নির্মিতিরচনা

রচনাঃ কর্মমুখী শিক্ষা

কর্মমুখী শিক্ষা

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “কর্মমুখী শিক্ষা বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

কর্মমুখী শিক্ষা

ভূমিকা

‘শিক্ষা’ সুনিয়ন্ত্রিত এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে মানুষ তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলে ! শিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়— অর্জিত জ্ঞানকে জীবনের সার্বিক প্রয়োজনে কাজে লাগানোর মধ্যেই শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে জীবনধারণের একটি সর্বোত্তম যোগ্যতা। যে শিক্ষা জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নে ব্যর্থ, সে শিক্ষার সার্বিক অর্জন খণ্ডিত। তাই জীবন ও জীবিকার প্রকৃষ্ট উপায় হিসেবে শিক্ষা অবশ্যই বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী হওয়া আবশ্যক ।

বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা 

শিক্ষা কেবল পুঁথিগত হলেই চলবে না— শিক্ষার সঙ্গে যেন অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানের বিষয়টি সম্পর্কিত থাকে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। জীবিকার সুযোগবঞ্চিত শিক্ষা আধুনিক ধারণায় অচল। তাই শিক্ষা এমন হতে হবে যার সঙ্গে বৃত্তি বা কর্মসংস্থানের বিষয়টির নিবিড় সংযোগ থাকে। ‘বৃত্তি’ কথাটির অর্থ হচ্ছে জীবিকা বা জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্ম বা পেশা। বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে— কোনো কর্ম অর্থাৎ কোনো বৃত্তি বা ব্যবসায় যার লক্ষ্য। সুতরাং বৃত্তি বা কর্মকে কেন্দ্র করে যে শিক্ষা তা-ই বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা। এ শিক্ষা মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে ।

বাংলাদেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা 

শিক্ষার পুরাতন ধ্যান-ধারণায় শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তির সংযোগ ছিল না বললেই চলে । কিন্তু গতিশীল বিশ্বের পরিবর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষা এখন জীবিকার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম দরিদ্র দেশ। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দেশটিতে প্রায় অর্ধেক লোকই নিরক্ষর। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিই তার জীবনমানকে উন্নত করতে পারে না। বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা বৃত্তিমুখী বা কর্মমুখী নয় বলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি আবশ্যক। দরিদ্র এ দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে যাতে তারা মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনে দেশে আয়মুখী শিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি 

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করছে। পক্ষান্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি আমাদের অনীহা প্রবল। উন্নত দেশসমূহের অধিকাংশ জনগণই শিক্ষিত এবং কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং প্রভৃতি দেশসমূহে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রাচুর্য লক্ষণীয়। শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশেও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারতা লাভ করছে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি আমাদের অবহেলা নিজেদের জীবনমান ও দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নতিকে চরমভাবে বিঘ্নিত করছে। আমাদের দেশের প্রাচীন বৃত্তিনির্ভর জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে তাদের পুরানো পেশা পরিত্যাগ করে বেকারত্ব বরণ করছে। প্রাচীন বৃত্তিকে যুগোপযোগী করার কোনো প্রকার উদ্যোগ না থাকার কারণে এটি ঘটছে। তাই দেশের বেকারত্ব নিরসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষার সম্প্রসারণ ও সুযোগ সৃষ্টি প্রয়োজন ।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও সরকারি উদ্যোগ 

বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে তিন ধরনের বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষার আনুষ্ঠানিক সুযোগ রয়েছে। যেমন : ডিগ্রী পর্যায়, ডিপ্লোমা পর্যায় ও সার্টিফিকেট পর্যায়। এ তিন পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিগ্রী . পর্যায়ে তৈরি করা হয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। ডিপ্লোমা পর্যায়ে তৈরি করা হয় টেকনেশিয়ান এবং সার্টিফিকেট পর্যায়ে তৈরি করা হয় দক্ষ কারিগর ও কর্মী। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে আমাদের দেশে যে আনুষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অত্যন্ত সীমিত। তাই কর্মমুখী শিক্ষার আনুষ্ঠানিক আয়োজনকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। তবে এর প্রধান লক্ষ্য হবে ;

ক. পুরাতন প্রযুক্তিগুলোকে আয়ত্ত করে দেশের লোকের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।

খ. বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে উচ্চমানের প্রযুক্তির ব্যবস্থা করে রপ্তানিমুখী দ্রব্যাদি তৈরি করা।

সনাতন এবং আধুনিক প্রযুক্তি এ দুটি ধারাকে অবলম্বন করেই প্রথম দিকে পথ চলতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (বিআইটি), ‘পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে- ‘গ্লাস ও সিরামিক ইনস্টিটিউট’, ‘কলেজ অব টেক্সটাইলস্’, ‘ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি’, ‘ইনস্টিটিউট অব গ্রাফিক আর্টস’, ‘টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’, ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’, ‘টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ইনস্টিটিউট’, ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি’ প্রভৃতি।

বেসরকারি পর্যায়েও আনুষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে NGO-গুলো বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘UCEP’, ‘BRAC’, ‘GSS’, ‘PROSHIKA’, ‘ASA’ প্রভৃতি ।

বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারে সরকারি প্রয়াস

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তৃতির লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং মাধ্যমিক স্তরে কৃষি ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়কে বাধ্যতামূলক হিসেবে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডবল শিফট চালুকরণ এবং নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য বেসিক ট্রেড কোর্স চালুকরণ। অনেকাংশে এগুলো কার্যকর হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো দেশে উচ্চ শিক্ষার স্তরে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে। যার সুফল দেশ ও জনগণ ধীরে ধীরে ভোগ করবে।

উপসংহার 

আমাদের জাতীয় জীবনের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। জনসংখ্যা ভারাক্রান্ত দরিদ্র দেশ হিসেবে বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা ভিন্ন বেকারত্ব বিমোচন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব ।

আশা করি আজকের পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। তুমি যদি অন্য কোনো রচনা চাও তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। ধন্যবাদ।

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ কর্তব্যের কাছে ভাই-বন্ধু কেহই নাই

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ মুকুট পরা শক্ত, কিন্তু মুকুট ত্যাগ করা আরও কঠিন।

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ চক্‌চক্ করলেই সোনা হয় না

Swopnil