আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “গরু বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
গরু
ভূমিকা
মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় পশুর ভূমিকা অন্যতম। মানুষ যেদিন থেকে বন্য পশুকে পোষ মানাতে শিখলো সেদিন থেকে শুরু হলো সভ্যতার এক নবযাত্রা। কোন বন্যপ্রাণীকে মানুষ প্রথম পোষ মানিয়েছিল তা আজ নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে শান্ত নিরীহ গরুকেই মানুষ প্রথমে গৃহে স্থান দিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
আকৃতি
গরু গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। গরুর দুটি শিং, দুটি চোখ, দুটি কান এবং একটি লম্বা লেজ আছে। লেজের শেষ প্রান্তে আছে একগুচ্ছ চুল। গরু লেজ দ্বারা মশা, মাছি ইত্যাদি তাড়ায়। গরু শিং দ্বারা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। গরুর সারা শরীর ঘন লোমে আবৃত। গরুর পায়ের অগ্রভাগে শক্ত খুর বিদ্যমান। প্রতিটি খুর দু ভাগে বিভক্ত। গরুর মুখমণ্ডল লম্বা আকৃতির। গরুর নিচের চোয়ালে একপাটি দাঁত আছে কিন্তু ওপরের চোয়ালে কোনো দাঁত নেই। গরুর গলদেশে কোমল লোমাবৃত একপ্রস্ত মাংসল চামড়া ঝুলতে থাকে। এটি ‘গলকম্বল’ নামে অভিহিত। পুরুষ জাতীয় গরু ষাঁড় এবং বলদ এ দু’ শ্রেণিতে বিভক্ত। স্ত্রী জাতীয় গরুকে গাভি বা গাই বলে। গরুর বাচ্চা বাছুর নামে পরিচিত। ষাঁড় গরুর পিঠের ওপর রয়েছে উন্নত সুদৃশ্য আকর্ষণীয় কুঁজ। বয়স এবং জাতভেদে গরু নানা আকৃতির হয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক গরু উচ্চতায় তিন থেকে চার হাত এবং লম্বায় চার থেকে পাঁচ হাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্ণগত ভেদও গরুর মধ্যে বিদ্যমান। গরু সাধারণত সাদা, কালো, লাল, পিঙ্গল এবং মিশ্রবর্ণের হয়ে থাকে ।
প্রকৃতি
গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু অতিশয় শান্ত এবং নিরীহ প্রাণী। গরু সহজেই পোষ মানে। এটি সহজেই কাউকে আঘাত করে না। ষাঁড় গরু উগ্র এবং তেজি স্বভাবের হয়ে থাকে। তবে এটিও তার মনিব বা পরিচর্যাকারীর আনুগত্যশীল। গরুর আয়ুষ্কাল পনেরো থেকে বিশ বছর। স্ত্রী-গরু প্রতি বছর অথবা দু’ বছর অন্তর অন্তর বাচ্চা প্রসব করে থাকে। গরুর গর্ভধারণকাল সাধারণত দশ মাস । বাচ্চা প্রসবের পর গাভির স্বভাবে কিছুটা উগ্রতা পরিলক্ষিত হয়। নবজাতক বাছুরকে কেউ ধরতে আসলে মা গাভিটি তাকে তেড়ে আসে। বাচ্চাকে সে সবসময় কাছে কাছে আগলে রাখতে চায়। বাচ্চা দৃষ্টির আড়াল হলে মা গাভিটি ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ করে ডাকতে থাকে। গাভি তার বাচ্চার জন্য অতিশয় স্নেহপ্রবণ। গরুর চোখ দুটি বেশ মায়াময়, ডাগর এবং স্থির। বাচ্চার মৃত্যু বা দঃখ-কষ্টে গরুর চোখ থেকে পানি পড়তে দেখা যায়।
প্রাপ্তিস্থান
পৃথিবীর সব দেশেই গরু দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গরুর সংখ্যা প্রচুর। বাংলাদেশের গরু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গরুর তুলনায় ক্ষুদ্রাকার এবং কৃশকায় । পাকিস্তানের সিন্ধি গরু এবং ইউরোপ-আমেরিকার গরু বৃহদাকার এবং বলিষ্ঠ।
বন্য গরু
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর বন্য গরু দেখতে পাওয়া যায়। বন্য গরু খুবই উগ্র এবং ভয়ংকর প্রকৃতির। গভীর জঙ্গল এবং পূর্বতের বিভিন্ন স্থানে বন্য গরু দেখতে পাওয়া যায়। বন্য গরুর মধ্যে ‘নীল গাই’ প্রসিদ্ধ ।
খাদ্য
গরু পাতা, ভুসি, কুঁড়া, ভাতের মাড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। গাই গরুর দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্যে দুগ্ধবতী গাভির খাদ্য হিসেবে খৈল, কলাই, জাউ ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। খাদ্য গ্রহণের সময় গরু প্রথমে সব খাবার দ্রুত গিলে ফেলে। অতঃপর বিশ্রামের সময় গিলিত খাবার পাকস্থলী থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে মুখে এনে পুনরায় ভালো করে চিবাতে থাকে। একে ‘রোমন্থন’ বা ‘জাবর কাটা’ বলে ।
