রচনানির্মিতি

রচনাঃ কম্পিউটার

আধুনিক জীবনে কম্পিউটার/কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আধুনিক জীবনে কম্পিউটার/কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা/কম্পিউটার বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আধুনিক জীবনে কম্পিউটার / কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা / কম্পিউটার

ভূমিকা 

বর্তমান শতাব্দী বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় অপরিসীম সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। মানুষ আজ আর প্রকৃতির হাতের ক্রীড়নক নয়। প্রকৃতি এখন মানুষের হাতের মুঠোয় বন্দি। চারদিকে আজ যন্ত্রযুগের প্রাধান্য। যন্ত্রশক্তির বিশালত্বকে মানুষ আজ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে ৷ প্রতিটি যুগেই বিজ্ঞানের কোনো না কোনো আবিষ্কার পৃথিবীকে ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে । কিন্তু বিংশ শতাব্দীর যে আবিষ্কারটি মানবকল্যাণে বিস্ময়কর সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তা হলো ‘কম্পিউটার’। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার মানুষের বহু বিচিত্র দৈনন্দিন কার্যক্রমের নিত্যসঙ্গী। যেখানে জটিলতা ও সমস্যা— তা সহজে সমাধান করে দেওয়ার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে কম্পিউটার ।

কম্পিউটার কী ?

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। এ যন্ত্রটি অসংখ্য উপাত্ত গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদানে সক্ষম। অর্থাৎ কম্পিউটার তথ্য গ্রহণ, তথ্য নির্দেশ ও সংরক্ষণ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে অগণিত জটিল সমস্যার সমাধান প্রদান করে থাকে। ‘কম্পিউটার’ একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ ‘গণনা’ । বর্তমানে কম্পিউটার শুধু গণনা বা হিসাবের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি —তার কার্যক্রম বহু বিচিত্র বিষয়ে বিস্তার লাভ করেছে। গাণিতিক হিসেব ছাড়াও তথ্যাদির বিশ্লেষণ, তুলনা, যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজে কম্পিউটারের রয়েছে এক বিস্ময়কর ক্ষমতা ।

See also  রচনাঃ গরু

আবিষ্কার 

ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ আধুনিক কম্পিউটারের জনক। তিনি কম্পিউটার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রথম এনালিটিক্যাল ও ডিফারেন্স ইঞ্জিন নামে দু’টি কম্পিউটার আবিষ্কার করেন। ব্যাবেজের আগে ১৬৪২ সালে গণিতবিদ ব্লেইলি প্যাসকেল যোগ-বিয়োগে সক্ষম একটি গণনা যন্ত্র সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেন। ১৬৭১ সালে গডফ্রাইড লেবনিজ উদ্ভাবন করেন গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর। ১৮১২ সালে চার্লস ব্যাবেজ প্রথম সর্বাধুনিক ক্যালকুলেটরের মূলনীতির পরিকল্পনা করেন বলে তার নামের সাথে কম্পিউটার উদ্ভাবনের বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য লাভ করেছে। ১৯৪৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আই.বি.এম. কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করে। ১৯৫৭ সাল থেকে কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের পর থেকে কম্পিউটার জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানীর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও সংযোজনে কম্পিউটার ধীরে ধীরে বর্তমানের বিস্ময়কর আধুনিকতায় সুসজ্জিত হয়েছে। তবে এখানেই এর শেষ নয়— মানুষের প্রয়োজনীয়তার সর্বস্তরে কম্পিউটারের সুফল কার্যকারিতা পৌঁছে দেয়ার জন্যে গবেষণার ধারাটি প্রবলভাবে সক্রিয় রয়েছে। 

কম্পিউটারের গঠন কাঠামো 

কম্পিউটারের গঠন বেশ জটিল এবং বিস্ময়কর। এর রয়েছে প্রধান দুটি দিক। প্রথমত এর যান্ত্রিক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয়ত এর প্রোগ্রাম সরঞ্জাম। যান্ত্রিক সরঞ্জামকে বলা হয় হার্ডওয়্যার এবং প্রোগ্রাম সরঞ্জামকে বলা হয় সফ্টওয়্যার । হার্ডওয়্যারের মধ্যে থাকে তথ্য সংরক্ষণ স্মৃতি, গাণিতিক বা যুক্তি অংশ, তথ্যাদি সংগ্রহের জন্যে ব্যবহৃত প্রবেশ মুখ অংশ এবং ফলাফল লেখার জন্যে ব্যবহৃত বহির্মুখ অংশ এবং নিয়ন্ত্রণ বোতাম। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অর্থাৎ যান্ত্রিক সরঞ্জাম দেখা এবং স্পর্শযোগ্য কিন্তু প্রোগ্রামের প্রয়োগ ছাড়া এসব সরঞ্জামের কোনো কার্যকারিতা নেই। কম্পিউটারের যান্ত্রিক সরঞ্জাম মূলত একটি সুপ্ত কর্মক্ষমতার ধারক—একে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্যে প্রয়োজন প্রোগ্রামের। প্রোগ্রাম আবার প্রধান দুটি স্তরে বিভক্ত। 

