আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “১৬ই ডিসেম্বর / মহান বিজয় দিবস বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
১৬ই ডিসেম্বর / মহান বিজয় দিবস
ভূমিকা
প্রতিটি জাতির ইতিহাসে এমন কিছু দিনের অস্তিত্ব আছে যা একাধারে গৌরবময় এবং স্মরণযোগ্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমন একটি স্মরণীয় ও বরণীয় দিন ষোলোই ডিসেম্বর। এ দিনে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি শাসনের চব্বিশ বছরের পরাধীন-দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে অর্জন করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের চরম বিজয়। যে-কোনো সংগ্রামের বিজয় অর্জিত হয় নির্দিষ্ট একটি চরম চূড়ান্ত ক্ষণে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই অর্জিত ক্ষণ একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর— জাতির ইতিহাসে যা সুমহান বিজয় দিবস হিসেবে পরিচিত।
বিজয় দিবসের পটভূমি
বাংলাদেশ বহু পূর্বকাল থেকেই সম্পদরাজি ও সৌন্দর্যে অনন্য। এদেশের সৌন্দর্য ও সম্পদে মুগ্ধ হয়ে বহু বিদেশিই বঙ্গদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে বঙ্গদেশ আধিপত্যকামী শক্তির হাতে শোষিত, নির্যাতিত ও পরাধীন হয়েছে। কিন্তু এদেশের সরলপ্রাণ মানুষ কখনোই পরাধীনতাকে মেনে নেয় নি-বিলম্বে হলেও তারা তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সোচ্চার হয়েছে। প্রায় দু’শ বছরের শাসন শেষে ব্রিটিশ রাজশক্তি এদেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানে ভারতবর্ষ ভেঙ্গে ‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান’ নামক দুটো স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র। বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য হয়। জনগণ সুখ ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের লালিত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়। তারা বোঝতে পারে ঔপনিবেশিক ইংরেজ রাজত্বের অবসান হয়েছে বটে কিন্তু তার পরিবর্তে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে শোষণ করছে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। ‘৪৮ সালে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার চক্রান্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ । মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিতে ‘৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত ঢেলে দেয় এদেশের দামাল ছেলেরা। একুশের রক্তঝরা প্রচ্ছদে উদভাসিত হয় স্বাধীনতার প্রথম প্রভাত। পশ্চিমারা কৌশলে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে। কিন্তু নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এ দেশের মানুষ ক্রমশই প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ করা হয়। কিন্তু জনগণের তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ‘৬৯ এর গণ-আন্দোলনে পতন ঘটে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের। স্থলাভিষিক্ত হন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তিনি নির্বাচনে স্বীকৃতি দিলে ১৯৭০ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাঁয়তারা শুরু করেন। আলোচনা ব্যর্থ হলে ‘৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের স্মরণকালের এক বিশাল জনসমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বজ্রকণ্ঠে দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে প্রস্তুত হতে বলেন। ২৫ মার্চ কালোরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে। তারা নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। গ্রেফতার করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।
আরো পড়োঃ
যুদ্ধের বিবরণ
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার পর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি প্রস্তুত করেন পুলিশ, ইপিআর ও বাঙালি সৈনিকরা। পাকসেনার নির্মম অত্যাচারে এক কোটি বাঙালি আশ্রয় গ্রহণ করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে । বাংলা মায়ের দামাল সন্তানেরা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। বেগবান হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশের অভ্যন্তরে পাক সেনারা নির্বিচারে চালাতে থাকে গণহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিদাহ। সারা বাংলাদেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় এক বিভীষিকাময় নারকীয় পরিবেশ। লুণ্ঠিত হয় হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জত । বাংলা মায়ের লাঞ্ছিত দশায় প্রচণ্ড সাহসিকতার সাথে প্রশিক্ষিত পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে থাকে বাংলার মুক্তিসেনার দল। গেরিলা আক্রমণের মুখে ক্রমশই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কুখ্যাত হানাদার বাহিনী। ‘৭১-এর ডিসেম্বরে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ত্বরান্বিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে দ্রুত পরাজয় ঘটতে থাকে পাকসেনাদের। ধীরে ধীরে মুক্ত হতে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল। দিশেহারা পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রদান করে। অবশেষে ‘৭১-এর ষোলোই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানিরা মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় এক মহান বিজয়। বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। আনন্দে উদ্বেলিত হয় বাংলার আপামর জনসাধারণ।
বিজয় দিবসের গুরুত্ব
বাঙালি জাতির দীপ্ত গৌরবময় বিজয় দিবস জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুগভীর দেশপ্রেম এবং বীরত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি চির অম্লান হয়ে আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত সাফল্য একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর। এর রক্তাক্ত প্রেক্ষাপট অতিশয় বেদনাবহ ও সুমহান ত্যাগের। যে সকল দেশপ্রেমিক এ বিজয়ের সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছে তাঁদের ত্যাগ ও আদর্শের উজ্জীবনে সাফল্য মণ্ডিত করতে হবে স্বাধীনতার মহান অর্জনকে। প্রতি বছর বর্ষ পরিক্রমণে বাঙালির দ্বারে ঘুরে ঘুরে আসে এ ঐতিহাসিক বিজয়ের দিন। লাল সবুজের পতাকা উড্ডীন হয় আকাশে। আনন্দ উৎসব সভা সংগীতে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ । নতুন প্রজন্মের কাছে উদ্ভাসিত হয় বাঙালির বীরত্ব, সংগ্রাম ও আন্তত্যাগের ইতিহাস ।
উপসংহার
বিজয় গৌরবময় এক অর্জন। বিজয় মানে উল্লাস আনন্দ। এ বিজয় দিবসে আমাদের মন একদিকে যেমন আনন্দে ভরে ওঠে অন্য দিকে তেমনি স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্তস্রোতে আর সন্তানহারা মায়ের অশ্রুধারায় অর্জিত এ বিজয়কে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর এক স্বদেশগঠনে অর্থবহ করে তুলতে হবে। তবেই সার্থক হবে স্বাধীনতার বিজয়ের আনন্দ ।
আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।