নির্মিতিবাংলারচনা

রচনাঃ টেলিভিশন

টেলিভিশন

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “টেলিভিশন/জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা/আধুনিক যুগে টেলিভিশনের প্রভাব বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা / আধুনিক যুগে টেলিভিশনের প্রভাব / টেলিভিশন

ভূমিকা 

আধুনিক সভ্যতার এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ‘টেলিভিশন’। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অজস্র উপহারের মধ্যে বিনোদন, শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টেলিভিশন আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতীয় জীবনের বহুমুখী পরিসরে টেলিভিশনের ভূমিকা অপরিসীম।

টেলিভিশন কী?

টেলিভিশন শব্দটি ল্যাটিন ‘টেলি’ (Tole) ও ‘ভিসিও’ (Visio) শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘টেলি’ শব্দের অর্থ ‘দূরা এবং ‘ভিসিও’ শব্দের অর্থ ‘দর্শন’ অর্থাৎ যা দূর থেকে দেখা যায়। এক কথায় ‘দূরদর্শন’। বেতার যন্ত্রে আমরা কেবল দূর থেকে কথা শুনতে পাই, কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দূরের জিনিস ঘরে বসে দেখতে পাই। টেলিভিশন মূলত বেতার যন্ত্রেরই একটি উন্নত সংস্করণ। বেতারে আমরা যা শুনতে পাই টেলিভিশনে শোনার সাথে সাথে তা দেখারও ব্যবস্থা রয়েছে। বেতারের চেয়ে টেলিভিশনের আনন্দ অনেক বেশি। শিক্ষা, বিনোদন ও উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের খবরা-খবর প্রচারের ফলে টেলিভিশন গণসংযোগের একটি অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। উদ্ভাবন : টেলিভিশন উদ্ভাবনের প্রথম পরিকল্পক হিসেবে জার্মান বিজ্ঞানী পল নেপকোর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনিই প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেন। পল নেপকো প্রথম ছবি ও ছায়াকে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় বিভক্ত করার সম্ভাব্যতার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অতঃপর ইংরেজ বিজ্ঞানী বেয়ার্ড টেলিভিশন উদ্ভাবন করেন। ১৯৪৫ সলে টেলিভিশন ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিণত রূপ লাভ করে। টেলিভিশনের নির্মাণ কলাকৌশল অনেকটা চোখের মতো। টেলিভিশনে চোখের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম বৈদ্যুতিক চোখ এবং মস্তিষ্কের জায়গায় বসানো হয়েছে গ্রাহক যন্ত্র। সেই সাথে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলের মাধ্যমে টেলিভিশনের আবিষ্কার সম্পন্ন হয়েছে।

টেলিভিশনের ব্যবহার 

টেলিভিশনের ব্যবহার আজ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমাদের দেশে টেলিভিশনের ব্যবহার পূর্বের তুলনায় বাড়লেও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে তার সুফল এখনো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কেবল ধনী এবং সৌখিন পরিবারেই টেলিভিশনের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তবুও জাতীয় জীবনে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য ।

জাতীয় জীবনের বিভিন্ন দিক 

বিনোদনের পথ ধরে টেলিভিশনের আগমন ঘটলেও আজ তার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত । জাতীয় জীবনের নানা দিক আজ টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিফলিত।

১. প্রচার মাধ্যম 

গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে টেলিভিশন বিশ্বব্যাপী তার সূত্রজাল বিস্তার করে আছে। বিশ্বের প্রতি মুহূর্তের সংবাদ, বিচিত্র জীবন প্রবাহের উত্থান-অগ্রগতি টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষ আজ ঘরে বসে অবগত হচ্ছে। টেলিভিশন বিশ্বমানবকে আজ পরস্পর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি ও সরকারি প্রচার ব্যবস্থাপনায় টেলিভিশন আজ দেশবাসীকে আধুনিক জগতের সাথে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করেছে। সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার জাতীয় অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।

২. শিক্ষার মাধ্যম 

উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম লক্ষ করে আমাদের দেশের টেলিভিশনও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে যুগোপযোগী ভূমিকা রাখছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে আজ মানুষ ঘরে বসে নানা জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা শুনতে পাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা টেলিভিশনের পর্দায় খ্যাতনামা শিক্ষকদের বক্তব্য শুনে পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করছে। আবিষ্কার, চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্প্রসারণে আমাদের টেলিভিশন জাতীয় অগ্রগতিতে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখছে। গণশিক্ষা কার্যক্রম ও নিরক্ষরতা দূরীকরণে টেলিভিশন কার্যকর উপায় অবলম্বন করেছে। এছাড়াও শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ সকলের জন্যে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার জ্ঞানের রাজ্যে সকলের সহজ বিচরণকে অবারিত করেছে।

বিনোদনের মাধ্যম 

বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কর্মক্লান্ত জীবনে ঘরে বসে চিত্ত বিনোদনের এমন উপযোগী উপকরণ আর দ্বিতীয়টি নেই। নাচ, গান, নাটক, সিনেমা প্রভৃতি চাক্ষুষভাবে টেলিভিশনের পর্দায় প্রত্যক্ষ করা যায় । নিতান্ত আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের মানুষও টেলিভিশনের পর্দায় নাচ-গান দেখে নিজেকে আনন্দলোকে উৎসর্গ করতে পারে।

সাংস্কৃতিক জীবন ও টেলিভিশন 

সংস্কৃতি একটি জাতির ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে। তাই কোনো জাতির সাংস্কৃতিক জীবনধারার নানা প্রসঙ্গ প্রচারে টেলিভিশনের গুরুত্ব অপরিসীম। ভিন্ন দেশের জীবনধারা, জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহ, গান-বাজনা, উৎসব, আনন্দ, শিল্প-সাহিত্যের বিচিত্র উপাচার টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়ে জাতির সাংস্কৃতিক জীবনধারায় বিশেষ অবদান রাখতে পারে। জাতিকে ঐতিহ্যমুখী ও সংস্কৃতি মনস্ক করতে হলে এ ব্যাপারে টেলিভিশনকে আমাদের সংস্কৃতির সতীর্থ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

অপকারিতা 

ব্যক্তি তথা জাতীয় জীবনের অগ্রগতি ও উন্নয়নে টেলিভিশনের উপকারিতা অনস্বীকার্য। তবে এ কথা সত্য যে, কোনো জিনিসই নিরবচ্ছিন্ন উপকারী নয়। উপকারী জিনিসেরও কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে। সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে টেলিভিশন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নৈতিকতাহীন সম্প্রচারে অর্থাৎ অশ্লীল, রুচিহীন নাটক, সিনেমা, গান প্রভৃতি প্রচারে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অধঃপতন ঘটবে অনিবার্যভাবে। তাই অনুষ্ঠান সম্প্রচারে অনুষ্ঠান অধ্যক্ষকে সুরুচির পরিচয় দিতে হবে। টেলিভিশনের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের ঝোঁক খুবই প্রবল। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের এক বিরাট অংশকে গ্রাস করছে টেলিভিশন। ফলে অতিরিক্ত টেলিভিশনমুখী হয়ে অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে এবং পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করছে। অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, বিদ্বেষ ছড়ানো প্রভৃতি টেলিভিশনের অপকারী দিক।

উপসংহার 

বিজ্ঞানের অবদান মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ করে তুলছে। টেলিভিশন আধুনিক জনজীবনের একটি অন্যতম বিনোদন ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। কল্যাণকর বিষয়ের উপস্থাপনে টেলিভিশনকে সীমাবদ্ধ রেখে ব্যক্তি তথা জাতীয় জীবনের অগ্রগতি ও উন্নয়নে টেলিভিশনের সুফলকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এ যুগান্তকারী আবিষ্কার কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

রচনাঃ ১৬ই ডিসেম্বর

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ একুশের চেতনা

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ তথ্য প্রযুক্তি

Swopnil