ভাবসম্প্রসারণনির্মিতিবাংলা

ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম ও পদ্ধতি

ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম ও পদ্ধতি

আজকের এই পোস্টে আমরা ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। অনেক সময় আমরা ভাবসম্প্রসারণ লিখি কিন্তু সম্পুর্ণ মার্কস পাই না। নিচে আমরা কিছু নিয়ম এবং পদ্ধতি আলোচনা করেছি যেগুলো ফলো করলে আশা করি আপনি পরীক্ষায় ভালো করতে পারবেন।

তাহলে চলুন, শুরু করা যাক।

ভাবসম্প্রসারণ লেখার পদ্ধতি [2023]

কোনো বাংকা কিংবা কবিতাংশে অনেক সময় বিপুল ও তাপপূর্ণ তা নিষিত থাকে। কবি-সাহিত্যিকের রচনার কোনো অংশ কিংবা লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচনে লুকিয়ে থাকে জীবন-সত্য। এ ধরনের ভাববস্তু বা জীবন-সত্যকে কিছুটা বিস্তৃত করে দেখার নাম ভাবসম্প্রসারণ। তার সংসারণের সময় যুক্তি, সুদী এ প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়ে অন্তর্নিহিত মূলভাবটুকু বিশদ করা হয়। ভাবসম্প্রসারণ করার সময় নিচের কয়েকটি দিক লক্ষ রাখা ভালো:

  • উদ্ধৃত অংশ বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে তার ভেতরের ভাবটি বুঝতে চেষ্টা করবে। মূলভাবের সংকেত উদ্ধৃতির কোন অংশে প্রাখ্যা রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে পারলে ভাববস্তু বোঝা সহজ হয়। উদ্ধৃত অংশে সাধারণত মূলভাব একটিই হয়ে থাকে। তাই সেই ভাইটি বুঝে নিয়ে সেটির সম্প্রসারণ করবে।
  • ভাবসম্প্রসারণ অনুশীলন করার সময় অভিমান দেখে অপরিচিত শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া উচিত।
  • ভাবসম্প্রসারণের দৈর্ঘ্য সম্বনে ধরাবাধা নিয়ম নেই। তবে তা প্রবন্ধের মতো বড়ো কিংবা সারমর্মের মতো ছোটো হয় না। ভাবসম্প্রসারণের বাক্য সংখ্যা ১০টির কম ও ১৫-১৬টির বেশি না হওয়াই ভালো।
  • মূলভাবটিই সা- সরল ভাষার সম্প্রসারিত বা বিশদ করবে। একই ধরনের কথা বার বার লিখবে না। অন্য কোনো নতুন ভাবার কথা যেন এসে না যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে।
  • উদ্ধৃত অংশে কোনো উপমা বা রূপক থাকলে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তোমার চেষ্টা করতে হবে।
  • ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় কোনোরকম শিরোনাম দেওয়ার দরকার পড়ে না। লেখকের বা কবির নামও উল্লেখ করতে হয় না। কিংবা ব্যাখ্যার মতো কবি বলেছেন ধরনের বাক্যাংশ ব্যবহার করতে হয় না।
See also  রচনাঃ সংবাদপত্র

ভাবসম্প্রসারণের জন্য দেওয়া কঘাটিতে সাধারণত প্রকাশ্য বক্তব্যের আড়ালে গভীর ভাবসভা লুকিয়ে থাকে। যেমন: ‘সবুরে মেওয়া ফলে‘ কথাটির আক্ষরিক অর্থ গাছের ফল পেতে হলে অপেক্ষা করাতে হয়। কিন্তু এর গভীর ভাবসত্য হলো জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে চাই দৈর্ঘ্য, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম। ভাবসম্প্রসারণ করার সময় প্রথমে প্রকাশ্য বা আক্ষরিক অর্থের দিকটি বলে পরে অন্তনিহিত ভাবটি বর্ণনা করতে হয়।

চলুন, এখন কিছু ভাবসম্প্রসারণের উদাহরণ দেখে নেয়া যাক। উদাহরণ দেখলে আপনার বুঝতে আরও সুবিধা হবে যে আমরা আসলে আপনাকে কিভাবে ভাবসম্প্রসারণ লিখতে বলেছি।

ভাবসম্প্রসারণঃ পিতামাতা গুরুজনে দেবতুল্য জানি, যতনে মানিয়া চল তাহাদের বাণী।

মূলভাবঃ পিতামাতা আমাদের জন্ম দিয়েছেন এবং তারা আমাদের স্নেহ-মমতায় বড়ো করে তোলেন। পিতামাতা, গুরুজনদের দেওয়া সবৃদ্ধি আমাদের জীবনকে মাপদর করে তোলে। তাই বাবা, মা ও অন্যান্য গুরুজনের আদেশ-উপদেশ আমাদের সবসময় মেনে চলা উচিত।

সম্প্রসারিত ভাবঃ পিতামাতার অবদানের কথা বলে শেষ করা যায় না। তাই তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই। পিতামাতার পাশাপাশি অন্য গুরুজনরাও আমাদের মঙ্গল কামনা করেন। আমাদের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের বিকাশে তাঁদের ভূমিকা অপরিসীম। জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায় তাঁরা অনেক বড়ো এবং আমাদের সম্মানীয়। তাঁরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে এমন অনেক কিছু জানেন, যা আমাদের অজানা। তাই আমরা ভুল করলে তারা আমাদের ভুলগুলো শুধরে দেন। তাদের আদেশ-উপদেশ থেকে আমরা জীবনে সঠিক পথে চলার প্রেরণা পাই। তাঁদের দেওয়া শিক্ষায় আমরা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারি। পৃথিবীর বরণীয় ব্যক্তিদের দিকে তাকালে দেখতে পান তাঁরা গুরুজনদের আদেশ প্রদার সঙ্গে মেনে চলেছেন। পিতামাতা ও গুরুজনরা আমাদের পূজনীয়। তাদের বাণী অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনকে গড়ে তুলব এবং দেশ ও মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করব।

মন্তব্যঃ পিতামাতাসহ সকল গুরুজনের উপদেশ মেনে চলার মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন সফল হয়ে উঠবে। 

Related posts

ভাবসম্প্রসারণঃ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

Swopnil

ভাবসম্প্রসারণঃ নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশীয় ভাষা, পুরে কি আশা?

Swopnil

রচনাঃ অধ্যবসায়

Swopnil

Leave a Comment