,

রচনাঃ শীতের সকাল / শীতকাল

Posted by

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “শীতের সকাল / শীতকাল বাংলা রচনা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

শীতের সকাল / শীতকাল

ভূমিকা 

ষড়ঋতুর পালাবদলে বাংলাদেশ চিরকালই সৌন্দর্যে বৈচিত্র্যময়। এদেশের প্রতিটি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন আমেজ, ঐশ্বর্য ও অনুভূতিতে স্বপ্নময়। শ্যামল প্রকৃতির সুবিশাল ক্যানভাসে প্রতিটি ঋতুই স্বাতন্ত্র্য ও সৌন্দর্যে অনন্য। আবার এ ঋতু-প্রবাহের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু সময় বা ক্ষণের রয়েছে ভিন্নমুখী আবেদন। বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্যে শীতের সকাল বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যে দৃশ্যমান। 

শীতের বৈশিষ্ট্য 

হেমন্তের ফসল কাটা রিক্ততার পরেই আসে হিমবাহ শীত। পৌষ-মাঘ দু’মাস শীতকাল। শীতের আগমনে প্রকৃতি হয়ে পড়ে বিবর্ণ-পাণ্ডুর। ঝরা পাতার মর্মরে জাগে করুণ সুর। কুয়াশার অবগুণ্ঠনে ঢাকা পড়ে যায় প্রকৃতি। শীতের উত্তুরে হাওয়া হাড়ে কাঁপন জাগায় । তাই শীতের প্রকৃতি-চিত্র চোখ মেলে না দেখেও উপলব্ধি করা যায় শীতের উপস্থিতি। শীত পাতাঝরা রিক্ত ঋতু হলেও সে বয়ে আনে নতুন পাতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত। হেমন্তের ফসল কাটা শূন্য মাঠ শীতকালে ধীরে ধীরে ভরে ওঠে রবি আবাদে । সরষে, মটর, তিসি, লাউ, সীম, কপি, গাজর, টমেটো প্রভৃতি শীতের উপাদেয় উপঢৌকন। নির্মল প্রকৃতি, উৎসব ও পিঠা-পায়েসের আয়োজনে নিরাভরণতার মধ্যেও শীতের সুখটুকু উপভোগ্য।

শীতের সকাল 

শীতের সকালে কুয়াশার অবগুণ্ঠনে আবৃত থাকে তেজস্বী সূর্য। উত্তুরে ঠাণ্ডা বাতাস শিস্ দিতে দিতে বয়ে যায়, বনের ফাঁক দিয়ে। টুপ্‌টাপ্‌ ঝরে পড়ে শিশিরবিন্দু। ঘাসের ডগায় তারা জমা হয় রুপালি সঞ্চয়ে। কেবল জ্বলে ওঠার অপেক্ষা- সূর্যের আলোকরশ্মির স্পর্শে। কুয়াশার অবগুণ্ঠন চিড়ে একসময় উন্মেষিত হয় আলোকচ্ছটা। শিশিরের রুপালি আঁধারে তখন জ্বলে ওঠে লক্ষ সূর্যের প্রতিভাস। ঝিমিয়ে পড়া জীবনপ্রবাহ জেগে ওঠে উত্তাপে। সূর্য প্রকাশিত হওয়ার আগে শীতের তীব্রতার কারণে লেপ-কাঁথার অন্তরাল থেকে বাইরে বের হতে চায় না কেউ।

শীতের সকাল ও কর্মময় জীবন 

শীত পাতাঝরা বিবর্ণ ঋতু বলে অভিহিত হলেও শীত আসলে একটি কর্মী-ঋতু। শীতের হাড় কাঁপানো অক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্যে কাজই হচ্ছে উত্তম পন্থা। শীতের সকালে ‘কুয়াশার ঘন আবরণে ঢাকা পড়ে বিলম্বিত হয় দিনের প্রকাশ। শীতের প্রচণ্ডতার কারণে শয্যার উষ্ণতা ছেড়ে বাইরে বেরুতে চায় না কেউ। তবুও কর্মজীবীদের জীবিকার অন্বেষণে শীতের সকালের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করে পথে পা বাড়াতে হয়। চাকরিজীবী, জেলে, তাঁতি,কামার-কুমোর, কৃষক, শ্রমিক সকলেই ছুটেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। শীতের সকালে কর্মমুখর জীবনের বৈচিত্র্যময় রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় ৷

শীতের সকাল ও পরিধেয় পোশাক 

শীতের কনকনে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্যে মানুষ পরিধান করে নানারকম শীতবস্ত্র। চাদর, আলোয়ান, সোয়েটার, শাল, মাফলার, কোট প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের পোশাক পরিধান করে মানুষ শীত নিবারণ করে। শীতকালে প্রত্যেককেই বহন করতে হয় বাড়তি পোশাকের বোঝা। পোশাকের রং এবং ডিজাইনের প্রাধান্যের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় শীত প্রতিরোধের বিষয়টি। তাই অনেককে দেখা যায় লম্বা ঢিলে-ঢালা কোটের সাথে মাথায় মাংকি ক্যাপ পরিধান করতে। কেউবা সাচ্ছন্দ্যে গায়ে জড়িয়ে নেয় কম্বল কিংবা বিছানার চাদর। শীতের সকাল সামর্থ্যবানদের জন্যে সুখকর হলেও গরিবদের জন্যে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। শীত নিবারণের উপযুক্ত গরম পোশাক না থাকার কারণে শীতের সকালে গরিব-নিঃস্বদের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয় ।