এক. ব্যবহারিক প্রোগ্রাম, দুই. পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম। 

সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে লিখিত প্রোগ্রাম ব্যবহারিক প্রোগ্রাম নামে পরিচিত। পক্ষান্তরে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে প্রোগ্রামটি কাজের সমন্বয় সাধন করে তাকে পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম বলে। পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম উপরন্তু ব্যবহারিক প্রোগ্রাম নির্বাহের জন্যে কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতাকে সার্থকভাবে নিয়ন্ত্রণ, করে। সুতরাং যান্ত্রিক সরঞ্জাম এবং প্রোগ্রাম সামগ্রীর সার্থক সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি সার্থক কম্পিউটার পদ্ধতি । 

See also  পত্রঃ কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা করে একটি পত্র লেখ

প্রকারভেদ 

অভ্যন্তরীণ গঠন, আকৃতি এবং কার্যসম্পাদনের গতি-প্রকৃতি বিচারে কম্পিউটার নানা শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন— সুপার কম্পিউটার, মেইনিফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার, মাইক্রো কম্পিউটার ইত্যাদি। তবে বাহ্যিক আকৃতি এবং গাঠনিক দিক থেকে কিছু পার্থক্য পরিদৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মূলনীতি বা কার্যকারিতায় এদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই ।

আধুনিক সভ্যতা ও কম্পিউটার 

আধুনিক সভ্যতায় কম্পিউটারের কল্যাণমুখী অবদান বলে শেষ করার মতো নয়। কম্পিউটার আজ কেবল গণকযন্ত্র নয়— তা আজ গণনার গণ্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে এসেছে বহুমুখী কার্যক্রমে। কম্পিউটারের সফল ব্যবহার আজ বহুবিচিত্র। জীবনের অনেক ক্ষেত্রই আজ কম্পিউটারের সফল অবদানে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেছে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা- বাণিজ্য, হাসপাতাল, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার সাথে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগীর রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আজ স্বল্প সময়ে সঠিক তথ্য পরিবেশন করছে। পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার আজ নতুন বিপ্লব সাধন করেছে। কম্পিউটারের সাহায্যে খেলাধুলার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসাব, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। গবেষণারক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ভূমিকা অপরিসীম। আশ্চর্যের বিষয় যে, কম্পিউটার আজ মানুষের কণ্ঠ বোঝে এবং সনাক্ত করতে পারে। ভাস্কর্য খোদাই, বইয়ের তৈরি প্রভৃতি কাজও আজ কম্পিউটারের দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ, ডাকব্যবস্থা, গবেষণা ক্ষেত্র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক গবেষণা, খনি, শিলা-কারখানা, আণবিক গবেষণা প্রভৃতি শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে সফলতার সাথে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। অনুবাদের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আজ সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানে কম্পিউটারের ব্যবহার আজ অপরিহার্য সাফল্যের সূচনা করেছে। মোটকথা মানুষের চিন্তাধারা পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কম্পিউটার বৈপ্লবিক অবদান রাখছে। সুরের মূর্ছনা সৃষ্টিতেও আজ কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজও কম্পিউটার দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে।

ক্রমোন্নতি 

১৯৪৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আবিষ্কৃত হয় ‘ইনিয়াক’ নামক পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার। বর্তমানে যেসব কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে তা ইনিয়াকেরই উন্নততর রূপ। প্রথম পর্যায়ে জেনারেশন কম্পিউটার অতঃপর নিউ জেনারেশন কম্পিউটারের প্রচলন হয়েছে । বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৪০-আই. বি. এম, ইউনিভ্যাক-১, সিস্টেম-৩৬০, আই. সি. এল-২৯০০, এডস্যক-৪৩০০ ব্যবহৃত হচ্ছে। সুপার কম্পিউটার ক্রে-১, ক্রে-২-এর ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

See also  রচনাঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু

প্রতিকূল দিক 

সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কম্পিউটার কল্যাণকর ভূমিকা রাখলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর প্রতিকূল প্রভাবও লক্ষণীয় কম্পিউটারের বহুল ব্যবহারের ফলে উন্নত দেশসমূহে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু শ্রমিক, কর্মচারী কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেকার শ্রমিক-কর্মচারীদের দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হলে এ পরিস্থিতি দিন দিন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। অতিরিক্ত যন্ত্র নির্ভরতা মানবিক মূল্যবোধকে দিন দিন খর্ব করছে।

উপসংহার 

কম্পিউটার আধুনিক যুগের এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন। মানুষ স্মরণাতীতকাল থেকে মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তিকে ব্যবহার করে যেসব কাজ সম্পন্ন করে আসছে আজ সেই কাজ সম্পন্ন হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। মানবকল্যাণে যন্ত্র আজ মানুষের স্থান অধিকার করেছে। কম্পিউটারের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব থাকলেও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার যুগে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

Swopnil

রচনাঃ বৃক্ষরোপণ অভিযান

Swopnil

আমাদের জাতীয় পতাকা বাংলা রচনা (PDF)

Swopnil

Leave a Comment