আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা/ ছাত্রসমাজের প্রধান কর্তব্য বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা/ ছাত্রসমাজের প্রধান কর্তব্য
ভূমিকা
যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে নিরত তারাই ছাত্র। দেশের এক উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী হলো ছাত্রছাত্রী। তারা জাতির আশা-ভরসার প্রতীক। তাদের সুশিক্ষা ও সুষ্ঠু জীবনগঠনের ওপর নির্ভর করে জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ। জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার হিসেবে পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্রসমাজের জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। শিক্ষা পরবর্তী জীবনে যে দায়দায়িত্ব পালন করতে হবে তার অনুশীলন তথা প্রশিক্ষণটাও ছাত্র জীবনেই হওয়া প্রয়োজন। কবি তালিম হোসেন ছাত্রদের স্বরূপ বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন-
“আমরা জাতির শক্তি-সৈন্য, মুক্তবুদ্ধি বীর,
আমাদের তরে শূন্য আসন জাতির কাণ্ডারীর ।
ছাত্রসমাজের প্রধান কর্তব্য
ছাত্রজীবনে অধ্যয়নই তপস্যা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ নিয়মিত পড়ালেখা করা। শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয় জ্ঞানের বিস্তৃত জগতে তাদের বিচরণ করতে হবে। শিক্ষাকে ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নে তাদের সচেষ্ট হতে হবে। চরিত্রগঠনও ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য। অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তীতা, সত্যাশ্রয়, কর্তব্যপরায়ণতার মানবিক গুণগুলোর অর্জন ছাত্রকালেই করতে হয়। দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ববোধ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অর্জন করতে না পারলে ছাত্রজীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। এসব মহৎগুণ অর্জন ব্যতিরেকে শিক্ষাজীবন শেষে যেকোনো মানুষ স্বার্থান্ধ, সংকীর্ণমনা ও অন্তসারশূন্য জীবনচেতনার অধিকারী হয়ে থাকে ।
আরো পড়োঃ
দেশগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
দেশকে গড়ে তোলার জন্য ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। অতীতে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের দেশমাতৃকার জন্য সর্বস্ব ত্যাগের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য ছাত্রযুবা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তিকালে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে ছাত্র-সমাজের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। নব্বইয়ের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রসেনানী ছিল এদেশের ছাত্রসমাজ। দেশ ও জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকার স্বরূপ ও ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হলো :
ক. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা : ছাত্ররা তরুণপ্রাণ। আর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণদের প্রয়োজন সর্বাধিক। বাংলাদেশের তরুণসমাজ এক্ষেত্রে অতীতে অসামান্য অবদান রেখেছে, যা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। যখনই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে তখনই ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে । কোনো প্রকার দ্বিধা কিংবা গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতা তাদের প্রশ্রয় দিলে চলবে না ।
খ. ‘ শিক্ষা বিস্তার : ছাত্ররা শিক্ষাসারথি । শুধু নিজেরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়াতেই তাদের জীবন সার্থক হতে পারে না । দেশের যেসব হতভাগ্য মানুষ এখনো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে তাদের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে তাদের প্রত্যেককেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজ পরিবারের পরিমণ্ডলে, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে এবং পাড়া প্রতিবেশিদের মাঝে তারা শিক্ষা বিস্তারের কাজটি সহজেই করতে পারে। ছুটির অবকাশে প্রতিটি ছাত্র যদি একজন করে নিরক্ষরকেও সাক্ষর করে তোলে তাহলে দেশ থেকে অতি দ্রুত নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর হয়ে যাবে। ক্লাব-সমিতি প্রভৃতির সদস্যরূপে কিংবা সরকারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা বিস্তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে ।
গ. স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণ : রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি ও মেরামতে স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই প্রশংসনীয় অবদান রাখতে পারে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করার অনেক প্রমাণ আমাদের দেশে রয়েছে। গত শতাব্দীর আশির দশকে তৎকালীন সরকারের আহ্বানে খালখনন কর্মসূচিতে দেশের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে এদেশের ছাত্রসমাজ বরাবরই অংশগ্রহণ করে আসছে ।
ঘ. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভূমিকা : আমাদের দেশের মানুষ অনেক সময় অজ্ঞতার কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার শিকার হয়। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও অনেকের নেই স্বচ্ছ ধারণা। রোগে সুষ্ঠু সেবা ও চিকিৎসা গ্রহণ করে না অনেকে। এ ছাড়া নানা প্রকার ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান। জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ৷ পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, টিকা প্রদান, সুপেয় পানি সরবরাহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে।
ঙ. সুখী পরিবার গঠন : অপরিকল্পিতভাবে পরিবার বড় করার কারণে আমাদের দেশে জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ পরিবার পরিকল্পনা ও ছোটো পরিবার গঠন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে ভুল ধারণা। তা ছাড়া মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুর প্রযত্ন প্রভৃতি বিষয়েও আমাদের সাধারণ মানুষের রয়েছে অজ্ঞতা। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে দ্রুত উন্নতি অর্জন করা সম্ভব হবে।
চ. আর্তমানবতার সেবা ও পুনর্বাসন : ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার সময় আমাদের দেশের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। দুর্গত মানুষকে উদ্ধার ও তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌছে দেবার কাজে শিক্ষার্থীরা বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছে। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় শিক্ষার্থীরা নিজেদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে সরকারি ত্রাণ তহবিলে অর্থদান করে থাকে। তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা অনেক সময় পথে পথে, বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। বিধ্বস্ত জনপদ পুনর্গঠনে তাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে।
ছ. জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে : ছাত্ররা সমাজের সচেতন গণমানুষের উল্লেখযোগ্য অংশ। দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে তারা জনমতগঠনে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররা সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কোনো অন্যায়, অত্যাচার, অপশাসন দূর করার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজকে দেশবাসী আরো সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চায়।
জ. সন্ত্রাস, অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে : আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা সন্ত্রাস। সাম্প্রতিককালে অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। এতে আমাদের সমাজে নৈতিকতার অবসান ঘটেছে। ছাত্রসমাজ এসব ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখবে এবং প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
উপসংহার
ছাত্রসমাজের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং গোটা জাতি। তারা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হলে কেবল তাদের নিজেদেরই কল্যাণ হবে না, গোটা জাতিরই মঙ্গল হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে তাই দায়িত্বশীল ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করি । আমাদের হতাশ করা তাদের কোনোক্রমেই উচিত হবে না।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।