আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ শিক্ষাই নারী মুক্তির পথ বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
শিক্ষাই নারী মুক্তির পথ
ভূমিকা
‘কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’
সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে নারী এবং পুরুষের ভূমিকা সমান। কৃষি-সভ্যতার জননী যেমন নারী তেমনি আধুনিককালে জাতিগঠনেও নারীরা অসামান্য অবদান রাখছে। তাই আজ আর নারীকে অবহেলার চোখে দেখার কোনো অবকাশ নেই। উনিশ শতকের সূচনা লগ্নেও সন্তানের জন্মদান ও প্রতিপালন এবং স্বামীর মনোরঞ্জনই নারীর একমাত্র কাজ বলে প্রতিপন্ন হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে গৃহের অবরোধ ভেঙ্গে জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে নারী আজ পুরুষের সহযাত্রীরূপে কাজ করে যাচ্ছে। সংসার ও সমাজজীবনের সকল দায়িত্ব কেবল পুরুষরাই একা বয়ে বেড়াবে আর নারী কেবল অবলা হয়ে ঘরে বসে থাকবে— এমনটি আজ আর কল্পনা করা যায় না। নারী আজ শিল্পী, কবি, যোদ্ধা, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, বৈমানিক, প্রকৌশলী, সমাজ সেবিকা, শাসক আরো কতো কী? নারীর ক্ষেত্রে আজ এ কথাটি বিশেষভাবে সত্য যে; ‘জননীর যে হস্ত দোলনা চালায়, সেই হস্তই আবার জগৎ শাসন করে’ ।
নারীত্বের গৌরব
মাতৃত্বের মধ্যেই নারী-জীবনের সার্থকতা নিহিত। ইসলাম ধর্মে নারীর মাতৃত্বকে সর্বোচ্চ গৌরবে ভূষিত করা হয়েছে। ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’— এ মহান বাণীর মাধ্যমে নারীর মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা দান করা হয়েছে। নারীর সবচেয়ে বড় অবদান তার সন্তান। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, রাষ্ট্রনায়ক, চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, ধর্মপ্রচারক প্রমুখকে নারীই সযত্নে তার গর্ভে ধারণ করেছে। নারীই তাদের প্রতিপালন করেছে এবং জীবনগঠনে অমূল্য অবদান রেখেছে । নারী তার গর্ভে ধারণ করেছে জগতের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হজরত মুহাম্মদ (স.) কে । সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নেপোলিয়ন, শেক্সপীয়র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখকে। অনাগত ভবিষ্যতেও নারী তাঁর গর্ভে জন্ম দেবে জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের। জগতের ইতিহাসে মহান পুরুষের পাশাপাশি কর্মগুণে ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত হয়ে আছেন জোয়ান অব আর্ক, মাদাম কুরি, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা প্রমুখ জগৎখ্যাত নারীসকল ।
আরো পড়োঃ
নারীর কর্তব্যের পরিধি
বর্তমান পৃথিবীতে গৃহকর্মের বাইরে জাতিগঠনসহ সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই নারীসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পোলন করে চলছে। শিক্ষা নারীর জীবনে এক ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত করেছে। শিক্ষা নারীকে আত্মনির্ভরশীল করছে এবং সামাজিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে কর্তব্য পালনে অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তুলছে। কল-কারখানায়, অফিসে-আদালতে, স্কুল-কলেজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমান বিশ্বে ছয়শ’ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক নারী। সুতরাং এ বিশাল শ্রমশক্তি যদি কেবল গৃহকর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে দেশ ও জাতির উন্নয়ন কখনোই ত্বরান্বিত হবে না। তাই সন্তান প্রতিপালন ও গৃহকর্মের পাশাপাশি নারীকে অন্যান্য কাজেও নিয়োজিত হতে হবে। বলা হয়ে থাকে যে, গৃহ থেকেই জাতিগঠনে নারীর ভূমিকা শুরু হয়— ‘Charity begins at home’.
