রচনানির্মিতি

রচনাঃ আমাদের বিদ্যালয়

Our Village, Our School, আমাদের বিদ্যালয় / আমার নিজ গ্রাম

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আমাদের বিদ্যালয় বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আমাদের বিদ্যালয়

সূচনা

বিদ্যালয়’ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জনের একটি সুপ্রশস্ত পরিমণ্ডল। জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিক উত্তরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের বিদ্যালয়ের নান মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’। আমাদের বিদ্যালয়টি মানিকগঞ্জ জেলার একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিদ্যালয় বহু কৃতিছাত্র তৈরি করেছে।

অবস্থান 

আমাদের বিদ্যালয়টি একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছোট্ট স্বচ্ছ নদী । পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে চলে গেছে একটি কাঁচা রাস্তা। উত্তর এবং পশ্চিমে রয়েছে গ্রামের সারিবদ্ধ পাড়া ও ঘর। দক্ষিণে সংলগ্ন খেলার মাঠ। খেলার মাঠের পরেই রয়েছে সুবিশাল ফসলের মাঠ।

বিদ্যালয় গৃহ 

আমাদের বিদ্যালয় গৃহটি একটি দু’তলা বিল্ডিং। এতে রয়েছে পনেরোটি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষ প্রশস্ত এবং আলো- বাতাস প্রবেশের জন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দরজা ও জানালা-সমৃদ্ধ। বিদ্যালয়ের কক্ষগুলোর একটিতে বসেন প্রধান শিক্ষক ৷ প্ৰধান শিক্ষকের পাশের কক্ষটি অফিসের জন্যে নির্ধারিত এখানে কেরানি এবং হিসাব রক্ষক বসেন। তার পরের কক্ষটি শিক্ষক -মিলনায়তন। সহকারী শিক্ষকমণ্ডলীর জন্যে এ কক্ষটি নির্ধারিত। এছাড়া রয়েছে মেয়েদের কমনরুম, ছেলেদের কমনরুম, পাঠাগার ও স্কাউট রুম। বাকি কক্ষগুলো ক্লাশের জন্যে নির্ধারিত। বিদ্যালয়ের মূল গৃহটি ছাড়াও রয়েছে আরো দুটি একতালা বিল্ডিং। এর একটি হচ্ছে ‘রসায়ন গবেষণগার’ এবং অন্যটি ‘পদার্থ বিদ্যা’ ও ‘জীব বিদ্যা গবেষণাগার’। আমাদের বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ প্রয়োজনীয় · সংখ্যক আসবাবপত্র দ্বারা সুসজ্জিত। শ্রেণিকক্ষগুলোতে রয়েছে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ এবং ব্ল্যাকবোর্ড ।

See also  রচনাঃ শৈশব স্মৃতি

ছাত্র ও শিক্ষক 

আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা প্রায় সাতশত । প্রত্যেক শ্রেণিতে দুটি করে শাখা আছে। প্রতি শ্রেণিতে গড় ছাত্র- সংখ্যা সত্তর জন । আমাদের বিদ্যালয়ে বিশজন শিক্ষক আছেন। প্রধান শিক্ষক একজন অভিজ্ঞ ও সুযোগ্য শিক্ষাবিদ। তিনি এম. এ. এম-এড। প্রশাসনিক দক্ষতাসহ তাঁর রয়েছে দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। সহকারী প্রধান শিক্ষক বি. এ. বি-এড। অন্যান্য শিক্ষকগণও অভিজ্ঞ—— তাঁদের অনেকেই বি-এড ডিগ্রি প্রাপ্ত। আমাদের শিক্ষকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সচেতন। তাঁদের চমৎকার পাঠদানে আমরা মুগ্ধ। তাঁরা আমাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ। আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রতি যথারীতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকি । আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার এবং সুমধুর। সময়সূচি : আমাদের বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। আমরা ক্লাস শুরুর আধঘণ্টা আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হই। ৯.৪০ মিনিটে’ আমরা জাতীয় পতাকার সামনে শ্রেণি-ক্রমানুসারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াই। অতঃপর আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি এবং পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি। সেই সাথে আমরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করি। জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে শপথবাক্য পাঠ করি এবং শরীরচর্চা শিক্ষকের নির্দেশনায় দু’ একটি শারীরিক কসরত প্রদর্শন করি। এরপর শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যার যার শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করি। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে না করতেই ঢং ঢং করে বেজে ওঠে ক্লাস শুরুর ঘণ্টা। আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিদিন আটটি পিরিয়ড়ে পাঠদান কার্যক্রম চলে। প্রথম চার পিরিয়ডের পর মাঝখানে আধঘণ্টা পাঠবিরতি থাকে। অতঃপর বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত একটানা ক্লাস চলে। প্রতি বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ক্লাস এবং শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি।

