রচনাRegular Contentনির্মিতি

রচনাঃ অধ্যবসায়

অধ্যবসায় / মানবজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব / ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায়

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “অধ্যবসায় / মানবজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব / ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায় বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

অধ্যবসায় / মানবজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব / ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায়

ভূমিকা

জীবনে সাফল্য অর্জন মানুষের এক চিরন্তন লক্ষ্য। কিন্তু কণ্টকাকীর্ণ জীবন পথের প্রতি পদক্ষেপেই আছে বাধার পর বাধা। তাই সাফল্য কাঙ্ক্ষিত হলেও মানুষের পক্ষে তা অর্জন করা কখনোই সহজসাধ্য নয়। যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্যে প্রয়োজন অধ্যবসায়। কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হওয়ার পর সফলতা লাভের জন্যে বার বার চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের গুণে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়। অধ্যবসায় মানব চরিত্রের একটি অন্যতম গুণ ৷ 

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা 

মানবজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অধ্যবসায় ব্যতীত জীবনে সাফল্য লাভ করা যায় না। কর্মময় জীবনে সাফল্যের পথে অনেক কিছুই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। লজ্জা, সংকোচ, আলস্য, অক্ষমতা, অনাহা প্রভৃতি জীবনে সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে। এছাড়াও আছে বাইরের বহুবিধ প্রতিকূলতা। কেবল অধ্যবসায়ই পারে সকল প্রকার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ পায় শক্তি, সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল। অধ্যবসায়ই জীবনকে করে তোলে আশাবাদী ও উদ্দীপ্ত। অধ্যবসায়ের জন্যেই মানুষ অতিক্রমণ করতে পেরেছে জীবন পথের সকল বাধা-বিঘ্ন অধ্যবসায়ের গুণেই সকল সংকটের অবসান সম্ভবপর হচ্ছে। অধ্যবসায়ের ফলেই মানুষের জীবন সাফল্যের রোদ্দুরে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেছে। সভ্যতার সমুজ্জ্বল শিখরে মানব কাফেলার গর্বিত অবস্থান সুদীর্ঘ অধ্যবসায়েরই ধারাবাহিক পরিণতি। অরণ্যচারী যাযাবর মানুষ থেকে আজকের আধুনিক বিশ্বপট নিরন্তর অধ্যবসায়েরই ইতিহাস। অধ্যবসায়ই একমাত্র অবলম্বন যার দ্বারা মানুষ সহজেই ব্যর্থতার সিঁড়ি অতিক্রম করতে পারে। অধ্যবসায় ব্যর্থতার গ্লানি দূর করে মানুষের মাথায় পরাতে পারে জয়ের মুকুট। 

See also  রচনাঃ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য

রাতের কলো- অধরের পর যেমন আলোকিত ভোর আসে- তেমনই বার বার চেষ্টার ফলে মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের সোনালি সূর্য। আত্মপ্রতিষ্ঠার উত্তম পন্থা হচ্ছে অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া জীবনের প্রতিকূল কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন খুবই কঠিন। সকলেরই মনে রাখা প্রয়োজন।

‘একবার না পারিলে দেখ শতবার, পারিব না এ কথাটি বলিও না আর।’

অধ্যবসায়ী জীবনাদর্শ 

অধ্যবসায় ছাড়া যে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না— জগতের বহু বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনাদর্শ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন বারোটি বছর কঠোর সাধনার দ্বারা যে গবেষণা কাজ করেছিলেন তা তাঁর পোষা কুকুর মোমবাতির আগুন ফেলে ভস্মীভূত করে ফেলেছিল। কিন্তু বিজ্ঞানী নিউটন তাতে মোটেও হতাশ হননি। তিনি কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে আবার সেই সত্যকে পুনরায় আবিষ্কার করেছিলেন।

সুকঠিন অধ্যবসায়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস। পর পর ছয়বার তিনি ইংরেজ সৈন্যের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হন। ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তিনি এক পরিত্যক্ত দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হন। এ সময় তিনি হঠাৎ দেখতে পান একটি মাকড়সা কড়িকাঠে জাল বুনতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই সে নিশ্চেষ্ট হচ্ছে না। সফলতা অর্জনের জন্যে বার বার সে অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পর পর ছয়বার ব্যর্থ হওয়ার পর সপ্তমবারে মাকড়সাটি সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়। মাকড়সার এ নিরন্তর চেষ্টা দেখে রবার্ট ব্রুস অনুপ্রাণিত হলেন। আবার তিনি যুদ্ধ করার জন্যে মনস্থির করলেন। অতঃপর সপ্তমবারে তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করলেন।

সম্রাট নেপোলিয়ন ছিলেন ইতিহাস প্রসিদ্ধ অর্ধ-পৃথিবীর অধীশ্বর। কোনো কাজকে তিনি কখনোই অসম্ভব মনে করতেন না। জীবদ্দশায় তিনি অধ্যবসায়ের অজস্র নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। তিনি বলতেন – 

‘Impossible is a word found in the dictionary of the fools’.

