, ,

রচনাঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

Posted by

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ভূমিকা

মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এ সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। মানুষের পরিচয়ের প্রথম ও প্রধান ধাপ এই মাতৃভাষা । মা ও মাটির সাথে তার যেমন নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মাতৃভাষার সাথেও থাকে ঠিক তেমন সম্পর্ক। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের একুশে ফ্রেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে বাঙালি বিশ্ব-ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারই স্বীকৃতি পেয়েছি আমরা গত শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে। সমস্ত বিশ্ব এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ। পাকিস্তান আবার পূর্ব ও পশ্চিম নামক দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। উর্দু ছিল মাত্র ৭ শতাংশ লোকের মাতৃভাষা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঘোষণা করে বাংলা নয়, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাবে উর্দু। বাঙালি দাবি করেছিল, সকল মাতৃভাষাই সমান মর্যাদা লাভের অধিকারী । তাই উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকেও দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোভাবেই তা মেনে নেয়নি। ফলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। আন্দোলন আরও গতি পায়। গর্জে ওঠে সারা বাংলা, আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পর থেকে শহিদদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফ্রেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। মাতৃভাষার জন্য এ ধরনের আত্মত্যাগের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতির উদ্যোগ

১৯৯৮ সালে কানাডার প্রবাসীদের সংগঠন ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর মাধ্যমে প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সংগঠনটির দুজন বাঙালি সংগঠক আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকোর ৩০তম সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ শ্রদ্ধার সাথে নিজ নিজ মাতৃভাষার সম্মানে এই দিনটি পালন করছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য অনেক। প্রথমত, ছোটো-বড়ো সকল ভাষার প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। দ্বিতীয়ত, দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব আরোপ না করা। তৃতীয়ত, ভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। চতুর্থত, ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া। পঞ্চমত, সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। এর ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ নিজ নিজ ভাষাকে বুকে ধারণ করবে। সেইসাথে অন্য ভাষাকেও দেবে যথাযোগ্য মর্যাদা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের সকালে পথে পথে নামে প্রভাতফেরির মিছিল। হাতে ফুল নিয়ে খালি পায়ে সকল শ্রেণির মানুষ এগিয়ে যায় শহিদ মিনারের উদ্দেশে। সকলের কণ্ঠে বাজে সেই অমর সংগীত— 

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।” শহিদ মিনারে পৌঁছে ভাষাশহিদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিবসটি ঘিরে আয়োজিত হয় নানাধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া বিশ্বের সব দেশের মানুষ শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে।

উপসংহার

মহান ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন বিশেষ মহত্ত্ব পেয়েছে। মূলত এটি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের ত্যাগের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি। আর এই মূল্যায়ন যথার্থতা পাবে জ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে সাধ্যমতো মাতৃভাষা বাংলার প্রয়োগ ঘটালে । নিজ ভাষার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সব ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানোর মধ্যেই নিহিত আছে মহান মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতা ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *