রচনানির্মিতিবাংলা

রচনাঃ বাংলাদেশের পাখি

Bangladesher-pakhi

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বাংলাদেশের পাখি বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

বাংলাদেশের পাখি

ভূমিকা 

প্রকৃতির অপরূপ লীলা বৈচিত্র্যে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের চিত্রল পটভূমি। এদেশের সবুজ নিসর্গ বহতা নদী, বিল- বাঁওর, পাখির বিচরণ ও কলকাকলিতে প্রতিনিয়তই মুখর। পাখির গান শুনে প্রত্যুষে সকলের ঘুম ভাঙ্গে। পাখির গানে, উড্ডীন সৌন্দর্যে বয়ে যায় বেলা। বাংলাদেশে মাঠে-ঘাটে,উঠোনে-অঙ্গনে, ডোবা-নালা, জঙ্গলে সর্বত্রই অসংখ্য পাখির ভিড়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা অনুষঙ্গে পাখির উপস্থিতি এক অকৃত্রিম আনন্দে আমাদেরকে মুগ্ধ করে রাখে।

বিভিন্ন শ্রেণির পাখি

বাংলাদেশের প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অনুকূল পরিবেশ পাখির বিচরণ ও জীবনযাপনের এক উপযোগী আশ্রয়। খাদ্য এবং আশ্রয়ের এ বিশ্বস্ত পরিবেশ আদিকাল থেকেই তৈরি হয়ে আছে বাংলাদেশের ছায়াশীতল বুকে । তাই নানা জাতের পাখির অবাধ বিচরণক্ষেত্র এ বাংলাদেশ। কাক, কোকিল, দোয়েল, ময়না, টিয়া, শালিক, চড়ই, বক, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, ঘুঘু, ডাহুক, চিল, বাজ, সারস, বাবুই, বুলবুলি প্রভৃতি পাখি সবুজ সুন্দর বাংলাদেশকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। বিভিন্ন পাখির পরিচয় :

কাক 

কাক বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত পাখি। রাত পোহাবার সঙ্গে সঙ্গেই সে কা কা করে বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের অন্বেষণে । বাংলাদেশের সর্বত্র কাক দেখতে পাওয়া যায়। কাকের রঙ কালো। এর কণ্ঠস্বর কর্কশ ও বিরক্তিকর। কাক অতিশয় চালাক এবং ধূর্ত। সুযোগ পেলেই সে মাছ, মাংস, খাদ্য সামগ্রী, সাবান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চুরি করে মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিতে এরা খুবই পারদর্শী। খাদ্যের ব্যাপারে কাকের কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই । সে ভালো, মন্দ, বাসি, পচা, নোংরা, দুর্গন্ধ খাদ্যও পরম তৃপ্তির সাথে ভক্ষণ করে থাকে। মাংস, পোকা-মাকড় প্রভৃতি কাকের প্রিয় খাদ্য। কাককে কেউ পছন্দ না করলেও সে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পরম উপকার করে থাকে। সে পচা জিনিস ও ক্ষতিকর পোকা মাকড় খেয়ে পরিবেশকে সুন্দর ও স্বচ্ছ করে তোলে । কাক দেখতে কুশ্রী এবং চতুর স্বভাবের। তাছাড়া কাক ভীষণ একতাবদ্ধ পাখি।

কোকিল

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয় কোকিলের ললিত গানে। কোকিলকে তাই ‘বসন্তের দূত’ বলা হয় । নতুন পাতার ঘনিষ্ঠ আড়াল থেকে উদাস বসন্তে ভেসে আসে কোকিলের সুমিষ্ট গান। বসন্ত প্রকৃতিকে কোকিল তার মধুময় কণ্ঠস্বরে মুখর করে তোলে । কোকিলের গায়ের রঙ কালো। কোকিল বাসা তৈরি করতে এবং ডিম ফোটাতে পারে না। তাই সে কাকের বাসায় ডিম পারে। কাক চালাক হলেও কোকিলের ঐ চালাকি সে ধরতে পারে না। কোকিলের ডিমকে নিজের ডিম ভেবে সে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। পরে পরিচয় পেয়ে তাড়িয়ে দেয়। কোকিল পোকা-মাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। বসন্তের পাখি কোকিল আমাদের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির এক অপরূপ সংযোজন ।

See also   রচনাঃ শিক্ষাই নারী মুক্তির পথ

দোয়েল 

অসংখ্য পাখির বিচরণ ক্ষেত্র আমাদের এ রূপসি বাংলাদেশ। পক্ষিকুলের মধ্যে দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। দোয়েল আকারে ছোটো। সে খুব অস্থির এবং চঞ্চল। পুরুষ এবং স্ত্রী দোয়েলের মধ্যে পুরুষ দোয়েলের গায়ের রঙ চক্‌চকে কালো । দোয়েলের গায়ে লম্বাটে সাদা দাগ আছে। দোয়েলের লেজ বেশ লম্বা এবং উন্নত। দোয়েলের শিষ খুব মধুর। শস্যকণা এবং ছোটো ছোটো পোকা-মাকড় খেয়ে এরা জীবন ধারণ করে। গাছের কোটরে বা ফাটলে এরা খড়কুটো জমা করে বাসা তৈরি করে। এরা উঠোনের কোণায়, বৈঠকখানায় বা ঝোপঝাড়ে বাস করে। দোয়েলের সৌন্দর্য ও সুমিষ্টি গান সকলকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দোয়েল পাখি দেখা যায়। বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দোয়েল আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের এক নয়নমুগ্ধ জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

ময়না 

ময়না আমাদের খুব প্রিয় কথক পাখি’। পাখিদের মধ্যে ময়না মানুষের মতো কথা বলতে পারে। পোষা ময়না চারপাশের মানুষের কথা শুনে কিছু সহজ কথা সে আয়ত্ত করে নেয়। অথবা মানুষের শেখানো ভাষায় সে সহজেই কথা বলতে পারে। ময়না স্বভাবত পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। ময়না ছোট্ট সুন্দর পাখি। কালো পাখিটির গলার হলুদ রঙের মালা এর সৌন্দর্যকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে । ময়না পাখির মায়াভরা চোখ প্রখর বুদ্ধিতে উজ্জ্বল।

টিয়া 

টিয়া পাখির সৌন্দর্যে সকলেই মুগ্ধ। লাল, বাঁকানো ঠোঁটের সবুজ রঙের এ পাখিটি মানুষের কণ্ঠকে সহজেই অনুকরণ করতে পারে। অনেকেই শখ করে টিয়া পাখি পোষে। টিয়া পাখি অতিশয় স্বাধীনতা প্রিয়। অনেক সময় এরা শিকলের বাঁধন কেটে বনের মুক্ত জীবনে ফিরে যায়। ফলমূল এদের প্রিয় খাবার ।

শালিক 

শালিক আমাদের অতি পরিচিত পাখি। খয়েরি রং, হলুদ ঠোঁট। আমাদের উঠোনে অঙ্গনে এরা সবসময়ই ঘুরে বেড়ায়। সাদা লোমের নিচে শালিকের হলুদ পা দেখতে খুবই সুন্দর। শালিকের আরো একটি প্রজাতি রয়েছে। এরা দেখতে ধূসর ছাই রঙের। ভাত, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ শালিকের প্রিয় খাদ্য।

See also  ভাবসম্প্রসারণঃ কত বড় আমি' কহে নকল হীরাটি, তাই তো সন্দেহ করি, ' নহ ঠিক খাঁটি '

চড়ুই 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চড়ুই একটি অতি পরিচিত পাখি। ঘরের ছাদ, শণ বা খড়ের ঘরের কোণা-কোণিতে এরা সুন্দর করে বাসা বেঁধে বসবাস করে। ছোট্ট এ পাখিটি বেশ চঞ্চল স্বভাবের। সারাদিন ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ ওড়তেই থাকে। ধান, চাল, গম এদের প্রিয় খাদ্য। এ ছাড়া নানা ধরনের পোকা-মাকড় কীটপতঙ্গও এরা খেয়ে থাকে ।

বাবুই  

চড়ুইয়ের মতো ছোট্ট সুন্দর আরেক ধরনের পাখি রয়েছে। এর নাম বাবুই পাখি। চড়ুইয়ের মতো এরা ঘরের কোণে বাসা বাঁধে না। এরা বাসা নির্মাণ করে স্বভাবত খেজুর ও তাল গাছে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে অতি চমৎকার। বাসা বুননের সূক্ষ্ম- কৌশলের জন্যে বাবুইকে শিল্পী পাখিও বলা হয়। ধান এবং চাল এদের প্রিয় খাদ্য ।

সারস-বক-মাছরাঙা 

সারস-বক-মাছরাঙা জলাশয়ের পাখি। জলের ধারে এদের বসবাস। সারস লম্বা ঠোঁট এবং লম্বা পা-বিশিষ্ট । ধানের ক্ষেতে এরা বাস করতে ভালোবাসে। গায়ের রঙ সাদা। মাছ এদের প্রিয় খাবার। নদী-নালা, খাল-বিল, দিঘি-ডোবা, জলাশয়ের বাংলাদেশে বক অতি পরিচিত পাখি। শুভ্র সুন্দর ডানা। দল বেঁধে বক যখন আকাশে ওড়ে তখন সৃষ্টি হয় এক অপরূপ দৃশ্য। জলাশয়ে বকের মাছ শিকার সকলেরই দৃষ্টি কারে। বক পাখি প্রধানত সাদাবক এবং কানি বক এ দু’ শ্রেণিতে বিভক্ত। বিলের হাঁটু পানিতে এক পায় দাঁড়িয়ে সাদা বক মাছ শিকার করে। কানি বক ডোবার ধারে, কচুরিপানা বা দলদামের ওপরে বসে মাছ শিকার করে। ডিম পাড়ার সময় হলে রক পাখি গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে। এ সময় বকের পাখা ভারি হয়ে ওঠে এবং ওড়লে পত্পত্ শব্দ হয়।

মাছরাঙা এক ধরনের ছোট্ট সুন্দর রঙিন পাখি। লম্বা লাল ঠোঁট। মাছ যে মাছরাঙার একমাত্র প্রিয় খাবার তা তার ‘মাছরাঙা’ নাম থেকেই অনুধাবন করা যায়। জলাশয়ের ধারে গাছের ডালে এদের বাস। এদের মাছ শিকারের প্রক্রিয়া খুবই আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন । দশ-পনেরো ফুট উঁচু থেকে এরা ঝুপ করে মাছের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং ঠোঁটের সাহায্যে মাছকে ধরে ফেলে। মাছ- শিকারি পাখির মধ্যে মাছরাঙা একটি অতি পরিচিত পাখি।

চিল 

চিল একটি বৃহদাকার পাখি। খয়েরি ডানা, ধূসর বুক। দৃষ্টি অতিশয় তীক্ষ্ণ। উঁচু আকাশে ওড়ে বেড়ায়। দৃষ্টি তার সজাগ থাকে শিকারের সন্ধানে। মুরগির বাচ্চা দেখতে পেলেই সে ছুঁ মেরে ধারালো নখের সাহায্যে ধরে নিয়ে পালিয়ে যায় ।

See also  রচনাঃ আর্সেনিক দূষণ

বাজপাখি 

বাজ পাখিও একটি বড় আকৃতির পাখি। এদের দৃষ্টিও অতিশয় তীক্ষ্ণ। সাপ, ব্যাঙ, মুরগি এর্দের শিকারের লক্ষ্য । 

কাঠঠোকরা 

বাংলাদেশের পক্ষিকুলের মধ্যে কাঠঠোকরা পাখিটিও দেখতে বেশ সুন্দর। এর রয়েছে লম্বা শক্ত ঠোঁট। এ ঠোঁট দ্বারা সে গাছের কাণ্ড ঠুকরিয়ে গর্ত তৈরি করে। কাঠঠোকরা যখন গাছে ঠোঁট দ্বারা আঘাত করে তখন কম্পনজনিত একটা ছন্দময় ধ্বনিতরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এ দৃশ্য দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর তেমনি এর শব্দও শ্রুতিমধুর। কাঠঠোকরার মাথার ওপর রয়েছে সুন্দর সুদৃশ্য খোঁপা। কীট-পতঙ্গ খেয়ে কাঠঠোকরা জীবন নির্বাহ করে।

টুনটুনি

টুনটুনি খুবই ছোট্ট পাখি। চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট্ট। বেগুন গাছে অথবা ছোটো ছোটো গাছে এ পাখি বিচরণ করতে ভালোবাসে। বেগুন গাছের আশ্রয়ে এরা বাসা বাঁধতে বেশি পছন্দ করে। যেসব গাছের পাতা চওড়া মোটা সেসব গাছে টুনটুনি পাখি বাসা বাঁধে ৷ ছোট্ট তার ডিম। এ ডিম থেকেই বের হয় টুনটুনির ছোট্ট সুন্দর বাচ্চা । এদের টুন টুন্‌ শব্দ বেশ শ্রুতিমধুর।

ঘুঘু 

ঘুঘু আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত পাখি। ঘুঘুর ডাক খুবই শ্রুতি সুখকর। উঁচু ডালে এরা ওড়ে বেড়ায় । বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু দেখতে পাওয়া যায়। তেলা ঘুঘু, ছিট ঘুঘু উল্লেখযোগ্য। ঝাঁঝালো মধ্যাহ্নে শিমুল-বটের ডালে ঘুঘুকে ওড়ে বেড়াতে দেখা যায় ৷ পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ ঘুঘুর প্রিয় খাদ্য।

হাঁস-মুরগি, কবুতর আমাদের দেশের গৃহপালিত পাখি। ডোবা-পুকুরে হাঁস সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ায়। মুরগি বিচরণ করে উঠোনে অঙ্গনে। কবুতর খোঁপে বাস করে। টিনের চালে কিংবা আকশে ওড়ে বেড়ায়। মুরগের কু কুক্ ডাক, হাঁসের প্যাক প্যাক শব্দ এবং কবুতরের বাক্ বাকুম ডাক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অতি পরিচিত সুর ।

উপসংহার 

সবুজ-শ্যামল আমাদের এ বাংলাদেশ বহুবিচিত্র পাখির সমাবেশে সৌন্দর্যের এক নিশ্চল পটভূমি। এ দেশের আদিগন্ত সবুজ আর নদী-মেঘলা আকাশ জুড়ে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে বিচরণ করে বিচিত্র পাখি। পরিবেশের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও ভারসাম্য রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনন্য। প্রকৃতির এ সৌন্দর্যের প্রতীক পক্ষিকুলের অবাধ বিচরণের জন্যে আমাদের তৈরি করতে হবে উদার মুক্ত পরিবেশ। আমাদের কোনো লোভ এবং নিষ্ঠুরতা যেন পক্ষিকুলের ধ্বংসের কারণ না হয়। বক, বেলে হাঁস, ময়না, টিয়া, পাপিয়া, শ্যামা, সোনালি ডানার চিল সকলের জন্যে বাংলাদেশের বিস্তৃত নিসর্গ হোক শান্তির অনাবিল আশ্রয়। পাখির প্রতি ভালোবাসায় কবি কণ্ঠে তাইতো ধ্বনিত হয়েছে—

‘এ দেশের সবুজ নিসর্গে

পাখিদের অপূর্ব ভিড়,

ভোরের প্রতীক হয়ে উঠোনের ঘাসে

দোয়েলরা নেচে নেচে স্থির।’

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

আবেদন পত্রঃ বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি আবেদন পত্র লেখ

Swopnil

অনুচ্ছেদঃ দেশপ্রেম

Swopnil

সারমর্মঃ আমার একার সুখ সুখ নহে ভাই, সকলের সুখ সখা

Swopnil

Leave a Comment