রচনানির্মিতি

রচনাঃ নিয়মানুবর্তিতা

নিয়মানুবর্তিতা / মানবজীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “নিয়মানুবর্তিতা বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

নিয়মানুবর্তিতা / মানবজীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব

ভূমিকা 

বিশ্বজগতের সমস্ত কিছুই সুশৃঙ্খল নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ। স্রষ্টা তার সমগ্র সৃষ্টিকেই একটা সুচারু নিলমের অধীন করে দিয়েছেন। সেই অদৃশ্য নিয়মের আবর্তেই পৃথিবীর সকল কিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। নিয়ম হচ্ছে বিধান, অভ্যাস বা সংযত আচার । আর নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলার স্বভাবই হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা। মানবজীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মানুবর্তিতা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের একটি অনিবার্য শর্ত।

বিশ্ব প্রকৃতি ও নিয়মানুবর্তিতা

নিয়ম-রীতিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলাই নিয়মানুবর্তিতা। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, জীব- জন্তু, কীট-পতঙ্গ, নদী-ঝরনা সবকিছুই নিয়ম মেনে চলে। ক্ষুদ্র পিপীলিকা নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পথ চলে, সামান্য মৌমাছি দলবদ্ধ হয়ে মধুচক্রকে বেষ্টন করে থাকে। পাহাড়ের শীর্ষ থেকে ঝরনা গড়িয়ে পড়ে ছুটে চলে। ঋতুর পালাবদল, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, বৃষ্টি-বর্ষা, শস্য-লতা, ফুল-ফল, গ্রীষ্ম-হেমন্ত কী এক অদ্ভুত শৃঙ্খলার বিন্যাস! শীতে আম পাকে না, গ্রীষ্মে খেজুরের রস ঝরে না, শরতে কোকিল ডাকে না, বসন্ত শাপলা ফোটে না— কোথাও শৃঙ্খলার এতটুকু শিথিলতা নেই। সর্বত্রই চলছে নিয়মের কঠিন অনুসরণ। যেখানে ব্যতিক্রম সেখানেই বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়।

মানবজীবনে নিয়মানুবর্তিতা 

মানুষ জন্মেই মানুষ হয় না। শিক্ষা-দীক্ষা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মাধ্যমেই একজন বর্ধনশীল মানবশিশু ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে ওঠে। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ ও সুন্দর হওয়ার জন্য সুশৃঙ্খল জীবনযাপন অপরিহার্য। শৈশব থেকেই মানুষের নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন শুরু হওয়া আবশ্যক। কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ পারিবারিক গণ্ডি থেকেই শুরু হবে শিশুর নিয়মানুবর্তিতার পাঠ । শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-আচরণ, খাওয়া-দাওয়া, শ্রম-বিশ্রাম, খেলাধুলা সবকিছুই নিয়ম মেনে করতে হবে। পাঠে অমনোযোগী, আচার-আচরণে অসংযত, খাওয়া-দাওয়ায় অসংযমী, শ্রমে কাতর কিংবা অধিক শ্রমে স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে শৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিণাম হিসেবে জীবনে পদে পদে দুঃখকে বরণ করতে হবে। তাই নিয়মের সুষ্ঠু অনুসরণের মধ্য দিয়েই জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তুলতে হবে ।

See also  রচনাঃ স্বাধীনতা দিবস

ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা 

ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতিস্বরূপ । ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ছাত্র যদি নিয়ম রীতির অনুসারী না হয় তবে তার জীবনে সাফল্য অনিশ্চিত। একজন ছাত্রকে প্রত্যুষে ঘুম থেকে ওঠতে হবে। হাত- মুখ ধোতে হবে। নামাজ বা প্রার্থনা করতে হবে। নিয়মিত পাঠাভ্যাস ও খেলাধুলা করতে হবে। পরিমিত আহার, নিয়মিত ঘুম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রভৃতি গুণ অর্জনের মাধ্যমে একজন ছাত্রকে নিয়মানুবর্তী হতে হবে। ছাত্রজীবনে যে নিয়মানুবর্তিতাকে আয়ত্ত করতে শেখল তার ভবিষ্যৎ জীবনও নিয়মের অভ্যাসে আলোকিত হবে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সকলকে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে— নিয়মানুবর্তিতাই মানুষের চরিত্রকে মহিমান্বিত করে। নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়েই চরিত্ররূপ মুকুট শিরে ধারণ করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন ছাড়া কখনোই একজন ছাত্র সফল ছাত্র বা সফল ভবিষ্যৎ নাগরিক হতে পারে না। নিয়মানুবর্তিতা যেহেতু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করে তাই ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ভুলতে হবে।

