আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “মিতব্যয়িতা/আয় বুঝে ব্যয় কর বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
মিতব্যয়িতা / আয় বুঝে ব্যয় কর
ভূমিকা
আয় বা সম্পদের পরিমিত ব্যয়ের অভ্যাসই মিতব্যয়িতা। মিতব্যয়িতা একটি অসামান্য মানবীয় গুণ। জীবনে যে যত বেশি মিতব্যয়ী সে তত বেশি অনটন ও দুশ্চিন্তা মুক্ত। সুন্দর এবং সফল জীবনগঠনের জন্য মিতব্যয়িতার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। মিতব্যয়িতা মানুষকে হিসেবি ও সৎসাহসী হতে সাহায্য করে। আয় ও সম্পদের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় ব্যতীত কখনোই সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জন করা যায় না ।
সম্পদ ও অর্থের সঞ্চয়
মানুষ জীবনে যে পেশাই গ্রহণ করুক না কেন তার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে অর্থ উপার্জন। কারণ অর্থ ছাড়া জীবনে অভাব পূরণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা যায় না। জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অর্থ ছাড়া চলে না। কিন্তু বিনা পরিশ্রমে এ অর্থ উপার্জন করা যায় না। অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষকে দিন-রাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। শ্রমিক, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, উকিল, মোক্তার, ব্যবসায়ী কেউ বিনাশ্রমে অর্থ উপার্জন করতে পারে না। মানুষের বিদ্যা শিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা অর্জন সকল কিছুর উদ্দেশ্যই হচ্ছে অর্থ উপার্জন। কীভাবে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায় এ নিয়ে মানুষের প্রচেষ্টা ও চিন্তার শেষ নেই। রাজা-উজির, মন্ত্রী-সেনাপতি থেকে দীন-দরিদ্র, ভিখারি সবারই লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। অর্থাৎ ধনী-দরিদ্র সবার মধ্যেই অর্থ উপার্জনের প্রবণতা বিদ্যমান। তবে অর্থ উপার্জনই বড় কথা নয়— অর্থের যথার্থ ব্যয়ের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত পরিচয় উন্মোচিত হয়।
সম্পদ ও অর্থের ব্যয়
মানুষ অর্থ উপার্জন করে প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানোর জন্য। কিন্তু চহিদা মেটাতে গিয়ে যদি অর্জিত অর্থের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকে তবে অর্থ-সংকট অবশ্যই দেখা দেবে। বেহিসেবি খরচ করা থেকে সবসময়ই সংযত থাকতে হবে। অর্জিত অর্থ যাতে সঠিক পথে এবং সৎ প্রয়োজনে ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাই অর্থ ব্যয় করার সময় আবেগতাড়িত না হয়ে অর্থ-ব্যয়ের যৌক্তিকতা ও সামর্থ্যকে বিজ্ঞতার সঙ্গে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যিনি অমিতব্যয়ী তিনিই কেবল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করে থাকেন।
মিতব্যয়িতার সুফল
মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে পরিমিত ব্যয়ের দ্বারা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সুখের অধিকারী হতে পারে। মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে কখনোই হতাশা গ্রাস করতে পারে না। মিতব্যয়িতা মানুষকে সংকট মোকাবেলা ও সংকট উত্তরণে সাহসী ও দক্ষ করে তোলে। মিতব্যয়ীতা মানুষকে অনেক অবৈধ আকাঙ্ক্ষা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখে। মানুষ যদি মিতব্যয়ী মাধ্যমে সঞ্চয়ী হয়ে ওঠে তবে যেকোনো কারণে হঠাৎ আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেলেও তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। মিতব্যয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেককে সঞ্চয়ী হওয়া উচিত। সঞ্চয় না থাকলে আপদকালীন দুর্যোগ মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজন অনুসারে ব্যয় করে উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চয় করা উচিত। সমাজে দরিদ্র মানুষও যদি মিতব্যয়ী হয় তবে দারিদ্র্যের মধ্যেও সুখ লাভ করা যায় ৷ পক্ষান্তরে, কোনো বিত্তবানও যদি অমিতব্যয়ী হয় তবে তাকে পদে পদে বিপদগ্রস্ত হতে হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে মিতব্যয়িতা
ইসলাম ধর্মে মিতব্যয়িতার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জীবনে এ মন্ত্র গুণটি অর্জনের জন্য কোরান ও হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, ‘অপব্যয়কারী শয়তানের বন্ধু। মিতব্যয়ী ব্যক্তি কৃপণতার নিন্দামুক্ত। কারণ মিতব্যয়ী ব্যক্তির খরচ সবসময়ই আয়ের সঙ্গে সগংতিপূর্ণ হয়।
কথায় আছে –
‘Cut your coat according to your cloth.’ অর্থাৎ আয় বোঝে ব্যয় কর।
উপসংহার
মিতব্যয়িতা মানব জীবনের একটি উৎকৃষ্ট গুণ। চেষ্টা ও পরিশ্রমের দ্বারা মানুষ যে সম্পদ ও অর্থ অর্জন করে তা একটা পরিকল্পিত হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে ব্যয় করা উচিত। মিতব্যয়িতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করলে অল্প অর্জনেও সুন্দরভাবে জীবন নির্বাহ করা যায়। সুখী সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপনের জন্য সকলকেই মিতব্যয়ী হওয়া উচি। মিতব্যয়িতার মাধ্যমেই তৈরি হয় উন্নতির সিঁড়ি।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।