রচনানির্মিতিবাংলা

আমাদের গ্রাম বাংলা রচনা

আমাদের গ্রাম বাংলা রচনা

ভূমিকা: প্রতিটি মানুষের কাছে তার জন্মভূমি বা নিজের গ্রাম খুবই প্রিয়। আমার কাছেও আমার গ্রাম সবচেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। আমি এখানে জন্মেছি। তাই আমার গ্রামকে আমি মায়ের মতোই ভালোবাসি। এখানকার ছায়াঘেরা মায়াময় পরিবেশে আমার শৈশব কেটেছে। এর খেতের ফসল আমার ক্ষুধা দূর করেছে। এর পাখির গান আমায় মুগ্ধ করেছে। এ গ্রামের মানুষের কাছে পেয়েছি আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। তাই আমার গ্রামকে আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। যেখানেই থাকি না কেন, আমার গ্রামের মধুর স্মৃতি সবসময় মনে পড়ে।

অবস্থান: আমার গ্রামের নাম কালিয়া গ্রাম। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানায় এর অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে শ্যামলিমা ঘেরা এ গ্রাম। গ্রামের সামনে ছোটো একটা বিল রয়েছে। সকালে বিলের পাশে দাঁড়িয়ে সূর্য ওঠার দৃশ্য দেখতে মনোরম লাগে।

লোকসংখ্যা ও পেশা: আমাদের গ্রামে প্রায় দুই হাজার লোকের বাস। এখানে অধিকাংশ লোক মুসলমান। এছাড়া কয়েক ঘর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষও আছে। এখানে সকলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আবদ্ধ এবং সকলে মিলেমিশে বসবাস করে। গ্রামের বেশিরভাগ লোক কোনো না কোনোভাবে কৃষির সাথে যুক্ত হলেও অধিকাংশ লোকই শিক্ষিত। তবে বেশিরভাগই শহরে চাকরি করে। গ্রামে যারা বসবাস করে তারা ব্যবসা ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের গ্রামের বিভিন্ন পেশার লোকের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, উকিল, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সচিব, জেলে, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।

ঘরবাডি: আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর প্রধানত টিনের তৈরি। রাধায়া পাতা মাড়িত আছে বেশ কিছু। বর্তমানে কেউ কেউ দু-চার ঘর দোতলা বাড়িও নির্মাণ করেছে। গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িঘর ছন, খড় ও বাশের তৈরি।

পোশাক-পরিচ্ছেদ: আমাদের গ্রামের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ করা ক। পুরুষরা মুঙ্গি, পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি ও চাদর পরে। অনেকে আবার লিখের প্যান্টও পরে। মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পরে।

See also  আবেদন পত্রঃ গরমের কারণে প্রাতঃকালীন স্কুল শুরুর আবেদন জানিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট দরখাস্ত লেখ

উৎপণ্য দ্রব্য: আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান, পাট, গম, চাল, গরিমা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ও গ্রহে প্রচুর শাকসবজিও উৎপন্ন না। পুকুর, ডোবা ও বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। হাঁস-মুরগির ডিম ও গাঁতির সু পাওয়া যায়। এছাড়া নানারকম ফলফলাদির গাছও রয়েছে। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, বেল, নারিকেল, পেয়ারা প্রভৃতি প্রচুন উৎপন্ন হয়। গ্রামের অধিকাংশ প্রয়োজনীয় খাবার গ্রামেই উৎপন্ন হয়।

প্রতিষ্ঠান: আমাদের গ্রামে তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে অনতিদূরে পার্শ্ববর্তী গ্রামে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা কয়েছে। গ্রামের কাছেই রয়েছে ব্যাংক ও হাসপাতাল। গ্রামে একটি পোস্ট অফিসও রয়েছে।

হাট-বাজার: গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে হামিদপুর নামে একটি বাজার রয়েছে। গ্রামের লোকজন এ বাজারেই জিনিসপত্র কেনাবেচা করে। বাজারটি অনেক বড়ো। এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। এছাড়া প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে বাজার বসে। বাজারটিতে অস্থায়ী দোকানের পাশাপাশি অনেক স্থায়ী দোকান রয়েছে। বাজারে মোটামুটি সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়।

যোগাযোগব্যবস্থা: টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে যে পথটি গ্রামে পৌঁছেছে সেটি অনেক উঁচু ও পিচ ঢালাই। এই পথে দুটি ছোটো ব্রিজ রয়েছে। এই পথে রিকশা, ভ্যান, টেম্পোসহ হালকা যানবাহন চলাচল করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: আমাদের গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যো গ্রামটি যেন একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। গ্রামের সামনে দিগন্তবিস্তৃত দীর্ঘ সবুজ মাঠ। গ্রীষ্মের খরতাপে, বর্ষার মেঘমেদুর শ্যামল হারায়, শরতের শুভ্র আকাশে, হেমন্তের সোনালি ফসলে, শীতের কুয়াশায় এবং বসন্তের প্রাচুর্যে অভিনব ও গ্রাম। গ্রামের প্রতিটি ঘরকে মনে হয় ছায়া সুশীতল শান্তির নীড়।

গ্রামের সংস্কৃতি: সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের গ্রাম অত্যন্ত অগ্রগামী। বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে গ্রামের সব ধর্মের মানুষ একসাথে অংশ নেয়। পাশাপাশি এখানে নানা ধরনের মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এগুলোর ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো চৈত্রসংক্রান্তির মেলা, বৈশাখী মেলা, নবান্ন অনুষ্ঠান, পিঠাগুলির অনুষ্ঠান ইত্যাদি। গ্রামের মুসলিম ও হিন্দু বিয়েতে লোকজ গান, নাচ ও খাবারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

See also  রচনাঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

উপসংহার: এমন একটি গ্রামে জন্ম নিয়ে আমি ধন্য। তাই আমি সারা জীবন ধরে এ গ্রামের চন্নয়নে সবরকমের চেষ্টা করে যাব। যেখানেই থাকি না কেন আমি আমার গ্রামকে কোনো দিন ভুলব না। সত্যিকার অর্থেই আমাদের গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম ।

Related posts

রচনাঃ শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে

Swopnil

আবেদন পত্রঃ শিক্ষাসফরে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন পত্র লেখ

Swopnil

Leave a Comment