নিতান্ত দরিদ্র এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কেবল অধ্যবসায়ের গুণে নেপোলিয়ন জীবনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন ।

See also  রচনাঃ আর্সেনিক দূষণ

অধ্যবসায়ের আদর্শ হিসেবে অনেকের মধ্যে উল্লেখ করা যায় কলম্বাসের কথা। দুরন্ত সমুদ্র ও অনেক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সহযাত্রীদের হতাশা ও চক্রান্তের মধ্যেও তিনি আমেরিকা গিয়ে পৌঁছেছিলেন। তাঁর এ অধ্যবসায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণযোগ্য। জগতের স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিদের জীবন অধ্যবসায়ের আদর্শে সমুজ্জ্বল। অধ্যবসায়ের শক্তিতেই তাঁরা তাঁদের জীবনকে সফল করতে পেরেছিলেন ।

ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায় 

জীবনের একটি সুন্দর ও সোনালি অধ্যায় ছাত্র-জীবন। এ জীবনকে সাফল্যে ও সৌন্দর্যে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন অধ্যবসায়ী হওয়া। কোনো পাঠ একবারে আয়ত্ত না হলে বার বার অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে তা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। যে ছাত্র কঠিন পাঠকে দুর্বোধ্য ভেবে অলসতাবশত দূরে সরিয়ে রাখে পরীক্ষায় তার পক্ষে কখনোই ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। ব্যর্থতার গ্লানি তার জীবনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। অনেক দুর্বল মেধার ছাত্র কেবল অধ্যবসায়ের আদর্শে পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে অনেক মেধাবী ছাত্রও কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল করে থাকে। তাই ছাত্র-জীবনে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মনে রাখা উচিত যে, প্রতিভার মূলকথা হলো প্রচেষ্টা। তাই ছাত্র মাত্রেই পড়াশোনায় মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী হওয়া উচিত।

কর্মজীবন ও অধ্যবসায় 

ছাত্রজীবনের মতো কর্মজীবনেও অধ্যবসায়ী হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। যে জীবন অধ্যবসায়ের আদর্শে নিবেদিত সে জীবনে সফলতা নিশ্চিত। অধ্যবসায়ী ব্যক্তি জীবনে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হন। কেবল কর্মপ্রিয় দৃঢ়চেতা ব্যক্তিই পারেন পর্বত প্রমাণ বাধাকে অতিক্রম করতে। কর্ম-সম্পাদনের অবিচল প্রেরণায় জীবনকে ভরে তোলা উচিত। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ও কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ই মানুষকে সাফল্য ও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান দেয়। আন্তপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের ভূমিকা তুলনাহীন। যশ, খ্যাতি, ধনে-মানে অবদানে মহিমান্বিত হতে চাইলে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। সুখের উপকরণ আপনা থেকেই কখনো পাওয়া যায় না, তাকে অর্জন করতে হয়। সে অর্জনের জন্যে চাই বলিষ্ঠ সাধনা ও অধ্যবসায়। জীবনে সর্বাধিক সাফল্যের জন্যে অধ্যবসায়কে সার্বক্ষণিক সহচর করে নিতে হবে। তবেই জীবনের চারণভূমি সাফল্যের কুসুম-গন্ধে আন্দোলিত হবে।

See also  রচনাঃ সময়ের মূল্য

জাতীয় জীবন ও অধ্যবসায় 

অধ্যবসায়ের মহৎগুণে জাতীয় জীবন গৌরবে, মর্যাদায় ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোনো জাতির প্রতিটি মানুষ যদি অধ্যবসায়ী হয় তবে সে জাতির সাফল্য অনিবার্য। যে জাতি যত বেশি অধ্যবসায়ী সে জাতি তত বেশি উন্নত। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবদীপ্ত সাফল্য দেশবাসীর অধ্যবসায়ের সুফল। এখন প্রয়োজন অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সকলের অধ্যবসায়ী দৃঢ়তা। জাতীয় জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনার জন্য সকলকে হতে হবে অধ্যবসায়ী I

অধ্যবসায় ও প্রতিভা

প্রতিভা মানুষের স্বভাবজাত একটি অসাধারণ গুণ। তবে কেবল প্রতিভাবলেই জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না। তাই প্রতিভার সাথে অধ্যবসায়ের সংযোগ একান্ত অপরিহার্য। 

ভল্টেয়ার বলেছেন-

 ‘প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।’ 

ডালটনের অভিমত –

‘লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে; কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই জানি না।’ 

এডিসন প্রতিভাকে এক ভাগ প্রেরণা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আর বাকি নিরানব্বই ভাগ হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। মূলত প্রতিভা হচ্ছে খনিস্থিত মণিসদৃশ—তাকে ঘসে মেজে শাণিত করতে পারলেই তবে তার যথার্থ মূল্যায়ন।

উপসংহার 

অধ্যবসায় মানব চরিত্রের একটি আকর্ষণীয় গুণ। জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও সাফল্য অর্জনের জন্যে প্রত্যেককে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। অধ্যবসায়হীন মানুষ জীবনে কখনো সাফল্য অর্জন করতে পারে না। জীবন নিরবচ্ছিন্ন সাফল্যের সঞ্চয় নয় — জীবনের দুঃখ-বেদনা, হতাশা-যন্ত্রণা, ব্যর্থতা ও সংগ্রামকে জয় করতে হবে অধ্যবসায়ের মহৎগুণে। পৃথিবীর বুকে যারা অমরকীর্তির স্বাক্ষর রেখে গেছেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। তারা জানতেন সুন্দর দিন সকলের জন্যেই অপেক্ষা করে— তবে তাকে বরণ করে নিতে হয়, পরম প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের মহৎগুণে ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

পত্রঃ তুমি কেন একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী হতে চাও তার কারণ বর্ণনা করে বন্ধুকে চিঠি লেখ

Swopnil

পত্রঃ তোমার দেখা একটি মেলার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র লেখ

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণ: আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে

Swopnil

Leave a Comment