গ্রামবাংলা ও শীতের সকাল

শীতের সকালে গ্রাম-বাংলা এক রহস্যময় কুয়াশার আবরণে ঢাকা থাকে। ঘরদোর, গাছপালা, ঝোপ-ঝাড়, ক্ষেত-খামার, সবজি ক্ষেত, লাউ-সিমের জাংলা কিছুই দেখা যায় না। শিশিরে শিশিরে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে পথ-প্রান্তর ঘাসের ডগা। শীতের প্রকোপে কাঁপতে থাকে ছেলে-বুড়ো সকলে। কাঁথা-কম্বল-চাদরের আবরণে সকলেই সাধ্যমত চেষ্টা করে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে। অনেকেই খড়-কুটো ও লাড়ার কুণ্ডলী জ্বেলে শীত নিবারণের ব্যবস্থা করে। গ্রামীণ জীবনে এ পদ্ধতিটি বিশেষ প্রচলিত। যাদের শীতবস্ত্রের অভাব কিংবা একেবারেই নেই তাদের জন্যে এ পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী। খড়-কুটোর আগুন পোহাতে পোহাতে এ সময় জমে ওঠে নানা গল্পগুজব। কুয়াশার অবগুণ্ঠন উচিয়ে একসময় উঁকি দেয় শীতের সকালের বিনম্র সূর্য । শীতে কম্পিত জনজীবন তখন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে মিঠেল রোদের ছোঁয়ায়। শিশু-কিশোর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিষ্টি রোদের সান্নিধ্যের জন্যে। সকলেই তখন নিজেকে মেলে ধরে রোদের নিচে। জমাট ঠাণ্ডা দেহে রোদের উষ্ণতা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সকলে। অনেকেই শীতের মিষ্টি রোদে বসে খুব মজা করে খেতে থাকে মুড়ি-চিড়া-পাটালি গুড় অথবা লাডু- মোয়া-খই। গ্রামীণ জীবনে শীতের সকালের খাদ্যাভাসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আছে ঠাণ্ডা ভাত, বাসি তরকারি আর মরিচ-পিঁয়াজ মাখা। শীতের সকালে ঠাণ্ডা ভাতের সাথে মচমচে মুড়ির মিশ্রণ এক অসাধারণ মুখরোচক খাবার। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে পিঠ ঠেকিয়ে বাসি দুধের পিঠা কিংবা গরম গরম চিতৈ পিঠা খেতে বেশ লাগে। খেজুরের রস শীতের সকালের এক সুমিষ্ট পানীয়। মাটির কলসে সঞ্চিত কাঁচা খেজুরের রসে প্রতিটি চুমুকে পরম তৃপ্তিতে ভরে ওঠে মন। গ্রামবাংলার শীতের সকালের এ অকৃত্রিম আয়োজনটুকু অসাধারণ। শীতকালে খুব ভোরে শীত ও কুয়াশাকে উপেক্ষা করে গাঁয়ের চাষি দু’পায়ে শিশির মাড়িয়ে চলে যায় রবি ফসলের মাঠে। তার দু’চোখে দোলে সরষের হলুদ মাঠের স্বপ্ন আর তিসি ফুলের বেগুনি আনন্দ ৷

শহরে শীতের সকাল 

গ্রাম এবং শহরে শীতের সকাল ভিন্ন ভিন্ন আমেজে পরিদৃশ্যমান। শহরেও শীতের সকাল ঢাকা পড়ে কুয়াশার চাদরে। লেপ-কাঁথার উষ্ণতা থেকে ওঠতে ইচ্ছে না করলেও কর্মজীবীদের সকাল সকাল ছুটতে হয় অফিস গৃহে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা শীতের কাপড় পড়ে জড়সড় হয়ে থাকে গৃহকোণে। রিকশাচালক, বেবীচালক, বাস ড্রাইভার, ট্রাক ড্রাইভার সকলেই হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাড়ি চালনায়। শীতের সকালে সরগরম হয়ে ওঠে শহরের চায়ের দোকানগুলো। রাস্তায় রাস্তায় বসে পিঠা তৈরির দোকান । শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ শীতের সকালে গরম চিতৈ পিঠা উদরস্থ করে পরম তৃপ্তিতে। 

উপসংহার 

বাংলাদেশের জনজীবনে শীতের সকাল কষ্টকর হলেও তার মনোরম প্রভাবটুকু সকলের কাছেই উপভোগ্য। কুয়াশার ধূম্রজাল, ঘাসের নরম ডগায় শিশিরের সঞ্চয় অনুভূতিপ্রবণ প্রতিটি মানুষের জীবনেই বয়ে আনে প্রগাঢ় শাস্তি। রবি শস্যের প্রাচুর্য দধি-দুগ্ধ, পায়েস-পিঠার আয়োজনে শীত এক মধুময় ঋতু। শীতের সকাল দীর্ঘদিবসের পরিধির কাছে সংক্ষিপ্ত এক প্রস্থ কুয়াশা ঢাকা রহস্য রেখা। শীতের সকালে আছে ঠাণ্ডার যন্ত্রণা- তবুও শীতের সকাল লাড়ার আগুন, মিষ্টি রোদের উত্তাপ, খেজুরের রস আর মুড়ি- মুড়কির আয়োজনে অকৃত্রিম আনন্দ ও উপভোগের।

One response

  1. Fahim Raihan Avatar
    Fahim Raihan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *