদপত্র 

বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংবাদপত্র ছিল মাত্র ১০টি, আর ১৯৯৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২৮৬টি ও সাময়িকী ১৫২২টি। সংখ্যায় বেশি হলেও বাংলাদেশের সংবাদপত্রের মান তেমন উন্নত নয়। এ দেশের সংবাদপত্রগুলোতে পেশাদারিত্বের অভাব বিদ্যমান এবং সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকট। বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ এদেশের সংবাদপত্রের খবরকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে। রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য ও অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি এবং সুবিধাবাদী চেতনা সংবাদপত্রের এ অবস্থার কারণ। বাংলাদেশের প্রধান সংবাদপত্র হলো— ইত্তেফাক, ইনকিলাব, যুগান্তর, মানবজমিন, জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, আমার দেশ, সংবাদ, সংগ্রাম, আজকের কাগজ (বাংলা দৈনিক); The Daily Star, The Bangladesh Observer, The News Today, The New Nation (ইংরেজি দৈনিক), পূর্ণিমা, বিচিত্রা, চিত্রবাংলা, বিনোদন বিচিত্রা, অনন্যা (সাময়িকী)।

সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা 

সংবাদপত্র সংবাদের উৎস। সংবাদপত্রকে বলা হয় ‘Store house of the knowledge’ বা জ্ঞানের ভাণ্ডার। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখের প্রতিফলন ঘটে একমাত্র সংবাদপত্রেই। নিম্নে সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :

১. সংবাদপত্র জ্ঞানের ধারক 

 বলা হয়, প্রতি পাঁচ বছর পর বিশ্বের জ্ঞানের জগৎ দ্বিগুণ হয়ে যায়। জ্ঞানবিশ্বের এ বিশাল বিস্তার প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর, মতামত, চিন্তাশীল রচনা প্রভৃতির মাধমেই প্রতিফলিত হয়। যদি কেউ নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ করে তাহলে নিত্যনতুন তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। জ্ঞানের মূলে যে এই তথ্যবিশ্ব ছাড়া আর কিছুই নেই তা সবাই স্বীকার করেন। সেজন্য সংবাদপত্রকে জ্ঞানের ধারক বলা যায় ৷

২. অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন 

সংবাদ পত্রকে ‘Mirror of current time বা চলমান সময়ের দর্পণ বলা হলেও এটি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করে। অতীত সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে চাইলে সংবাদপত্র থেকে আমরা তা পেতে পারি। বর্তমানকে জীবন্তরূপে সংবাদপত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে। একই সাথে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কেও সংবাদপত্র আগাম ধারণা দেয়। তাই সংবাদপত্র আমাদের জ্ঞানের জগৎকে কেবল আপ-টু-ডেট-ই রাখে না প্রাগ্রসরও করে দেয় 

See also  অনুচ্ছেদঃ ডাকপিয়ন

৩. তথ্যবিশ্বের ক্ষুদ্র সংস্করণ 

সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে। সবকিছু মানুষের পক্ষে জানা বা অবহিত হওয়া সম্ভব নয়। সকল তথ্যকে একসাথে বুকে ধারণ করে প্রতিদিন সংবাদপত্র আমাদের সামনে হাজির হয়। সংবাদপত্রের একটি মাত্র স্থিরচিত্র আমাদের কোনো বিষয় সম্পর্কে এমন ধারণা দেয় যা অনেকসূত্রে প্রাপ্ত বর্ণনা থেকেও বোঝা সম্ভব হয় না। 

ইভান তুর্গেনিভ যথার্থই বলেছেন, “একটি বইয়ের একশত পৃষ্ঠা পাঠ করে যে ধারণা লাভ করা যায় সংবাদপত্রের একটি মাত্র ছবিতে একবার চোখ বুলিয়েই সেই ধারণা লাভ করা যায়।”

৪. সংবাদপত্রের বিচিত্র বিষয় সংবাদপত্রে ছাপা হয় না এমন কোনো বিষয় নেই। জ্ঞান ও শিক্ষার সর্বশেষ অগ্রগতি সবার আগে সংবাদপত্র আমাদের গোচরে আনে। আধুনিককালে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে পর্যন্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন দিক নেই যে তা প্রকাশের জন্য আলাদা বিভাগ নেই। তা ছাড়া অনেক সাময়িকী ও গবেষণা পত্রিকা রয়েছে যা জ্ঞানের সুনির্দিষ্ট শাখার পরিচর্যা করে থাকে। সাহিত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিটি বিষয়ের উপর স্বতন্ত্র সাময়িকী বা পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ইচ্ছে করলে যে কেউ পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ের পত্রিকা থেকে জ্ঞানের সমৃদ্ধি ঘটাতে পারে ।

আরো পড়োঃ

৫. জনমত গঠনে দেশ ও জাতির জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক তার পক্ষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা সংবাদপত্রের দায়িত্ব ৷ এ ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা দেশবাসী কৃতজ্ঞতার সাথেই স্মরণ করে। কারণ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা- আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংবাদপত্র জনমতগঠনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। সংবাদপত্র জনগণকে সংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট বিষয়ে প্রতিশ্রুতি করতে সক্ষম। এর কারণ, সংবাদপত্রে মুদ্রিত কথার প্রতি মানুষের আস্থা প্রবল। সংবাদপত্রের মতামত ও মন্তব্য জনগণ বিশেষভাবে গ্রহণ করে ।

See also  রচনাঃ জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

উপসংহার 

স্বাধীন সংবাদপত্র গণতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবচ। পত্রপত্রিকা স্বৈরাচারী শাসকদের দোষত্রুটি ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরে। সেজন্য সংবাদ পত্রকে প্রায়শ স্বৈরাচারী শাসকদের রোষানলে পড়তে হয়। বাংলাদেশের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংবাদপত্রের ভূমিকা সত্যি উল্লেখ করার মতো। যখনই শাকগোষ্ঠী গণতন্ত্রে পথ থেকে সরে আসে।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

অনুচ্ছেদঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ বায়ু দূষণ

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু

Swopnil

Leave a Comment