পাঠাগার

আমাদের বিদ্যালয়ের পাঠাগারটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য শিল্প নানা বিষয়ক বই রয়েছে পাঠাগার থেকে সাত দিনের জন্যে বই সরবরাহ করা হয়। আমরা অফ-পিরিয়ডেও পাঠাগারে বসে পড়াশুনা করি। আমাদের পাঠাগারে বই-পুস্তকের পাশাপাশি পত্র-পত্রিকা সাহিত্য সাময়িকীও রাখা হয়। পাঠাগারে প্রবেশ করলে আমার রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটি মনে হয়।

‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এ লাইব্রেরীর তুলনা হইত।”

খেলাধুলা 

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্বাস্থ্য এবং শরীরগঠনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ে খেলাধুলার প্রতিও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের বিদ্যালয়-সংলগ্ন খেলার মাঠে আমরা ফুটবল, ভলিবল এবং ক্রিকেট খেলে থাকি। আমাদের বিদ্যালয়ের ফুটবল দল বেশ সুগঠিত এবং শক্তিশালী। আমাদের বিদ্যালয়ে কেরাম, দাবা, লুডু প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ খেলাধুলারও ব্যবস্থা রয়েছে। বছরে একবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আমরা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে থাকি ।

See also  রচনাঃ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অনুষ্ঠানাদি

পড়াশোনার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে সামগ্রিকভাবে প্রতিভাদীপ্ত করে গড়ে তুলতে আমাদের বিদ্যালয় অত্যন্ত যত্নশীল। এজন্যে রয়েছে নিয়মিত বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, গান প্রভৃতির ব্যবস্থা। প্রতি বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ক্লাসের পর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, গান ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী প্রভৃতি অনুষ্ঠানসমূহ যথাযথভাবে পালন করা হয় ৷ বৈশাখী মেলা, বিজ্ঞান মেলা, বার্ষিক নাট্যোৎসবের ব্যবস্থাও আমাদের বিদ্যালয়ে রয়েছে। বছরে একবার সাংস্কৃতিক সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়। এ সপ্তাহে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং বার্ষিক পরীক্ষায় যারা প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে তাদেরকে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে মিলাদ মাহফিল, সরস্বতী পূজা প্রভৃতি অনুষ্ঠানাদিও পালন করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিবছর বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত দেওয়াল পত্রিকা বার্ষিকী প্রকাশিত হয়। এতে সাহিত্যানুরাগী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজের লেখা ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। বার্ষিকীতে ছাত্রছাত্রীদের এস. এস. সি পরীক্ষার ফলাফলও মুদ্রিত হয় ৷

পরীক্ষার ফলাফল

আমাদের বিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীই পড়াশুনার প্রতি বেশ মনোযোগী। শিক্ষকমণ্ডলীর আন্তরিক সহযোগিতা ও উন্নত পাঠদান পদ্ধতি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।

এস. এস. সি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। আট-দশজন ছাত্র-ছাত্রী প্রতি বছরই স্টার মার্ক পেয়ে থাকে। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক । প্রায় প্রতি বছর একাধিক শিক্ষার্থী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করে থাকে । গ্রামের একটি বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলে আমরা সকলেই গর্বিত ।

উপসংহার 

শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের বিদ্যালয় এ এলাকার একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সুন্দর জীবন ও সুস্থ সমাজগঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই । আমাদের শিক্ষানুরাগ, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাজ্ঞান ও অধ্যবসায় গুণে—একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের বিদ্যালয় উত্তরোত্তর আরো সাফল্য অর্জন করুক এটাই আমাদের একান্ত কামনা। এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

See also  রচনাঃ বাংলাদেশের খেলাধুলা

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

আবেদন পত্রঃ বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন উপলক্ষে অনুমতি চেয়ে অধ্যক্ষের নিকট আবেদনপত্র লেখ

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে

Swopnil

রচনাঃ শৈশব স্মৃতি

Swopnil

Leave a Comment