বিদ্যালয়ে নিয়মানুবর্তিতা

শিক্ষার্থীদের বিদ্যার্জনের পীঠস্থান হলো বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ও সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীন। একটি সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলা বা নিয়মে বিদ্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একটি ঘণ্টা প্রতিদিন সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদ্যালয়ের একটি সুনির্দিষ্ট ঘণ্টারধ্বনি দ্বারা পিটি প্যারেড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আবার আর একটি ঘণ্টাধ্বনি দ্বারা ক্লাস বসছে। আবার আর একটি ঘণ্টাধ্বনি দ্বারা ক্লাস শেষ হচ্ছে। এ ঘণ্টাধ্বনিকে অনুসরণ করেই শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করছেন আবার বের হচ্ছেন। বিদ্যালয়ে ক্লাস, খেলাধুলা, বিরতি, ক্লাস ছুটি সবই একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে চলে। যে বিদ্যালয়ের নিয়মের প্রতি একাগ্রতা বেশি সে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, গৌরব ও সুনাম বেশি ।

সামরিকবাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা 

নিয়ম-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সামরিকবাহিনী খুবই যত্নশীল। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষায় সামরিকবাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্ব অপরিসীম। সামরিকবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অনুশীলন, প্যারেড সবই কঠিন নিয়মের অধীন। সামরিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সামরিকবাহিনীতে ওপরস্থ অফিসারের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়। তিনি যদি অধীনস্থ সৈন্যদের সমুদ্রে সাঁতার ও আগুনে ঝাঁপ দিতে বলেন তবে তাদের তাই করতে হবে। এছাড়া শৃঙ্খলা ব্যতীত যুদ্ধে জয়লাভ কখনোই সম্ভব নয় । দেশের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। 

See also  রচনাঃ বাংলাদেশের খেলাধুলা

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নিয়মানুবর্তিতা

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনও নিয়মানুবর্তিতার অধীন। যে পরিবারে নিয়মানুবর্তিতার প্রতি শ্রদ্ধা নেই সে পরিবারে কখনোই শান্তি বিরাজ করে না। পারিবারিক নিয়মানুবর্তিতার শিথিলতার সুযোগ নিয়েই আজকে তরুণ সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। পরিবার নিয়েই গঠিত হয় সমাজ। সমাজজীবনে সামাজিক বিধি-নিষেধ ও রীতি-নীতি মেনে না চললে সামাজিক পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। যে সমাজের শৃঙ্খলাবোধ সুদৃঢ় আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত সে সমাজ ততো উন্নত। আর এ সামাজিক কাঠামোর ওপরই গড়ে ওঠে জাতীয় শৃঙ্খলা ও সমুন্নতি ।

অনিয়মানুবর্তিতার কুফল 

অনিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের অগ্রগতি ও উন্নতির প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন তথা সমাজ, শিক্ষায়তন, অফিস-আদালত সর্বত্রই অনিয়মানুবর্তিতার বলগাহীন প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষা, ব্যবসা- বাণিজ্য কোনো ক্ষেত্রেই আমরা আশানুরূপ অগ্রগতি ও ফললাভ করতে পারছি না। এ অনিয়মানুবর্তিতার কারণেই খুনাখুনি, ঘুষ, দুর্নীতি আমাদের সমাজজীবনকে দারুণভাবে কলুষিত করছে।

উপসংহার 

নিয়মানুবর্তিতা জীবনে সফলতার চাবিকাঠি । নিয়মানুবর্তিতা ভিন্ন উন্নত জীবনের প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। সার্বিকভাবে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলতার প্রতি সকলেরই আনুগত্যশীল থাকা প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তিতা সহজাত প্রবৃত্তি নয়—কঠিন অনুশীলনের মাধ্যমে তাকে আয়ত্ত করতে হবে। ছাত্রজীবন, কর্মজীবন, সংসারজীবন, সামাজিকজীবন সকল ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন । নিয়মানুবর্তিতার অভাব জীবনে অমঙ্গল ডেকে আনে ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে, “আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি”?

Swopnil

রচনাঃ যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

Swopnil

রচনাঃ অধ্যবসায়

Swopnil

Leave a Comment