নির্মিতিরচনা

রচনাঃ বিজ্ঞানের অবদান

বিজ্ঞানের অবদান

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বিজ্ঞানের অবদান বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

বিজ্ঞানের অবদান

ভূমিকা 

বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের অবদান মানব কল্যাণে অবিস্মরণীয় সাফল্য বয়ে এনেছে। বিজ্ঞানের বহু বিচিত্র প্রয়োগে মানুষ তার অস্তিত্বের প্রতিকূলতাকে দূর করে জীবনকে সুখকর করে তুলেছে। বিজ্ঞান মানুষের ঐকান্তিক সাধনার সুফল। বিজ্ঞান মানুষের সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের বিস্ময়কর মহামন্ত্র। জীবনের সর্বক্ষেত্র আজ বিজ্ঞানের অবদানে সমুজ্জ্বল। জীবন আর বিজ্ঞান আজ একসূত্রে গাঁথা । মহাবিশ্বের সর্বত্রই আজ বিজ্ঞানের দুর্নিবার জয়যাত্রা।

বিজ্ঞান কথাটির তাৎপর্য 

বর্তমান সভ্যতা ও সমৃদ্ধি মানুষের দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ইতিহাস। প্রকৃতির সীমাহীন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষ যেদিন আপন প্রতিভাবলে প্রকৃতিকে জয় করার কৌশল আয়ত্ত করেছে, সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের পথ-পরিক্রমণ। মানুষ চিরকালই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে প্রশস্ত পরিসরে নিজেকে প্রকাশ করতে ব্যাকুল। এ প্রকাশের জন্যে প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞানের। যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ জ্ঞানের সন্ধান দেয় তা-ই ‘বিজ্ঞান’। মানুষ তার সমস্যা ও কৌতূহল নিবৃত্তির জন্যে, পরম সত্যে উপনীত হওয়ার জন্যে এতিনিয়তই এ বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞানের দারস্থ হয়েছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে কিভাবে মানব সভ্যতার কল্যাণ সাধন করা যায়—সেই কল্যাণময় সত্যের আবিষ্কারে মানুষ সর্বক্ষণই সচেষ্ট ।

বিজ্ঞানের আবিষ্কার 

মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার সীমাহীন এবং বিস্ময়কর। সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কল্যাণকর আবিষ্কার জীবনকে নানাভাবে সুখ ও আনন্দে ভরে তুলেছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার নানাভাবে কাজে লাগছে ৷ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের বহুমুখী এবং সুদূর প্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। পথে-ঘাটে, অফিসে-আদালতে, অনুষ্ঠানে-আমোদে, সংবাদে-সংলাপে সর্বত্রই বিজ্ঞান পরিব্যাপ্ত। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অপরিমিত সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। জাগরণ থেকে শুরু করে নিদ্রা গ্রহণ এবং পুনর্জাগরণ পর্যন্ত সারাদিনের কর্মপ্রবাহ বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । টুথপেস্ট, ব্রাশ, স্টোভ, হিটার, বৈদ্যুতিক পাখা, বিজলী বাতি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, তেল, সাবান, স্নো, পাউডার, পারফিউম, আয়না, চিরুনি, ইস্ত্রি, রেজর, ব্লেড ইত্যাদি ছাড়া দৈনন্দিন জীবন যাপনের কথা মোটেই ভাবা যায় না ৷

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান 

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে এনেছে। ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার দৈনন্দিন খাদ্যের চাহিদা পূরণসহ কল-কারখানায় কাঁচামালের যোগানে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক চাষ পদ্ধতি উৎপাদন হারকে দারুণভাবে বৃদ্ধি করেছে। ট্রাকটর, কীটনাশক, সার, উচ্চ ফলনশীল শস্যবীজ প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে মানুষ আজ অধিক উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে জলসেচে পাওয়ার পাম্প, অগভীর নলকূপ প্রভৃতি কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। বিজ্ঞানের অবদানে শুষ্ক মরুর বুকও আজ শস্য শ্যামল হয়ে উঠেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান 

ক্রমশই ছোটো হয়ে আসছে পৃথিবী’ ––তবে আয়তনে নয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্যে । বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ববাসী আজ একই গ্রামের বাসিন্দার মতো বসবাস করছে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টেলেক্স, ফ্যাক্স, ইমেল প্রভৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। বাস, ট্রাম, মোটরগাড়ি, লঞ্চ, উড়োজাহাজে করে মানুষ পাড়ি দিচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। রকেটে করে মানুষ চড়ে বেড়াচ্ছে মহাকাশে। ডুবো-জাহাজে মানুষ ডুবছে সমুদ্রের গভীর অতলে। সংবাদপত্র প্রত্যহ সকালে দেশ-বিদেশের খবর নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমেও আমরা ঘরে বসে পেয়ে থাকি বিভিন্ন দেশের সংবাদ ও শিক্ষা সংস্কৃতির পরিচয়। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান দূরকে আমাদের সন্নিকটে এনে দিয়েছে।

শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান 

শিল্প ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে এনেছে। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে বড় বড় শিল্প-কারখানা স্থাপন সম্ভব হয়েছে। কেবল একটি সুইচের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। অল্প সময়ে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক উৎপাদন। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের মূলে ছিল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা শিল্প-উন্নয়নেরই ফলশ্রুতি। এতে রয়েছে বিজ্ঞানের অপরিসীম অবদান ।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান 

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অভূতপূর্ব। একদিন মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হতো। কিন্তু আজ দুরারোগ্য কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়েও মানুষ চিকিৎসার সাফল্যে সুস্থ জীবন ফিরে পাচ্ছে। মৃত্যুকে মানুষ জয় করতে না পারলেও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতিতে চিকিৎসারক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষ্মা প্রভৃতি রোগে এখন আর মানুষকে অকালে জীবন দিতে হয় না। উন্নতমানের ওষুধ, এক্সরে, আলট্রাভায়োলেটর, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, অস্ত্রোপাচার ব্যবস্থা প্রভৃতি চিকিৎসাক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংযোজন, কর্ণিয়া সংযোজন, কিডনী সংযোজন, প্লাস্টিক সার্জারী প্রভৃতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে । 

ডা. বারনার্ড প্রবর্তিত ‘হৃদয়-রোপণ’ অর্থাৎ একজনের অকেজো হৃৎপিণ্ড তুলে ফেলে সেক্ষেত্রে সদ্যমৃত অপর একজনের হৃৎপিণ্ড স্থাপন চিকিৎসা জগতের আরেক বিস্ময়কর সাফল্য ।

বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান 

বিজ্ঞান আজ বহুমুখী সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান প্রশংসনীয়। রেডিও, টেলিভিশন, ভি. সি. আর, চলচ্চিত্র প্রভৃতি যন্ত্রক্লিষ্ট মানুষের একঘেঁয়ে জীবনে এনে দিয়েছে অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দ। সুরে, গানে, নাটকে, নাচে বিজ্ঞানের বিনোদন-যন্ত্র ভরে রাখছে মানুষের প্রাণ। কর্মব্যস্ত জীবনের ক্ষণিক অবকাশে রেডিও, টেলিভিশন, ভি. সি. আর, চলচ্চিত্র প্রভৃতি আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম উপকরণ ।

বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্তক রূপ 

বিজ্ঞানের কল্যাণমুখী আবিষ্কারে মানুষ ভোগ করছে অপরিমেয় সুখ ও আনন্দ। বিজ্ঞানের কল্যাণকর আবিষ্কারের বিপরীতে রয়েছে এর সর্বনাশা ধ্বংসান্তক রূপ। বিজ্ঞানের কল্যাণে একদিকে যেমন আনন্দ ধ্বনিত, অন্যদিকে তেমনি অভিশাপ প্রতিফলিত। বর্তমান শতাব্দীতে সংঘটিত বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা এখনো মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে। হিরোশিমা, নাগাসাকির নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ মানুষের আদিম প্রবৃত্তির বর্বরতাকেও অতিক্রম করেছে। বিজ্ঞানের উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ আজ তৈরি করছে আণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, জীবাণু বোমা এবং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র। বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক শক্তির কাছে মানুষ আজ বিভীষিকাকম্পিত। কিন্তু এ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্যে বিজ্ঞান নিজে দায়ী নয়; দায়ী মানুষের স্বার্থান্বেষী আধিপত্যবাদী মানসিকতা ।

উপসংহার 

বিজ্ঞান অমিত শক্তির উৎস এবং অসীম সম্ভাবনায় চঞ্চল। বিজ্ঞানের গর্বিত অগ্রযাত্রার অব্যাহত প্রবাহ যেন চিরদিন মানুষের কল্যাণকে স্পর্শ করে বিকশিত হয়। বিজ্ঞান যেন প্রতিদিন মানুষের জন্যে বয়ে আনে অযুত সম্ভাবনার সুপ্রভাত। মানুষের মানবিক মূলবোধ যেন বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায় জয়যাত্রার পথে। বিজ্ঞানের অবদানে সুনিশ্চিত হোক মানুষের সর্বময় কল্যাণ ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

রচনাঃ বিদ্যুৎ

Swopnil

রচনাঃ গরু

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির, লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির

Swopnil