শিশুর চরিত্রগঠনে নারী
আজকের শিশু আগামীদিনের কর্ণধার। সুতরাং শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ এবং পরিচর্যার মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হতে পারে আগামীদিনের সুন্দর পৃথিবী। তাই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনগঠনে জননীর ভূমিকা অপরিসীম। মায়ের স্নেহসিক্ত আঁচলের ছায়ায় সন্তান যে শিক্ষা লাভ করে তাই পরবর্তী জীবনে সন্তানের চরিত্রগঠনে বিশেষ অবদান রাখে। মায়ের কাছেই সন্তান প্রথম পাঠ গ্রহণ করে। একজন মা যদি শিক্ষিত ও বুদ্ধিমতী হন তবে তার প্রভাব সন্তানের ওপর অবধারিতভাবে প্রতিফলিত হয়। সেই সন্তানও সৎ, বুদ্ধিমান ও আদর্শবাদী হয়ে গড়ে ওঠে। এভাবে শিশুর চরিত্রগঠনে মায়ের যত্নশীলতার প্রভাব যেমন সন্তানের ওপর পড়ে তেমনি সন্তান থেকে তা সমাজে প্রতিফলিত হয়, এবং সমাজের ওপর সুদূরপ্রসারী কল্যাণকর প্রভাব পড়ে। সুতরাং সন্তানের সুশিক্ষা ও চরিত্র গঠনের মাধ্যমে নারীসমাজ জাতীয় জীবনে কল্যাণকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
জাতিগঠনে নারী
জাতিগঠনে নারীসমাজের ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক যেহেতু নারী। সুতরাং পুরুষের মতো নারীকেও জাতিগঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা আবশ্যক। জাতির সর্বময় কল্যাণের জন্য নারীর ভূমিকা সম্পর্কে আজ আর কোনো মতভেদের অবকাশ নেই। নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্র আজ আর পৃথক নয়। নারীকে আজ পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কাজ করে যেতে হবে। সামাজিক বাধা-বিপত্তি, শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসরতা কাটিয়ে ওঠে জাতিগঠনে নারীকে সকল প্রকার দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে নারীরা সাংসারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাইরের কর্মক্ষেত্রেও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর পদচারণা এখন আর সংসারের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নয়।
সীমাবদ্ধ গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে বাইরের জগতের সঙ্গে নারীর বিভিন্ন জীবনযাপনের ধারণাটি এখন পাল্টে গেছে। সাংসারিক কর্মকাণ্ডের বাইরে বর্হিমুখী কর্মকাণ্ডে নারী যত বেশি সম্পৃক্ত হবে ততই দেশের সমৃদ্ধি ও মঙ্গল সাধিত হবে।
নারীর কর্মক্ষেত্রের বিস্তার
নারী আজ আর সংসারের কারাগারে বন্দি নয়। পুরুষের মতো সে আজ কর্মশীল জীবনের অধিকারী। আমাদের দেশে বর্তমানে বহুলাংশে নারীসমাজের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নারীর শিক্ষাকে অবৈতনিক করায় মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় যথেষ্ট উন্নতি সাধন করছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় নারীরা যথেষ্ট অবদান রাখছে। এছাড়া প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নারী- সমাজের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজসেবা, পোশাক শিল্পসহ বহুবিচিত্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ডাক্তারি ও নার্সিং পেশায় নারীর মর্যাদাপূর্ণ কর্মচেতনা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। বস্তুত নারীর কর্মক্ষেত্র আজ পুরুষের মতোই বৈচিত্র্যপূর্ণ। বহুবিচিত্র কর্মক্ষেত্রে নারীসমাজ আজ যথেষ্ট যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও মেধার পরিচয় দিচ্ছে। নারীর এ বহুমুখী কর্ম- সম্পৃক্ততা জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতিতে যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে— এতে আর কোনো সন্দেহ নেই। নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা এবং দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠতার মাধ্যমে নারীসমাজ জাতীয় জীবনে অবদান রাখতে সক্ষম।
নারীর অধিকার
অধিকার এবং কর্তব্য পালন বিষয় দুটি পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। অধিকার ব্যতীত কর্তব্য পালন কখনোই যথাযথভাবে নিষ্পন্ন, হয় না। সুতরাং জাতিগঠনে নারীসমাজের ভূমিকার প্রশ্নে নারীর অধিকার সম্পর্কে ভেবে দেখা প্রয়োজন । পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা এখনো চরমভাবে অবহেলিত। নানা কুসংস্কার ও শাসনের বেড়াজালে নারীরজীবন অবরুদ্ধ। পুরুষের ইচ্ছার বাইরে নারীরা এখনো তার স্বাধীন ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে পারে না। পুরুষের হাতের ক্রীড়নক হয়ে সংসারের গণ্ডিবদ্ধ জীবনে তাকে বসবাস করতে হচ্ছে। গ্রামের অশিক্ষিত মেয়েদের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার চরমভাবে বিপর্যস্ত ও অবহেলিত। তবে শহরের শিক্ষিত নারীদের ক্ষেত্রে স্বাধীন ইচ্ছা পূরণের কিছুটা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং নারীর সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে। নারী তার ন্যায্য অধিকার পেলে তবেই তার দ্বারা সমাজ ও জাতির অগ্রগতি সাধিত হবে।
সকলের মনে রাখতে হবে, ‘Woman is an indispensable part of the mankind who must complete their role to. vibrate common interest’.
উপসংহার
কেবল পুরুষের একক চেষ্টায় কোনো জাতি আন্তবলীয়ান ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারে না। জাতিকে উন্নত, সমৃদ্ধ, গৌরবদীপ্ত ও সুন্দর করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর ত্যাগ, সেবা ও শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ববহ। জাতীয় জীবনের অগ্রগতিতে নারীর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে নারীশিক্ষার প্রসার ও নারীর সর্বতোমুখী মর্যাদাদান প্রয়োজন । তবেই জাতিগঠনে নারীসমাজ যথার্থ অবদান রাখতে সক্ষম হবে ৷ নারী-পুরুষের যৌথ অবদান ব্যতীত জাতীয় অগ্রগতি কখনোই সম্ভব নয়।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।