নির্মিতিবাংলারচনা

রচনাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ভূমিকা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালিকে মুক্ত করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। পূর্ব বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, উপেক্ষিত জাতিকে তিনিই শোনালেন শোষণমুক্তি ও স্বাধীনতার অমর বাণী।

জন্ম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই, চার বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মা-বাবার তৃতীয় সন্তান। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর শৈশবের দিনগুলো কাটে।

শিক্ষা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ গ্রামে অবস্থিত গিমাডালা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন।

রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকেই তিনি সবসময় বড়ো করে দেখতেন। এজন্য তাঁকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু অন্যায়ের সাথে তিনি কখনো আপস করেননি। ছাত্র থাকা অবস্থাই শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদ যেসব ছাত্র ও তরুণের প্রচেষ্টায় গঠিত হয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। কারাগারে থেকেও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন। এই ছয় দফাকে বলা হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এতে তিনি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। কিন্তু এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার প্রধান আসামি করে বন্দি করা হয়। সে সময় পাকিস্তানি শাসকদের অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে সারাদেশে শুরু হয় গণ-অভ্যুত্থান। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বদা সামনে থেকে তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান

১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের কাছে নতিস্বীকার করে পাকিস্তান সরকার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি দেয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়াদী উদ্যান) ছাত্র-জনতার বিশাল এক সমাবেশে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু তাঁকে সরকার গঠন করতে না দেওয়ার জন্য পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই প্রতিবাদে ১৯৭১-এর ২ মার্চ থেকে ২৫-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা বাংলায় অসহযোগ আন্দোলন চলে। এর মধ্যে ৭ মার্চ বস্তাবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করে। তিনি বাংলার মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন— ‘প্রত্যেক গ্রামে প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো সময় শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকদের কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্ব এদেশবাসীর মনে শক্তি ও প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছিল। এই শক্তি ও প্রেরণার জোরেই বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়।

জীবনাবসান

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

উপসংহার

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃত। একজন আদর্শ নেতার সকল গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। যদিও বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে দৈহিকভাবে উপস্থিত নন, কিন্তু তিনি আমাদের চেতনার মণিকোঠায় ধ্রুবতারার মতো চিরস্থায়ী আসন দখল করে আছেন।

Related posts

আবেদন পত্রঃ পাঁচ দিনের ছুটি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদন পত্র লেখ

Swopnil

পত্রঃ  বিদ্যালয় জীবনের শেষ দিনের মানসিক অবস্থা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখ

Swopnil

রচনাঃ স্বাধীনতা দিবস

Swopnil