আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস/সন্ত্রাস ও ছাত্রসমাজ/ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
Contents
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস/ সন্ত্রাস ও ছাত্রসমাজ/ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও তার প্রতিকার
ভূমিকা
জ্ঞানচর্চার সর্বোৎকৃষ্ট স্থান শিক্ষাঙ্গন। এ অঙ্গনই গড়ে তোলে জাতির স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড তেমনি শিক্ষাঙ্গন জাতির পবিত্র স্থান। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাঙ্গনকে যাবতীয় হীন ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। কারণ সুশিক্ষা বঞ্চিত শিক্ষাঙ্গন যেকোনো জাতির জন্য কলঙ্কজনক। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান আহরণের শান্ত ও অনুকূল পরিবেশ থাকা একান্তভাবে বাঞ্ছনীয় ।
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস কী ?
শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করে সশস্ত্র হামলা বা অন্য কোনো উত্তেজনাকর আক্রমণের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করাই হলো শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস’। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক অপ্রত্যাশিত রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। দেশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণ : বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সন্ত্রাসের কারণে সবচেয়ে আলোকিত স্থান আজ নৈরাজ্যের অন্ধকারে নিমগ্ন। বিভিন্ন কারণে শিক্ষাঙ্গনে আজ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের দলীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে কোমলমতি ছাত্রদেরকে বিপথগামী করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করছে। আজকাল ছাত্ররা ছাত্র-রাজনীতির আদর্শচ্যুত হয়ে রাজনীতির নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ হিসেবে কাজ করতে গিয়ে মাস্তানি, গুণ্ডামির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের আরেকটি কারণ। দিন দিন বেকার সমস্যা বেড়েই চলছে। পাস করা ছাত্ররা চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াচ্ছে। শিক্ষকদের আদর্শচ্যুতি, রাজনৈতিক মতাদর্শের অপপ্রয়োগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা ও সুযোগ অপেক্ষা অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যা ও হীনদলাদলি প্রভৃতি কারণে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিয়তই সন্ত্রাস চলছে।
সন্ত্রাসের কুফল
শিক্ষাঙ্গন জ্ঞান বিস্তারের পাদপীঠ। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের পরিণাম ভয়াবহ এবং সুদূর প্রসারী। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ শান্ত, সুন্দর ও ত্রাসমুক্ত না হলে শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়— শিক্ষার গুণগত মানের অবনতি ঘটে। সন্ত্রাসযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থী কখনোই জ্ঞানার্জন করতে পারে না। ফলে তার ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে অনেক উজ্জ্বল প্রতিভা অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এভাবে দেশ, জাতি এবং পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। সন্ত্রাসের ফলে ‘সেশনযট’ বাড়ছে, দরিদ্র অভিভাবকদের আর্থিক কষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাস করা ছাত্রদের চাকরির জন্য প্রতিযোগিতার সময়সীমা সংকুচিত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে ছাত্রসমাজ আজ সামাজিক বিকলাঙ্গতার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে হতাশায় দগ্ধ হচ্ছে । সন্ত্রাস দমনের পদক্ষেপ : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করা আশু প্রয়োজন। এ . লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে—
১. ছাত্রদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর আন্তরিক হতে হবে এবং সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
২. শিক্ষাঙ্গনে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
৩. শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রবেশী বহিরাগত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে অছাত্রদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ।
8. শিক্ষকদেরকে ছাত্রদের নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে।
৫. শিক্ষাঙ্গন থেকে চিহ্নিত মাস্তান ও সন্ত্রাসী ছাত্রদেরকে বহিষ্কার করতে হবে।
৬. সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বাহিনীকে সচল এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৭ .সমাজ থেকে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি নির্মূল করতে হবে।
৮. ছাত্রদের হতাশামুক্ত ও আদর্শ জীবনগঠনে শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৯. শান্তিকামী ছাত্রদের সংগঠিত হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে শপথ দিতে হবে।
১০. সন্ত্রাস দমনে প্রচার মাধ্যমকে বিশেষভাবে সক্রিয় হতে হবে ।
১১. সন্ত্রাস দমনে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১২. সন্ত্রাসীকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
১৩. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দলসমূহকে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
১৪. যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
১৫. সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ না রেখে— সন্ত্রাসের মূল কারণ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সন্ত্রাস নিরসন করতে হবে।
উপসংহার
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বর্তমান সমাজের একটি ভয়াবহ সমস্যা। এ সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে না পারলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এ সত্য উপলব্ধির মাধ্যমে আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।
Leave a Reply