Regular Content

রচনাঃ বিজয় দিবস

বিজয় দিবস

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “স্বাধীনতা দিবস” এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

বিজয় দিবস

সূচনা

বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি উজ্জ্বল দিন বিজয় দিবস। লাখো শহিদের আত্মত্যাগ, স্বজন হারানোর বেদনা ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বীর বাঙালির কাছে পরাজয় স্বীকার করে। তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের । তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদা।

বীরত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক তাৎপর্য:

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে অনেক বছর। কিন্তু বিজয় দিবসের গুরুত্ব কমেনি এতটুকু। এই দিনটির মাধ্যমেই আমরা নতুন প্রজন্মকে, এবং বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহিদদের কথা । মনে করিয়ে দিই বাংলাদেশ নামে একটি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা, যা প্রত্যেক বাঙালি তার হৃদয়ে ধারণ করে আছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি

বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে দুই দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। সে ইতিহাসের প্রথম মাইলফলক ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার। এই চেতনা ক্রমে বিকশিত হয়ে স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়। ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে স্বাধিকার আন্দোলন চরম শক্তি লাভ করে। বাঙালি জাতি স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ১৯৭১-এর ২৫এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫এ মার্চ মধ্যরাত শেষে, অর্থাৎ ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিরোধ সংগ্রামে। ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর বিজয় ছিনিয়ে আনে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। দিনটি পরবর্তীকালে জাতীয় ইতিহাসে বিজয় দিবস হিসেবে মর্যাদা পায় ।

বিজয় দিবস উদযাপন

স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের অসংখ্য বীর শহিদ। তাঁদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিবসে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে খুব ভোরে দিবসটির সূচনা ঘোষিত হয়। বিজয় দিবসের দিন সারাদেশে লাল- সবুজের সাজ দেখা যায়। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাড়ির সামনে, স্কুল-কলেজে, এমনকি রিকশার হ্যান্ডেলেও শোভা পায় আমাদের লাল-সবুজ পতাকা। দেশজুড়ে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আবেগে উদ্বেলিত নারী-পুরুষ উৎসবের সাজে সেজে সেখানে জড়ো হয়। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এদিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এ কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিবিদ, গণমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এ কুচকাওয়াজ উপভোগ করে। বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বিজয় মেলার। দেশের প্রতিটি জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে এ দিনটি পালিত হয়।

বিজয় দিবসের চেতনা

বাঙালির বিজয়ের পথ লাখো শহিদের রক্তে রাঙা। বিজয় দিবস তাই আমাদের মনে সঞ্চার করে গভীর দেশপ্রেম। পূর্বপুরুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস আমাদের গর্বিত করে। দৃপ্তপদে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায় । যেকোনো মূল্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই আমরা। 

উপসংহার

বিজয় দিবস শুধুই আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনা জাগরণেরও দিন। তাই এই দিনে প্রতিটি বাঙালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় দেশকে গড়তে। সবার প্রত্যাশা, বিশ্বসভায় আমরাও যেন সবার সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, যেন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারি, অশিক্ষা ও দারিদ্র্য থেকে দেশকে মুক্ত করে একুশ শতকের অগ্রযাত্রায় শামিল হতে পারি। তাহলেই আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতার বিজয় যথার্থ অর্থবহ হয়ে উঠবে ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

রচনাঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Swopnil

প্রতিবেদনঃ পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরোপণ’ -এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা কর

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

Swopnil