উপকারিতা
গৃহপালিত জন্তুর মধ্যে উপকারিতার দিক থেকে গরুর অবস্থান শীর্ষে। গরু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কী পরিমাণ কাজে লাগে তা বলে শেষ করা যায় না। গরুর দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। শিশু, বৃদ্ধ, রোগী সকলের জন্যই দুধ উপাদেয়। গরুর দুধ আদর্শ খাদ্য। এতে সব ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান। গরুর দুধ থেকে ঘি, মাখন, ছানা ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া গরুর দুধ দ্বারা মিষ্টি, দধি, ক্ষীর, পিঠা, পায়েস প্রভৃতি মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। গরুর গোবর উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহৃত হয়। শুকনো গোবরের ঘুঁটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গরুর চামড়া খুবই মূল্যবান। এর চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ, স্যুটকেস, বেল্ট প্রভৃতি তৈরি হয়। গরুর খুর, শিং ও হাড় দ্বারা শিরিস, বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি হয়। গরুর হাড় চূর্ণ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে লাঙ্গল টানার কাজে গরুর ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। ষাঁড় এবং বলদ গরু চাষাবাদের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। গাড়ি টানার কাজেও ষাঁড় এবং বলদ-গরুর ব্যবহার দেখা। গরুর মাংস একটি উপাদেয় আমিষ জাতীয় খাদ্য। তবে মুসলমান ব্যতীত হিন্দু এবং অন্যান্য জাতের অনেকেই গরুর মাংস খায় না। হিন্দুরা গরুকে দেবতার মতো যত্ন ও পরিচর্যা করে থাকে ।
গরুর যত্ন
গরু নানাভাবে মানুষের উপকার করে থাকে। তাই গরুর প্রতি সকলের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত পরিচর্যা ও যত্নের অভাবে আমাদের দেশের অধিকাংশ গরুই কৃশকায় ও দুর্বল। যার ফলে কৃষিকাজে, গাড়ি টানা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গরু তার পরিপূর্ণ উদ্যম নিয়ে কাজ করতে পারে না। এতে আমাদের দেশে উৎপাদন ও আয় অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রতিনিয়তই বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সুষম খাদ্য এবং যত্নের অভাবে দুগ্ধবতী গাভির দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আমাদের দেশে শিশু ও বৃদ্ধসহ প্রায় সকলেই অপুষ্টিতে ভুগছে। তাই পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গরুর প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
বিদেশে গরুর যত্ন
আমাদের দেশের তুলনায় উন্নত দেশসমূহে গরুর প্রতি বেশ যত্ন নেওয়া হয়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে গরুর খাদ্য ও পরিচর্যায় বিশেষ যত্ন ও সতকর্তা অবলম্বন করা হয়। ফলে এসব দেশে উন্নত এবং উৎকৃষ্ট শ্রেণির গরুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দেশ টিনজাত গরুর দুধ বিক্রি করে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
উপসংহার
গরু গৃহপালিত জন্তুর মধ্যে সবচেয়ে উপকারী। গরু আমাদের জাতীয় সম্পদ। সুজলা-সুফলা বাংলাদেশে নানা কারণে গরুর চারণ ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে গো-সম্পদ উন্নয়নে চারণভূমির সংকোচন খুবই ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। যত্ন এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আমাদের দেশের গো-জাতি দারুণভাবে উদাসীনতার ও অবহেলার শিকার ! তাই জাতীয় উন্নয়নে এবং পশুর প্রতি যথাযথ আচরণে আমাদেরকে সচেতন ও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।