রচনানির্মিতিবাংলা

রচনাঃ যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

ভূমিকা

একটি অভিশপ্ত পদ্ধতি হিসেবে আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথা অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এ প্রথাটির আইনগত কোনো স্বীকৃতি নেই । তথাপি যৌতুক প্রথা তার অমানবিক হিংস্র থাবায় এদেশের অনেক সুখী-সুন্দর পরিবারকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়েছে। যৌতুক প্রথা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ও অনেক নারীর জীবনে বিষক্ষত এবং মৃত্যুফাঁদের সৃষ্টি করেছে।

যৌতুকের বৈশিষ্ট্য

কন্যার বিয়ের সময় পিতা বা অভিভাবক বর কন্যাকে যে অর্থ, অলংকার বা অন্যান্য সামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে প্রদান করে তাই যৌতুক। এ যৌতুকের কারণ বহুবিধ। সুযোগ্য অর্থগৃধ পাত্র, অথবা অতিযোগ্য পাত্র, অথবা শ্বশুর গৃহে কন্যার সুখের নিমিত্ত প্রদত্ত উপঢৌকন যৌতুক হিসেবে বরকে প্রদান করা হয়। অথবা কন্যার রূপ, শিক্ষা বা অন্যান্য অযোগ্যতাজনিত ঘাটতি পূরণের জন্য যৌতুক প্রদত্ত হতে পারে। তবে বরপক্ষের চাহিদা বা উপঢৌকন হিসেবে যে কারণেই বরপক্ষকে অর্থ-অলংকার বা অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করা হোক না কেন সবই যৌতুকের নামান্তর। অর্থের বিনিময়ে যে পুরুষ একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে প্রকৃত দাম্পত্য-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যৌতুক প্রথা মানব সভ্যতার একটি লজ্জাকর অন্ধকারময় রীতি। পৃথিবীর সকল ধর্মে যৌতুককে ঘৃণা করা হয়েছে। যৌতুকের উৎপত্তির মূলে রয়েছে অর্থ-লালসা এবং দারিদ্র্য। হিন্দু কন্যার পৈত্রিক সম্পত্তিতে অধিকার না থাকার কারণে কন্যা বা জামাতাকে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেবার মানসিকতা পণপ্রথাকে উৎসাহিত করেছে । ক্ৰমান্বয়ে তা বহুবিচিত্র উপায়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার কাঁধে চেপে বসেছে। কৌলীন্য প্রথাও যৌতুককে পুষ্ট ও ত্বরান্বিত করেছে । আজকাল যোগ্য পাত্রের অভিলাষে কন্যার পিতা বা অভিভাবক যৌতুক প্রদান করে থাকে। অথবা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা পাত্রপক্ষের চাপে কন্যার সুখের কথা ভেবে যৌতুক প্রদান করে। যৌতুক বর্তমানে একটি অভিশপ্ত সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়েছে।

See also  পত্রঃ ছাত্র হিসেবে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে ছোটো ভাইয়ের কাছে চিঠি লেখ

যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন

বিবাহ একটি পবিত্র সামাজিক বিধি। মানব সমাজের অস্তিত্ব সংরক্ষণ এবং সুখী সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবনগঠনে বিবাহ প্রথা একটি সুন্দর সামাজিক ও ধর্মীয় স্বীকৃতি। মানব-মানবীর এ পবিত্র ও সুন্দর বন্ধনকে কলুষিত করছে যৌতুক নামক অভিশপ্ত প্রথা । যৌতুকের কারণে বাংলাদেশে অনেক নারীই নির্যাতিত হচ্ছে। যৌতুকের দাবি না মেটাতে পেরে অনেক কন্যার পিতাকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। অনেক নারীকে শ্বশুরগৃহে স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির নির্যাতন ও নিন্দা সহ্য করতে হচ্ছে। অনেক নারী অতি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করছে। অনেক নারী যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেক পিতা বা অভিভাবক যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে জমি-জমা বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। কন্যা-জামাতার বিদেশ গমনের খরচ যোগাতে গিয়ে অনেক কন্যার পিতাকে সহায়হীন হতে হচ্ছে। যৌতুক কেবল বিবাহকালীন উপঢৌকনে সীমাবদ্ধ না থেকে তা বিবাহোত্তর কালেও বহুমুখী চাহিদা নিয়ে কন্যার পিতাকে উৎকণ্ঠিত ও যন্ত্রণাগ্রস্ত করে তুলছে।

যৌতুক প্রথা থেকে মুক্তির উপায়

যৌতুক প্রথার কারণে নারীরা আজ পদে পদে অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এ নিষ্ঠুর প্রথা থেকে মুক্তি না পেলে নারী কখনো তার প্রকৃত সম্মান ফিরে পাবে না। এ হীন যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুরতা ও অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পন্থাগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে –

১. যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা ।

২. যৌতুক বিরোধী প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা ।

৩. কেউ যৌতুক দেবে না এবং কেউ যৌতুক নেবে না এ ব্যাপারে জনসাধারণের শপথ গ্রহণ করা

8. নারীকে শিক্ষিত, কুসংস্কারমুক্ত ও সচেতন করে তোলা ।

৫. নারীর বেকারত্ব বিমোচন করা ৷

৬. রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকাসহ সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমে যৌতুকের কুফল তুলে ধরা ।

See also  ভাবসম্প্রসারণঃ দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে, “আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি”?

৭. দেশব্যাপী যৌতুক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা ৷

উপসংহার

‘Dowry system paves the way to woman oppression.’

যৌতুক প্রথার নিষ্ঠুরতা থেকে নারী সমাজকে মুক্ত করতে না পারলে যৌতুকের অভিশপ্ত লেলিহান শিখা বিস্ফোরিত হয়ে তা একদিন গোটা সমাজের শান্তিকেই বিনষ্ট করবে। তাই সরকারসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে দেশ ও নারী সমাজের স্বার্থে নিষ্ঠুর যৌতুক প্রথার নির্মূল সাধনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও তৎপর হতে হবে ৷

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে, “আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি”?

Swopnil

আবেদন পত্রঃ অর্ধদিবসের ছুটি দেবার জন্য অনুরোধ করে প্রধান শিক্ষকের নিকট দরখাস্ত লেখ

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ, উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?

Swopnil

Leave a Comment