রচনাRegular Contentনির্মিতি

রচনাঃ স্বাধীনতা দিবস

স্বাধীনতা দিবস

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “স্বাধীনতা দিবস বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

স্বাধীনতা দিবস

ভূমিকা

স্বাধীনতা দিবস যেকোনো জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এ দিবসটির অনেক তাৎপর্য রয়েছে। প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন থাকতে চায়। প্রত্যেকেই পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যুক্ত হতে চায় স্বাধীন পৃথিবীতে। স্বাধীনতা দিবস সমগ্র জাতির স্বাধীনতার প্রতীক। স্বাধীনতা দিবস হলো একটি জাতির কাছে সেই দিন, যেদিন তারা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে আরও গভীরভাবে স্বাধীনতার তাৎপর্য অনুভব করতে পারে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

পৃথিবীর অন্যান্য স্বাধীন দেশের মতো আমাদেরও স্বাধীনতা দিবস আছে। বাঙালি জাতির কাছে স্বাধীনতার প্রতীকস্বরূপ সে তাৎপর্যপূর্ণ দিনটি হলো ২৬-এ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমগ্র জাতি। ছিনিয়ে আনে রক্তভেজা বিজয়। আর এ কারণেই আমরা এখন স্বাধীন । সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে এ দিবসটির মর্যাদা তাই অনেক বেশি। দিনটি আমাদের কাছে একটি গৌরবের দিন। 

ঐতিহাসিক পটভূমি

 ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকে বাঙালির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রভুত্ব শুরু হয়। সর্বক্ষেত্রে অবহেলিত হয় বাঙালির অধিকার। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ জাতির মধ্যে নিজস্ব সত্তার প্রতিষ্ঠা লাভের চেতনা জাগ্রত হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দিয়ে বাঙালির মুক্তির দাবি করেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে পূরণ হয় না কোনো দাবিই। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এটি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালে অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলার মানুষ বিপুলভাবে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নানা টালবাহনা করতে শুরু করে ইয়াহিয়া খানের সরকার। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে এক যুগান্তকারী ভাষণে বলেন— 

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এ ভাষণের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি মুক্তির দিকনির্দেশনা পায়। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হঠাৎ এ দেশের মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করে। মেতে ওঠে এক ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞে। ২৫-এ মার্চ মধ্যরাত শেষে, অর্থাৎ ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তখন থেকেই শুরু হয় আমাদের বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীনতা । 

See also  অনুচ্ছেদঃ যৌতুক

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

স্বাধীনতা দিবস আমাদের অন্যতম জাতীয় দিবস। অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের এই স্বাধীনতা । তাই এ দিনটি জাতির ইতিহাসে একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কুচকাওয়াজ, আলোচনাসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। টেলিভিশন ও বেতারে পরিবেশন করা হয় স্বাধীনতা দিবসকে নিয়ে নানা অনুষ্ঠান। 

স্বাধীনতা দিবসের চেতনা: 

বাঙালির জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭১ সালের এদিন থেকেই স্বাধীনতা লাভের পথে আমাদের চূড়ান্ত যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা দিবস বাঙালির মনে এনে দিয়েছিল অপরিমেয় আত্মবিশ্বাস। কেননা এ দিবসের পটভূমি বাঙালিদের মনে স্বাধীনতার গান ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতেই লাখো শহিদ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। স্বাধীনতার সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের স্মৃতি। স্বাধীনতা দিবস আমাদের সে কথাকেই মনে করিয়ে দেয়। দেশের স্বাধীনতাকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই। এভাবে স্বাধীনতা দিবসের চেতনা আমাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ।

উপসংহার: 

প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনতা চায়, প্রত্যেক জাতি স্বাধীনতা চায়। স্বাধীনতা দিবস একটি জাতির স্বাধীন হওয়ার ইতিহাসকে তুলে ধরে। দিনটি তাই সবার কাছে গৌরবোজ্জ্বল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিনটির জন্যই একটি স্বাধীন জাতি তাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করতে পারে। আমাদের স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা রক্ষায় আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকব।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী

Swopnil

সারমর্মঃ সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা

Swopnil

রচনাঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Swopnil

Leave a Comment